সন্ত্রাসী টিনুর মামলার বাদিকে আসামি করেই পাল্টা মামলা নিল পুলিশ

চট্টগ্রাম কলেজে ছাত্রলীগের একাংশের নেতাকর্মীদের উপর বহিরাগতদের হামলার ঘটনা নিয়ে স্থানীয় থানা পুলিশের নাটকীয়তা যেন শেষই হচ্ছে না। টিনুকে আসামি করে এজহার জমা দেয়ার ঘটনায় এবার চকবাজার থানায় চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি মাহমুদুল করিমকে প্রধান আসামি করে আরও একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। আর সেই মামলার পিছনে ওই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আলমগীরের ইন্দন থাকার অভিযোগ তুলেছেন খোদ মাহমুদুল করিম। আগের দিনই ‘টিনুকে আসামি করে মামলা করলে মাহমুদুল করিমকেও মামলার আসামি হতে হবে বলে হুমকি দিয়েছিলেন ওসি আলামগীর’- এমনটাই অভিযোগ মাহমুদুল করিমের। যদিও এই অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছেন ওসি আলমগীর।

বৃহস্পতিবার (১৭ জুন) বিকেলে চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি মাহমুদুল করিম সহ ১২ জনকে আসামি করে মামলাটি দায়ের করেন মো. আনসারুল করিম। এর আগে চকবাজার থানায় টিনুকে প্রধান আসামি করে বুধবার (১৬ জুন) মধ্যরাতে একটি মামলা দায়ের করেন আবদুল্লা আল সাইমুন নামে একজন। যদিও সেই মামলা গ্রহণ করতে ৭ ঘন্টা সময় নিয়েছিল চকবাজার থানা পুলিশ।

বুধবার দুপুর ১২টায় চট্টগ্রাম কলেজে ঘটা সংঘর্ষের ঘটনায় মামলা করতে সেদিন বিকেল ৫টার দিকেই চকবাজার থানায় গিয়ে এজহার জমা দেন আবদুল্লা আল সাইমুন। সাইমুনের করা মামলায় প্রধান আসামি করা হয় চট্টগ্রামের আলোচিত কিশোর গ্যাং লিডার নুর মোস্তফা টিনুকে।

সাইমন জানান, সেসময় টিনুর নাম থাকায় মামলাটি নিতে অস্বীকৃতি জানায় ওসি আলমগীর।

তবে ছাত্রলীগের নেতাদের অনড় অবস্থানের এক পর্যায়ে ওসি আলমগীর টিনুকে আসামি করলে মাহমুদুল করিমকেও মামলার আসামি করার হুমকি দিয়েছিলেন জানিয়ে মাহমুদুল করিম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, গতকাল কলেজের ঘটনায় সাইমন মামলা করতে গেলে ওসি টিনুকে বাদ দিয়ে মামলা করতে বলেন। কিন্তু আমরা ওসির এই কথার প্রতিবাদ জানালে তিনি আমাকে পাল্টা মামলার আসামি করার হুমকি দিয়েছিলেন। আর আজকে তারই সত্যতা পেলাম। টিনুর মত একজন শীর্ষ সন্ত্রাসীকে কি কারণে পুলিশ শেল্টার দিচ্ছে সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে সাংবাদিকদের প্রতি অনুরোধ জানান।

মাহমুদুল করিমের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আলমগীর অভিযোগের সত্যতা নেই জানিয়ে বলেন, আমি কোন দরকারে সভাপতির বিরুদ্ধে মামলা করাতে ফোর্স করব? আমার কি স্বার্থ? এগুলো পলিটিক্যাল মামলা। পাল্টাপাল্টি মামলা হয়েছে। আমরা দুইটি মামলাই তদন্ত করে দেখে সত্যতা পেলে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিব। আর গতকাল আটক দুই আসামিকে আজ কারাগারে প্রেরন করা হয়েছে বলেও জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।

এদিকে, চট্টগ্রাম কলেজের সংঘাতের ঘটনায় চকবাজার থানা পুলিশের ভুমিকার সমালোচনা করে চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনি তার ফেসবুকে লিখেছেন- ‘সিএমপি-পুলিশ কমিশনারকে একজন সজ্জন ব্যক্তি হিসাবে চিনি। কিন্তু তার অধীনস্ত থানার পুলিশ বাহিনী যে- ছিঁচকে চোর, টোকাই, সন্ত্রাসীদের ভয় পান; এটা এতোদিন জানতাম না। অথবা তিনি নিজেও জানে না- অন্ধের দেশে চশমা বিক্রি করতে এসেছেন তিনি। চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের উপর হামলার পর খোদ কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতির বিরুদ্ধেই মামলা গ্রহণ করেছে পুলিশ। ধিক্কার!’

‘পুলিশের ইন্ধনে’ করা ওই পাল্টা মামলায় মাহমুদুল করিম ছাড়াও অন্য আসামিরা হলেন- আবদুল্লাহ আল সাইমুন (২৩), জাহিদ হাসান সাইমন (২৮), সাফায়েত হোসেন রাজু (২৩), মোস্তফা আমান (২৩), কায়েস মাহমুদ (২৪), শেফায়ুতুল করীম (১৯), কাইয়ুম (১৮), ওয়াহিদুর রহমান সুজন (২৫), মেহরাজ সিদ্দিকী পাভেল (২০), আবু তোরাফ (২২) ও তৌহিদুল করিম ইমন (২৩)।

প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের ২২ সেপ্টেম্বর মধ্যরাতে চকবাজারের কাপাসগোলা থেকে একটি পিস্তল ও পাঁচ রাউন্ড গুলিসহ নূর মোস্তফা টিনুকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব-৭। পরে টিনুর বাসায় অভিযান চালিয়ে একটি শর্টগান ও ৬৭ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়। র‌্যাবের করা মামলায় টিনুকে যেতে হয় কারাগারে। দীর্ঘ ১ বছর ৪ মাস কারাভোগের পর চলতি বছর ১৮ জানুয়ারি জামিনে মুক্ত হন টিনু। আর টিনুর পা পড়তেই রাবনের রাজ্যে পরিণত হয় চকবাজার ও এর আশেপাশের এলাকা। টিনু এতদিন জেলে থাকায় কলেজে কোন ঝামেলা হয়নি। কিন্তু অস্ত্র মামলায় জামিনে বের হয়েই আবার অশান্ত করে তুলেছে কলেজ। তাই তাকে দ্রুত গ্রেপ্তার করে কলেজের শান্ত পরিস্থিতি প্রতিষ্ঠার দাবি করে একাধিক জনকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোষ্ট করতে দেখা গেছে।

চট্টগ্রাম কলেজে বিবাদমান দুইটি গ্রুপের মধ্যে চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগ সভাপতি মাহমুদুল করিম ও তার অনুসারিরা নগর আওয়ামী লীগের প্রয়াত নেতা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত। এখন তারা শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের সঙ্গে আছেন।

কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সুভাষ মল্লিক সবুজ চকবাজারের যুবলীগ নেতা পরিচয় দেওয়া নূর মোস্তফা টিনুর অনুসারি হিসেবে পরিচিত। টিনু ছিলেন সাবেক প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী নূরুল ইসলাম বিএসসির অনুসারি।

বিএস/এসএ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!