শ্রমিকদের কর্মবিরতিতে বন্দর নতুন সংকটে

ব্যবসায়ী মহলে উদ্বেগ

নৌযান শ্রমিকদের কর্মবিরতিতে দুর্ভোগ ও উদ্বেগ বেড়েছে। মঙ্গলবার রাত ১২ থেকে ডাকা এ কর্মবিরতি যাত্রীবাহী নৌযান শ্রমিকরা প্রত্যাহার করলেও প্রত্যাহার করেনি লাইটার শ্রমিকরা।

বেতন বৃদ্ধি, নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ ও চাঁদাবাজি বন্ধ করাসহ ১৫ দফা দাবিতে নৌযান শ্রমিক স্বার্থ রক্ষা ঐক্য পরিষদ এ কর্মবিরতির ডাক দিলে ভোগান্তিতে পড়ে সাধারণ যাত্রী ও ব্যবসায়ীরা।

দুরদূরান্ত থেকে অসংখ্য যাত্রী ঘাটে গিয়ে জানতে পারেন লঞ্চ চলাচল বন্ধ। তবে বুধবার দুপুরে নৌযান শ্রমিক লীগের সভাপতি ওমর ফারুক ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়ে বলেন, শ্রম মন্ত্রণালয় তাদের দাবি মেনে নেয়ার আশ্বাস দেয়ায় কর্মবিরতি প্রত্যাহার করা হয়েছে।

এদিকে নৌ শ্রমিকরা কর্মবিরতি প্রত্যাহার করলেও লাইটার শ্রমিকরা তাদের কর্মবিরতি কর্মসূচি প্রত্যাহার করেনি বলে জানা গেছে।

বাংলাদেশ লাইটারেজ শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি হাজী শেখ মোহাম্মদ ইছা মিয়া জানান, তার সংগঠনসহ বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক লীগ, বাংলাদেশ কার্গো ট্রলার বাল্ক হেড শ্রমিক ইউনিয়ন এবং বাল্ক হেড শ্রমিক ইউনিয়ন যৌথভাবে এ কর্মসূচি পালন করছে।

চট্টগ্রাম বন্দর সূত্র জানায়, মঙ্গলবার চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙ্গরে পণ্য খালাস করছিল ৪৬ মাদার ভ্যাসেল। পণ্য খালাসের অপেক্ষায় আছে ২৯টি জাহাজ। কর্মসূচি প্রত্যাহার না হলে এসব জাহাজ থেকে পণ্য খালাস বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এ অবস্থায় উদ্বেগ বাড়ছে বন্দর ব্যবহারকারীদের।

দি চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রি’র সভাপতি মাহবুবুল আলম লাইটারেজ শ্রমিকদের কর্মবিরতি প্রত্যাহারে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এমপি’র প্রতি আহবান জানিয়েছেন। ২৭ নভেম্বর এক পত্রের মাধ্যমে আহবান জানিয়েছেন তিনি।

পত্রে তিনি বলেন, বাংলাদেশ লাইটারেজ শ্রমিক ইউনিয়ন ২৭ নভেম্বর, রাত ১২টা ১ মিনিট থেকে কর্মবিরতি পালন করছে। এই কর্মবিরতি চলাকালীনসময়ে লাইটারেজ জাহাজ শ্রমিকরা চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙ্গরে মাদার ভ্যাসেল থেকে পণ্য খালাস বন্ধ রাখার পাশাপাশি সারাদেশে নৌ-পথে লাইটারেজ জাহাজ, কার্গো ট্রলার, বাল্ক হেড ইত্যাদি চলাচল বন্ধ রেখেছে। ফলশ্রুতিতে মাদার ভ্যাসেল, লাইটারেজ জাহাজ ও বন্দরের ডেমারেজ চার্জসহ আমদানিকারকরা প্রচুর আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

পত্রে তিনি উল্লেখ করেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য ও ভোগ্যপণ্য এবং শিল্পের আমদানিকৃত কাঁচামাল খালাস বন্ধ থাকার কারণে একদিকে যেমন বাজার অস্থিতিশীল হবে, অন্যদিকে তেমনি শিল্প মালিকগণ যথাসময়ে পণ্য উৎপাদন ও রপ্তানি করতে ব্যর্থ হবেন। ব্যবসায়ী ও শিল্প মালিকদের কস্ট অব ডুয়িং বিজনেস অনেকাংশে বৃদ্ধি পাবে। ফলে সামগ্রিক অর্থনীতিতে অত্যন্ত নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের সাথে কোন ধরণের আলোচনা না করে শ্রমিকদের এ ধরণের কর্মবিরতি অনাকাঙ্খিত ও অর্থনীতির জন্য হুমকিস্বরূপ। এতে সরকারের ভাবমূর্তিও ক্ষুন্ন হতে পারে বলে মনে করেন চেম্বার সভাপতি।

দেশের অর্থনীতিকে অস্থিতিশীল হওয়া থেকে রক্ষা করতে লাইটারেজ শ্রমিকদের এ কর্মবিরতি প্রত্যাহারে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ব্যবসায়ী সমাজের পক্ষ থেকে নৌ প্রতিমন্ত্রীর প্রতি অনুরোধ জানান মাহবুবুল আলম।

এ ব্যাপারে মাহবুবুল আলম দৈনিক চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, শ্রমিক সংগঠনের মধ্যে লাইটার জাহাজের শ্রমিকরা কর্মবিরতি প্রত্যাহার করেন নি। ফলে যাত্রীবাহী লঞ্চ শ্রমিকরা কর্মবিরতি প্রত্যাহার হয়েছে। তাই আমি প্রতিমন্ত্রীকে আহবান জানিয়েছি কর্মবিরতি প্রত্যাহার করতে।

লাইটার জাহাজ শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা জানান, সারা দেশের বিভিন্ন নৌ রুটে ৩ হাজার লাইটারেজ জাহাজ চলাচল করে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরের বর্হিনোঙ্গর থেকে পণ্য খালাসের কাজে নিয়োজিত থাকে আড়াই হাজার জাহাজ।

চট্টগ্রাম বন্দর সূত্র জানায়, মঙ্গলবার চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙ্গরে পণ্য খালাস করছিলো ৪৬টি মাদার ভ্যাসেল। এর মধ্যে ১৪ টি জেনারেল কার্গো, ৮টি ফুড গ্রেন, ২১টি সিমেন্ট ক্লিংকার, ২টি চিনি এবং একটি অয়েল ট্যাংকার। পণ্য খালাসের অপেক্ষায় আছে ২৯ টি জাহাজ।

এএস/এসএ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!