রেড জোন ঘোষণা ও লকডাউনের পরও পর্যটন জেলা কক্সবাজারে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে করোনা রোগী। মহামারি করোনার প্রাদুর্ভাব এখন শহর ছাড়িয়ে ছড়িয়ে পড়েছে গ্রামেও। পাল্লা দিয়ে করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার পাশাপাশি বাড়ছে মৃতের সংখ্যাও। গত ২২ থেকে ২৪ জুন এই তিনদিনে ২৪০ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এ পর্যন্ত মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাড়িয়েছে ২ হাজার ২৮৭ জনে। মারা গেছেন ৩৫ জন।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, বুধবার (২৪ জুন) পর্যন্ত কক্সবাজার জেলায় করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৩৫ জন। আর কক্সবাজারের ৮ উপজেলায় শনাক্ত হয়েছে ২ হাজার ২৮৭ জন। এদের মধ্যে ৪৭ জন রোহিঙ্গা শরণার্থীও রয়েছে। এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ৭৯৩ জন।
আক্রান্ত ২ হাজার ২৮৭ জনের মধ্যে শুধু কক্সবাজার সদর উপজেলায় আক্রান্তের সংখ্যা ১ হাজার ৫৩ জন। জেলা ২৪ জুন পর্যন্ত মোট ১ হাজার ৪৫৯ জনকে আইসোলেশনের রাখা হয়েছে। পাশাপাশি ৬ হাজার ২৭৭ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে এবং ৮৩৭ জনকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনের আওতায় আনা হয়েছে। সেখান থেকে এ পর্যন্ত ছাড়পত্র পেয়েছেন ৪ হাজার ৮৫৭ জন।
এদিকে, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মাঝে করোনার হানা ভাবিয়ে তুলেছে স্থানীয়দের।
সর্বশেষ বুধবার (২৪ জুন) কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের তথ্যনুযায়ী আক্রান্তের মধ্যে বেশিরভাগ কক্সবাজার সদর উপজেলায়। এখানে আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ৫৩ জন। আর মৃত্যুবরণ করেছেন ১৭ জন।
এছাড়া চকরিয়া উপজেলায়ন আক্রান্ত হয়েছে ৩১১ জন, মৃত্যুবরণ করেছেন ৬ জন। উখিয়া উপজেলায় আক্রান্তের সংখ্যা ৩০৬ জন ও মৃত্যু ৬ জন। টেকনাফ উপজেলায় আক্রান্ত হয়েছেন ২০০ জন, মৃত্যুবরণ করেছেন ৩ জন, রামু উপজেলায় আক্রান্তের সংখ্যা ১৯০ জন ও মৃত্যুবরণ করেছেন ১ জন, পেকুয়া উপজেলায় ৯৫ জন আক্রান্ত হয়েছেন।
মহেশখালী উপজেলায় আক্রান্তের সংখা ৯০ জন, মৃত্যু হয়েছে ১ জনের এবং কুতুবদিয়া উপজেলা মোট আক্রান্ত হয়েছেন ৪২ জন, মৃত্যুবরণ করেছেন ১ জন।
জানা গেছে, কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের করোনা পরীক্ষার ল্যাবে জেলার আট উপজেলা ছাড়াও ৩৪টি রোহিঙ্গা ক্যাম্প, বান্দরবান জেলা ও এর কয়েকটি উপজেলা এবং চট্টগ্রামের লোহাগাড়া ও সাতকানিয়া থেকে সন্দেহভাজন রোগীর করোনা নমুনা সংগ্রহ এবং পরীক্ষা করা হয় প্রতিদিন। সরকারের পক্ষ থেকে সচেতনতা বাড়াতে নানা উদ্যোগ নেওয়ার পরও জনগণের উদাসীনতায় সারাদেশের মত কক্সবাজার জেলায়ও করোনা রোগির সংখ্যা বাড়ছে বলে মনে করছেন স্থানীয় সচেতনমহল।
কক্সবাজার চেম্বার ও সিভিল সোসাইটির সভাপতি আবু মোরশেদ চৌধুরী খোকা বলেন, করোনা যেহেতু একটি ছোঁয়াচে ভাইরাসজনিত রোগ তাই এ বিষয়ে সরকার ও প্রশাসন নানা সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালিয়েছে। পাশাপাশি সচেতনতা চালিয়েছে বিভিন্ন সংস্থা ও সামাজিক এবং রাজনৈতিক সংগঠনও। কিন্তু সবকিছুকেই উদাসীনভাবে নিয়েছে সাধারণ মানুষ। ফলে এখন এর কুফল দৃশ্যমান হচ্ছে।
কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. অনুপম বড়ুয়া বলেন, কমেক ল্যাবে দিন দিন সন্দেহভাজন করোনা রোগীর নমুনা সংগ্রহ বাড়ছে। প্রতিদিন গড়ে ৫০০ থেকে ৬০০ মত সন্দেহভাজন রোগীর নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের এই ল্যাবে। বিশেষ করে কক্সবাজার জেলা ছাড়াও বান্দরবান এবং চট্টগ্রামের সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে। তিনি সকলকে সামাজিক দূরত্ব বজায় ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার অনুরোধ জানান।
এ বিষয়ে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, কক্সবাজারেও এখন করোনা রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এরপরও যথাযথ চিকিৎসা প্রয়োগ হওয়ায় মৃত্যুর হার কমই রয়েছে। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৭৯৩ জন রোগী।
তিনি বলেন, সচেতনতা ছাড়া করোনার প্রাদুর্ভাব কমানো সম্ভব নয়। নিজ নিজ অবস্থান থেকে সকলে সচেতন হলে করোনার গতি ধরে রাখা সম্ভব হবে বলে মনে করেন জেলা প্রশাসক।
এসএ