সন্দ্বীপ পৌর নির্বাচন নিয়ে হঠাৎ বৈঠকের ডাক, টিটুকে হটাতে সাংসদের ‘গোপন ছক’

চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ পৌরসভা নির্বাচনের তফসিল ঘোষিত হল বুধবার (২ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায়। ১৬ জানুয়ারি ভোটগ্রহণ হবে এই দ্বীপ উপজেলায়। এরই মধ্যে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের প্রাথমিক প্যানেল প্রস্তুত করতে বর্ধিত সভা ডেকেছে সন্দ্বীপ পৌরসভা আওয়ামী লীগ। এ নিয়ে আবার বিবাদমান দুই গ্রুপের নেতাকর্মীদের মধ্যে চরম উদ্বেগ বিরাজ করছে।

বৃহস্পতিবার (৩ ডিসেম্বর) সন্দ্বীপের আব্দুল হাকিম অডিটোরিয়ামে এই বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে দলীয় কোন্দলের কারণে সীতাকুণ্ড পৌরসভা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হলেও সন্দ্বীপ পৌরসভা আওয়ামী লীগের এই বর্ধিত সভায় জেলা ও উপজেলার কোনো নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থাকছেন না।

এদিকে স্থানীয় আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে দুই পক্ষের চরম গ্রুপিং থাকায় কালকের বর্ধিত সভাকে ঘিরে উভয় পক্ষের নেতাকর্মীদের মধ্যে চরম উদ্বেগ বিরাজ করছে। জানা গেছে, গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নকে কেন্দ্র করে সন্দ্বীপের সাংসদ মাহফুজুর রহমান মিতার সাথে পৌরসভার বর্তমান মেয়র জাফর উল্ল্যাহ টিটুর দ্বন্দ্ব প্রকাশ্য রূপ নেয়। উপজেলার ১১ জন চেয়ারম্যানসহ মোট ১৭ জন সিনিয়র নেতাকে নিয়ে জোট বেধে সাংসদ মিতার বিরুদ্ধে মাঠে নামেন মেয়র টিটু।

সন্দ্বীপ পৌর নির্বাচন ঘিরে বর্ধিত সভা উপলক্ষে হোন্ডা মহড়া শেষে সাংসদ মিতার অনুসারীরা।
সন্দ্বীপ পৌর নির্বাচন ঘিরে বর্ধিত সভা উপলক্ষে হোন্ডা মহড়া শেষে সাংসদ মিতার অনুসারীরা।

পরে মাহফুজুর রহমান মিতা দলীয় মনোনয়ন ঘরে তুলেই রাজনৈতিকভাবে একঘরে করে ফেলেন মেয়র টিটুসহ সেই বলয়ের সকল নেতাকর্মীদের। গত দুই বছর ধরে দলীয় কোন কর্মসূচিতেই দলীয় মনোনয়নের ক্ষেত্রে মিতার বিরোধিতা করা উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাকর্মীদের অংশ নিতে দেখা যায়নি। সাংসদের ইচ্ছাতেই পরিকল্পিতভাবে এসব নেতা-কর্মীকে দলীয় কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করা হয় না বলে অভিযোগ তাদের। এমনকি মেয়র টিটুর অনুসারীদের বাদ দিয়েই বছরখানেক আগে গঠন করা হয় সন্দ্বীপ পৌরসভা আওয়ামী লীগের কমিটি। সেই বিরোধের প্রভাব এবারের পৌরসভা নির্বাচনেও পড়তে পারে বলে আশঙ্কা এখানকার দলীয় নেতাকর্মীদের।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবারের (৩ ডিসেম্বর) বর্ধিত সভাকে কেন্দ্র করে সংঘাতের আশংকা রয়েছে বেশ। পর পর দুই বার আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে মেয়র নির্বাচিত টিটুকে বাদ দিয়ে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের তালিকা পাঠানোর পরিকল্পনা করছেন সাংসদ অনুসারীরা— এমনটাই অভিযোগ মেয়র টিটুর অনুসারীদের।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে মেয়র জাফর উল্ল্যাহ টিটু চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘অনেক ধরনের আলোচনাই শুনি। আমি একজন রাজনৈতিক কর্মী। গতবারও প্রধানমন্ত্রী আস্থা রেখে দায়িত্ব দিয়েছেন। দুই মেয়াদে আমি ব্যাপক উন্নয়ন করেছি। আমার বিরুদ্ধে কোনো অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগও নেই। এবারও মনোনয়ন চাইবো। কোন অন্যায় হলে সিনিয়র নেতৃবৃন্দরা বিষয়টা দেখবেন— এই বিশ্বাস আমার আছে।’

আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পাওয়ার লড়াইয়ে মেয়র টিটুর অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আলোচনায় আছেন পৌরসভা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোক্তাদের মাওলা সেলিম। চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে তিনি বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতি করছি। দলের উপজেলা কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলাম, উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলাম। বর্তমানে পৌরসভা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। অতীতে দলীয় গ্রুপিংয়ের কারণে আমি বঞ্চিত হয়েছি। এবার আশা করি দলীয় নেতাকর্মীরা আমার প্রতি সুবিচার করবেন।’

বর্ধিত সভাকে কেন্দ্র করে সংঘাতের আশংকাকে উড়িয়ে দিয়ে সেলিম বলেন, ‘আমরা কেন্দ্রের নির্দেশনা অনুযায়ী সভা ডেকেছি। মনোনয়ন প্রত্যাশী ও নেতা-কর্মীদের সাথে আলোচনা করে একটা তালিকা প্রস্তুত করে আমরা উপজেলা আওয়ামী লীগকে দিব। উনারা সেটা জেলায় পাঠাবেন। এখানে কোন সংঘাত হবেনা। সবাই একই দলের। কার সাথে কে মারামারি করবে?’

বর্ধিত সভার প্রস্তুতি সম্পর্কে জানিয়ে পৌরসভা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সফিকুল মাওলা বলেন, ‘আমরা পৌরসভার সকল ওয়ার্ড কমিটির সভাপতি সাধারণ সম্পাদক ও পৌর কমিটির সকল নেতাদের কল করেছি। বর্তমান মেয়রও আমাদের কমিটির সদস্য উনাকেও আমি ফোন করেছি। নিরাপত্তার বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে আমি সন্দ্বীপ থানার সহযোগিতাও চাইবো। আশা করছি কোন সমস্যা হবেনা।’

জোড় করে কাউকে বাদ দেয়ার সুযোগ নেই— এমন মন্তব্য করে সেরকম কিছু হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ আতাউর রহমান আতা চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বর্ধিত সভা হচ্ছে। উনারা মনোনয়নপ্রত্যাশীদের তালিকা করে উপজেলার মাধ্যমে সেই তালিকা জেলায় ফরোয়ার্ড করবেন। এখানে কাউকে চাইলেই বাদ দেওয়ার সুযোগ নেই। যদি তেমন কিছু করা হয় আর আমাদেরকে কেউ এই বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দেন তাহলে আমরা অবশ্যই এই বিষয়ে ব্যবস্থা নেবো।’

দলীয় মনোনয়নের লড়াইয়ে বর্তমান মেয়র জাফর উল্যা টিটু ও পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি সেলিম ছাড়াও আলোচনায় আছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম, পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সফিকুল মাওলা, সন্দ্বীপের উপজেলা চেয়ারম্যান মাস্টার শাহজাহান বিএর পুত্র নাদিম শাহ আলমগীর।

বুধবার (২ ডিসেম্বর) নির্বাচন কমিশনের (ইসি) জ্যেষ্ঠ সচিব মো. আলমগীর এই তফসিল ঘোষণা করে জানান, দ্বিতীয় ধাপে চট্টগ্রামের সন্দ্বীপসহ সারাদেশের ৬১টি পৌরসভার নির্বাচন ১৬ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে। এ ধাপে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ তারিখ ২০ ডিসেম্বর। মনোনয়নপত্র বাছাই ২২ ডিসেম্বর। আর প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ২৯ ডিসেম্বর।

তিনি বলেন, ইভিএমের মাধ্যমে ২৯টি পৌরসভায় এবং ব্যালটের মাধ্যমে ৩২টি পৌরসভায় ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ পৌরসভার ভোটগ্রহণ হবে ব্যালটে।

এআরটি/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!