সন্ধ্যা হলেই বায়েজিদের আকাশ ছেয়ে যায় এশিয়া পাইপের বিষাক্ত গ্যাসে (ভিডিও)

দিনে জমিয়ে রাখা গ্যাসের সঙ্গে বিষাক্ত কালো ধোঁয়া সন্ধ্যার অন্ধকারে আকাশে ছেড়ে দেয় চট্টগ্রামের শিল্পপ্রতিষ্ঠান এশিয়া জিআই পাইপ ইন্ডাস্ট্রি। এভাবে পরিবেশের চরম ক্ষতি করে যাচ্ছে এই শিল্পপ্রতিষ্ঠানটি। পরিবেশই শুধু নয়, কালো এই গ্যাস ছাড়ার পর বিভিন্ন আশপাশের এলাকায় সাধারণ মানুষও শ্বাসকষ্টে পড়ে যাচ্ছেন। বেশ কয়েকটি কারখানার কালো ধোঁয়ার কারণে এমনিতেই নগরীর বায়েজিদ এলাকার আকাশ ঢেকে থাকে। এখন নতুন করে বায়েজিদের ওই কারখানার বিষাক্ত কালো গ্যাসের কারণে আশপাশের অন্যান্য কারখানায়ও কাজ করতে পারছেন না শ্রমিকরা।

জানা গেছে, বায়েজিদ এলাকায় ছোট-বড় অন্তত ২০০ কারখানা রয়েছে। এর মধ্যে রড উৎপাদকারী প্রতিষ্ঠান ও গার্মেন্টসসহ ছোট বড় বিভিন্ন শ্রেণির কারখানায় প্রায় লক্ষাধিক শ্রমিক কাজ করেন। এমনিতেই প্রতিদিন রড উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান থেকে ছেড়ে দেওয়া কালো ধোঁয়ায় অন্ধকার থাকে বায়েজিদ এলাকা। পরিবেশ দূষণ রোধ করার কোনো ব্যবস্থা নেই এসব কারখানায়। নেই কোনো বর্জ্য শোধনাগার, ইফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট বা ইটিপি। পুরো বায়েজিদ এলাকা এইসব কারখানার কালো ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে থাকে সব সময়। পরিবেশ বিধ্বংসী এমন কর্মকাণ্ড দীর্ঘদিন ধরে চলে আসলেও এসব দেখার কেউ নেই।

জানা গেছে, বায়েজিদ এলাকার আকাশজুড়ে এখন নতুন করে ‘বিষফোঁড়া’ হিসেবে যুক্ত হয়েছে এশিয়া জিআই পাইপ ইন্ডাস্ট্রির বিষাক্ত কালো গ্যাস। সন্ধ্যার পর এই প্রতিষ্ঠানটির কারখানা থেকে আকাশে ছাড়া হয় বিষাক্ত গ্যাস। এই গ্যাস বাতাসের চেয়েও বেশি ভারী হওয়ায় পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদেরও নিশ্বাস নিতে রীতিমতো কষ্ট হয়। শ্রমিকরাই শুধু নয়, কালো এই গ্যাস ছাড়ার পর আশপাশের এলাকায় সাধারণ মানুষও শ্বাস কষ্টে পড়ে যাচ্ছেন।

বায়েজিদ এলাকার গার্মেন্টস শ্রমিক নাছির উদ্দিন বলেন, ‘এশিয়া জিআই পাইপ ইন্ডাস্ট্রি থেকে প্রতিদিন সন্ধ্যার পর এক ধরনের গ্যাস ছাড়ে, যা নাক দিয়ে ফুসফুসে গেলে শরীরে খুব দুর্বলতা অনুভব হয়।’

নুর আজম নামের এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, ‘এ গ্যাস নাকে লাগার পর হাঁচি আর কাশির সৃষ্টি হয়। তারা বড় কোম্পানি, তাই আমরা কোন কথা বলতে পারি না। প্রতিদিন সন্ধ্যার পর এ অত্যাচার সহ্য করে বসবাস করে যাচ্ছি। প্রতিবেশী কয়েকজনের শরীরে এলার্জির সৃষ্টি হতে দেখেছি। অন্য রোগব্যাধিও দেখা যাচ্ছে।’

বায়েজিদ এলাকার অপর গার্মেন্টস শ্রমিক রশিদা খাতুন বলেন, ‘গার্মেন্টসে কাজ করার সময় এ গ্যাস আমাদের কারখানাও পুরো অন্ধকার করে ফেলে। গ্যাসের গন্ধ নাকে এসে লাগামাত্র হাঁচি আসে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা বায়েজিদ এলাকায় সারাদিন ধোঁয়ার মধ্যেই কাজ করি। ধোঁয়াতেই আমরা এক ধরনের অভ্যস্থ হয়ে পড়েছি। কিন্তু প্রতিদিন সন্ধ্যায় নাকে লাগা গ্যাসটি একেবারেই অসহ্য। কিভাবে যে বেঁচে আছি, বোঝাতে পারবো না।’

পরিবেশ অধিদফতরের চট্টগ্রাম মহানগর কার্যালয়ের পরিচালক নুরুল্লাহ নুরী চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, এ ধরনের গ্যাস ছেড়ে কেউ পরিবেশের ক্ষতিসাধন করবে— এটা আমরা হতে দেবো না। এটি আইনের মারাত্মক লঙ্ঘন। এ ফ্যাক্টরির (এশিয়া জিআই পাইপ ইন্ডাস্ট্রি) পরিবেশের অনুমতি আছে কিনা সেটি খতিয়ে দেখে আমি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবো।’

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে এশিয়া জিআই পাইপ মাল্টি কী ইন্ডাস্ট্রিজের ম্যানেজার পরিচয় দিয়ে মোহাম্মদ ওসমান গণি চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমাদের কারখানায় দস্তা ও জিংক ব্যবহার হয়। ৪২০ ডিগ্রী তাপমাত্রায় কঠিন অবস্থায় রূপান্তর করা হয় জিংকে। আর কর্ণফুলী গ্যাসের লাইন থেকে জ্বালানো হয় গ্যাস।’

তিনি দাবি করেন, ‘আমরা পরিবেশের কোনো ক্ষতি করছি না। যদি কেউ বলে এখান থেকে গ্যাস বের হয়— তাহলে সেটা মিথ্যা অভিযোগ।’

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!