সবুজ পাহাড় ও ফসলি জমি কেটে সাতকানিয়ায় ৬১ অবৈধ ইটভাটা!
চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় ফসলি জমি, বনাঞ্চল ও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঘেঁষে গড়ে উঠেছে ৬১টি অবৈধ ইটভাটা। এসব ইটভাটায় অবাধে পোড়া হচ্ছে কাঠ। ফলে হুমকির মুখে পড়েছে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র। দীর্ঘদিন ধরে এসব ইটভাটা কার্যক্রম চালিয়ে গেলেও নীরব উপজেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তর।
অভিযোগ রয়েছে, ইটভাটারগুলোর বেশিরভাগই মালিক প্রভাবশালী। তারা স্থানীয় প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরকে ম্যানেজ করে এসব ইটভাটার কার্যক্রম চালিয়ে নিচ্ছে। ফলে ইটভাটাগুলোর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারছে না এলাকাবাসী।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের সাতকানিয়া মৌলভীর দোকান থেকে শিশুতল পর্যন্ত (৫ কিলোমিটার) রয়েছে ৩৫টি ইটভাটা। এসব ইটভাটা আবাদযোগ্য কৃষিজমি ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গা ঘেঁষে গড়ে উঠেছে। সব ইটভাটার আশপাশের ফসলি জমিগুলোর মাটি কেটে নেওয়া হয়েছে ১০০ থেকে ১২০ ফুট গভীরে গিয়ে। এছাড়া অধিকাংশ ইটভাটায় স্তূপ করে রাখা হয়েছে মাটি ও জ্বালানি কাঠ। ইটভাটায় জ্বালানি কাঠ পোড়ানোর ফলে কালো ধোঁয়ায় বিষাক্ত হয়ে পড়েছে ওই এলাকার পরিবেশ। কালো ধোঁয়ায় বিবর্ণ হয়ে গেছে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে সামাজিক বনাঞ্চলের ১২৫টি গাছ। এছাড়া বিষাক্ত ধোঁয়ায় এলাকার বাতাসও দূষিত হয়ে পড়ছে। ফলে এলাকাবাসীরা আক্রান্ত হচ্ছেন চর্মরোগ, শ্বাসকষ্ট, হাঁপানিসহ নানা রোগে।
জানা গেছে, ইটভাটাগুলোর আশপাশে রয়েছে রসুলাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সৈয়দ মক্কি (রা.) কিন্ডারগার্টেন, আসমা মফজল বালিকা বিদ্যালয়, রসুলবাদ সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসা, উত্তর সাতকানিয়া জাফর আহমদ চৌধুরী কলেজ, উত্তর সাতকানিয়া আলী আহমদ প্রাণহরি উচ্চ বিদ্যালয়, সাতকানিয়া পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ওবায়দিয়া মাদ্রাসা, জনার কেওচিয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়, ছদাহা কে.কে. উচ্চ বিদ্যালয়সহ আরও কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
অপরদিকে সাতকানিয়া-বাঁশখালী সীমান্তের এওচিয়া ইউনিয়নে পাহাড় ও টিলা কেটে গড়ে উঠেছে ১৩টি ইটভাটা। এসব ইটভাটার চারিদিকে রয়েছে সবুজ পাহাড়। ইটভাটাগুলো রাতারাতি কেটে নিচ্ছে পাহাড়ের অসংখ্য গাছ। এসব গাছ নিধনের ফলে বন্যপ্রাণীরা বনাঞ্চল ছেড়ে লোকালয়ে হানা দিচ্ছে।
কেঁওচিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মনির আহমদ বলেন, ‘আমি চাই সাতকানিয়ার সমস্ত ইটভাটা বন্ধ হয়ে যাক। মাটি কাটতে কাটতে ইটভাটা মালিকেরা চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পাশ্ববর্তী জমিগুলোকে সাগর বানিয়ে ফেলেছে।’
সাতকানিয়া ব্রিকফিল্ড সমিতির সভাপতি নেজাম উদ্দিন বলেন, ‘অবৈধ কোনো ব্রিকফিল্ডকে সমিতিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। তাদের সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই।’
পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম জেলার পরিদর্শক হারুন অর রশিদ বলেন, ‘যেসব ইটভাটা পাহাড় কাটছে তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে পরিকল্পনা করছি।’ তবে সাতকানিয়া উপজেলার ইটভাটাগুলোর পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ও স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন।
এ ব্যাপারে পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম জেলার উপ-পরিচালক মো. ফেরদৌস আনোয়ারের সঙ্গে দুদিন ধরে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ মোবারক হোসেন বলেন, ‘আমরা অতীতেও এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। দু’এক দিনের মধ্যে অবৈধভাবে পাহাড় কাটা ও ফসলি জমির মাটি কাটা বন্ধে অভিযান চালানো হবে।’
এএইচ