শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় সিক্ত সৈয়দ শামসুল হক

সাহিত্য সংস্কৃতি রিপোর্ট :
সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকের মরদেহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে রাখা হয়েছে। সর্বস্তরের মানুষ তার প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানাচ্ছেন। ফুলে ফুলে ঢেকে গেছে কবির কফিন।
আজ বুধবার বেলা সোয়া ১১টার দিকে সৈয়দ হকের মরদেহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আনা হয়। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তার কফিনে শ্রদ্ধা জানান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
রাষ্ট্রপতির শ্রদ্ধা নিবেদনের পর সর্বস্তরের মানুষ কবির প্রতি তাদের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানাচ্ছেন। শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য সেখানে দুপুর পর্যন্ত তাকে রাখা হয়।
ha_35984
শ্রদ্ধা নিবেদনের পর সৈয়দ হককে নেয়া হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জামে মসজিদে। জানাজার পর তাকে হেলিকপ্টারে করে নিয়ে যাওয়া হবে জন্মস্থান কুড়িগ্রামে। সেখানে সরকারি কলেজ মাঠের পাশে কবির নির্ধারণ করে দেওয়া স্থানেই তাকে দাফন করা হবে।
সকাল সোয়া ১০টার দিকে তেজগাঁওয়ে চ্যানেল আই প্রাঙ্গণে সৈয়দ হকের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় চ্যানেল আই পরিবারের সদস্যসহ সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের অনেক মানুষ অংশ নেন।
চ্যানেল আই প্রাঙ্গণ থেকে সৈয়দ হকের মরদেহ নেয়া হয় বাংলা একাডেমিতে। সেখানে তার প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়।
গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন সৈয়দ শামসুল হক। তিনি ফুসফুসের ক্যান্সারে ভুগছিলেন।
১৯৩৫ সালের ২৭ ডিসেম্বর এই কুড়িগ্রাম শহরের থানা পাড়ায় তার জন্ম। শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ প্রাঙ্গণে তার কবর হবে।
সৈয়দ হকের বয়স হয়েছিল ৮১ বছর। তিনি স্ত্রী আনোয়ারা সৈয়দ হক এবং এক ছেলে ও এক মেয়ে রেখে গেছেন।
১৯৫৩ সালে ‘একদা এক রাজ্যে’ কাব্য দিয়ে তার যাত্রা শুরু হলেও ‘তাস’ নামক গ্রন্থ আগেই প্রকাশিত হয়েছিল। তারপর অবিরাম লিখেছেন সৈয়দ হক। সাহিত্েযর সব শাখায়। তবে সব ছাপিয়ে কবি পরিচয়টিই প্রধান মনে করতেন তার সাহিত্যাঙ্গনের বন্ধুরা।
বৈশাখে রচিত পংক্তিমালা, পরাণের গহীন ভেতর, নাভিমূলে ভস্মাধার, আমার শহর ঢাকা, বেজান শহরের জন্য কেরাম, বৃষ্টি ও জলের কবিতা- এসব কাব্যগ্রন্থের অজস্র কবিতায় তার নানা নীরিক্ষা জনপ্রিয়তাও এনে দেয় তাকে।
কাব্যনাট্য রচনায় ঈর্ষণীয় সফলতা পাওয়া সৈয়দ হক নূরলদীনের সারাজীবন, পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়, গণনায়ক, ঈর্ষা ইত্যাদি নাটকে রেখেছেন মুন্সীয়ানার স্বাক্ষর। ‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’ ও ‘নুরলদীনের সারাজীবন’ বাংলাদেশের মঞ্চনাটকের ইতিহাসে মাইলফলক হয়ে আছে।
সৈয়দ হক মহাকাব্যিক পটভূমিকায় বৃষ্টি ও বিদ্রোহীগণ নামে দীর্ঘ উপন্যাস যেমন লিখেছেন, তেমনি ছোট আকারের উপন্যাস লিখেছেন সমান তালে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধকে তাৎপর্যময় হয়ে উঠেছে তার ‘নিষিদ্ধ লোবান’সহ নানা উপন্যাসে।
‘খেলারাম খেলে যা’, ‘নীল দংশন’, ‘মৃগয়া’, ‘সীমানা ছাড়িয়ে’, ‘এক মহিলার ছবি’, ‘দেয়ালের দেশ’, ‘স্তব্দতার অনুবাদ’, ‘এক যুবকের ছায়াপথ’, ‘মহাশূন্যে পরানমাস্টার’, ‘তুমি সেই তরবারী’, ‘দ্বিতীয় দিনের কাহিনী’, ‘অন্তর্গত’, ‘এক মুঠো জন্মভূমি’, ‘শঙ্খলাগা যুবতী ও চাঁদ’, ‘বাস্তবতার দাঁত ও করাত’, ‘বৃষ্টি ও বিদ্রোহীগণ’
গত শতকের ষাট, সত্তর ও আশির দশকে অনেক চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্েযর সঙ্গে চলচ্চিত্রের জন্য গানও লিখেছেন সৈয়দ হক। তার লেখা গান ‘হায়রে মানুষ রঙিন ফানুস’, ‘তোরা দেখ দেখ দেখরে চাহিয়া’, ‘চাঁদের সাথে আমি দেব না তোমার তুলনা’র মতো বহু গান এখন মানুষের মুখে ফেরে।
তার নিষিদ্ধ লোবান উপন্যাস নিয়ে কয়েক বছর আগে গেরিলা নামে চলচ্চিত্রটি নির্মিত হয়। সৈয়দ হকের আত্মজীবনী ‘প্রণীত জীবন’ও প্রশংসিত হয়েছে সাহিত্যাঙ্গনের মানুষদের কাছে।
এ বি
এ এস / জি এম এম / আর এস পি :::

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!