শ্বশুরবাড়িতে অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূকে পিটিয়ে মারার অভিযোগ, পুলিশ বলছে আত্মহত্যা

চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় শ্বশুরবাড়ি থেকে পারভিন আক্তার (২৩) নামে এক অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। রোববার (১৮ জুলাই) রাতে উপজেলার বাজালিয়া ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ড গোয়ালউড়া এলাকার শয়ন কক্ষের খাট থেকে এ লাশ উদ্ধার করা হয়।

প্রাথমিকভাবে পুলিশের ধারণা, পারিবারিক কলহের জেরে গৃহবধূ আত্মহত্যা করে থাকতে পারেন। তবে, নিহতের পিতার দাবি তার মেয়েকে পিটিয়ে স্বামী ও শ্বশুর বাড়ির লোকজন হত্যা করেছে। থানায় অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। ঘটনার পর থেকে স্বামীসহ শ্বশুরবাড়ির লোকজন পলাতক রয়েছেন।

এ ব্যাপারে নিহত পারভীনের চাচা শ্বশুর সোলেমান বাঁশী বলেন, জামাইয়ের জ্বর হয়েছিল। বউকে বলেছে কাঁথা দিতে, কিন্তু দেয়নি। এরপর উভয়েই প্রথমে তর্কাতর্কি, পরে হাতাহাতিতে লিপ্ত হয়। অভিমান করে বউ ঘরের দরজা বন্ধ করে ছাদের বীমের সাথে গলায় উড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করে।

তিনি আরও বলেন, খবর পেয়ে আমিসহ এলাকার কয়েকজন গিয়ে দেখি দরজা বন্ধ। পরে তাদের ভাগিনা এসে দরজা ভেঙে প্রবেশ করে। পরে দেখি বউ বীমের সাথে ঝুলছে। বউয়ের পরিবারকে খবর দিলে তারা ঘটনাস্থলে আসে। পরে পুলিশ গিয়ে লাশ থানায় নিয়ে যায়।

জানা যায়, ২০১৭ সালে উপজেলার পুরানগড় ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ড স্কুল পাড়ার বাসিন্দা আমিন শরীফের বড় মেয়ে পারভিন আক্তারের সাথে বাজালিয়া ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ড গোয়ালউড়া এলাকার মৃত খায়ের আহমদের তৃতীয় ছেলে আহমদ হোসেনের সাথে বিয়ে হয়। বিয়ের পর কয়েক বছর সংসার ভালভাবে চলছিল। এর মধ্যে তাদের দুই বছর বয়সী এক কন্যা সন্তান রয়েছে।

নিহত গৃহবধূর পিতা আমিন শরীফ বলেন, মেয়ের চাচা শ্বশুর সোলেমান বাঁশীর মাধ্যমে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি, মেয়ের মৃত দেহ খাটের উপর শোয়ানো অবস্থায় পড়ে আছে। মেয়ের শ্বশুরবাড়ির লোকদের খোঁজ করে কাউকে পায়নি। আমার মেয়ে তিন মাসের অন্তঃসত্তা।

আমিন শরীফ বলেন, মেয়ের সাথে স্বামী ও শশুর বাড়ির লোকদের মধ্যে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রায় সময় ঝগড়া হতো। গত জুন মাসে আমার বাড়ি এসে মেয়ে শ্বশুর বাড়িতে ফিরে যেতে চাইনি। আমি জোর করে পাঠিয়েছিলাম। গত রমজান মাসেও পারিবারিক সমস্যা হয়েছিল। পরে বিষয়টি মীমাংসা হয়।

বিগত কয়েকমাস আগে মেয়ের ননদ মন্তু ও তার পরিবারের লোকজন আলোচনা করছিল মেয়েকে মেরে ফেলার। তারা বলেছে-আমি গরীব। মেয়েকে মেরে ফেললেও আমি কিছুই করতে পারবো না। এরই ধারাবাহিকতায় স্বামী ও শ্বশুর বাড়ির লোকজন পূর্বপরিকল্পিতভাবে মেয়েকে পিটিয়ে হত্যা করে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। আমি মেয়ে হত্যার বিচার চাই।

সাতকানিয়া থানার ওসি আনোয়ার হোসেন বলেন, ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের নিকট লাশ বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। লাশের গলায় দাগ ও বাম চোখের নিচে পুরনো একটি ছোট দাগ ছাড়া শরীরে অন্য কোন আঘাতের চিহ্ন দেখা যায়নি। ঘটনার দিনও স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া হয়েছিল। প্রাথমিক ধারণা, পারিবারিক কলহে গৃহবধূ আত্মহত্যা করেছে। এ ঘটনায় থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে।

কেএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!