এখনও শোকে পাথর পাথরঘাটার বড়ুয়া ভবন

দুইদিন আগেও যে ভবনটি আলোয় ভরা ছিল, ভিতরে ছিল প্রাণের সঞ্চার, বাচ্চাদের হইচই, মায়ের বকাবকি, সকালে কারো অফিস যাওয়ার তাড়া, কারো কারো বাজারে যাওয়ার তাড়া, আবার কারো স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের বা কোচিংয়ে যাওয়ার তাড়া ছিল। কিন্তু আজ সেই ভবনে এসব কিছুই নেই। জনশূন্য ভবনটি নিরব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। নেই কোনো কোলাহল।

বলছিলাম পাথরঘাটা ব্রিকফিল্ড রোডে গ্যাসলাইন বিস্ফোরিত সেই বড়ুয়া ভবনের কথা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পাঁচতলাবিশিষ্ট বড়ুয়া ভবনটি নিস্তব্ধ, নীরব হয়ে একটি বিস্ফোরণ ট্রাজেডির প্রমাণ হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে। পথচারীরা সেই ভবনের সামনে দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলেন। সবার চোখে শোকের ছায়া। কেউ কেউ ভিডিও কলের মাধ্যমে তাদের স্বজনদের ভবনটি দেখিয়ে দুর্ঘটনার বর্ণনা দেন। আবার অনেকে ভবনের একপাশে জট পাকিয়ে দুর্ঘটনা নিয়ে মন্তব্য, বিশ্লেষণ করায় ব্যস্ত। ভবনের সামনের রাস্তায় কয়েকজন পুলিশ হাঁটাহাঁটি করছে। ভবনের দেয়ালে সাঁটানো হয়েছে ‘ঝুঁকিপূর্ণ ভবন” লেখা ব্যানার।

ভবনের দিকে একপলকে তাকিয়ে কি হয়ে গেলো! বলে আফসোস করতে থাকে বৃদ্ধা গীতা চক্রবর্তী। বিড়বিড় করে বলতে থাকেন- মুহুর্তে সব শেষ। কারো স্ত্রী, সন্তান, স্বামী, কারো বাবাকে কেড়ে নিলো এই ভবনের দেয়াল।

স্থানীয় বাসিন্দা রাজেসের চোখে পানি টলমল করছে। তিনি বলেন, এতোগুলো নিরীহ মানুষ এই দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে ভাবতেই কেমন জানি গা শিহরিত হয়ে উঠে। এই পথ দিয়ে আমি প্রতিদিন ৫/৬ বার আসা যাওয়া করি। সেদিন যে সাতজন মারা গেছেন তাদের একজন হয়তো আমি হতে পারতাম। হয়তো আজ আমার পরিবারেও শোকের মাতম ওঠতো।

তিনি বলেন, ঘটনার পর থেকে নিজের মনকে কোনোভাবে মানাতে পারছিনা। যারা মারা গেছেন তাদের স্বজনরা এই মৃত্যু কিভাবে মেনে নিবে? সাত বছরের নিষ্পাপ ছেলেটিও মারা গেলো। সাথে তার মাও। হয়তো এই পরিবারের স্বপ্ন ছিল ছেলে বড় হয়ে ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার কিংবা বাবার মতো বড় কোনো আইনজীবী হবে। কিন্তু সব কিছুর সমাধি হলো দেয়াল চাপায়।

তিনি আরও বলেন, শিক্ষক অ্যানি বড়ুয়ার দুই সন্তান মা হারা হয়েছে। এই ছেলে দুটির ভবিষ্যৎ কি হবে?

তাছাড়া এলাকায় সকলের মুখে মুখে একটাই প্রশ্ন- বিষ্ফোরণটা আসলে কিভাবে হলো? একেক জনের মুখে একেক রকম মন্তব্য। কিন্তু আসল কারণ কি কেউ জানেন না।

স্থানীয়রা বলেন, বিস্ফোরণের আসল কারণ আমরা জানতে চাই। কেউ বলছেন গ্যাসলাইন বিস্ফোরণ, কেউ বলছেন দিয়াশলাই জ্বালানোর সাথে সাথেই আগুনের সূত্রপাত ঘটেছে, আবার শোনা যাচ্ছে সেপটিক ট্যাংকের গ্যাস থেকে হতে পারে এ দুর্ঘটনা। একেক সময় একেক কথা শুনে আসছি। কিন্তু আসল কারণটি আমরা কেউ জানি না।

উল্লেখ্য, রোববার সকালে ঘটে যাওয়া বিস্ফোরণের দুর্ঘটনায় চট্টগ্রাম জেলা প্রসাশন, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন, সিএমপি, কর্ণফুলী গ্যাস বিতরণ কোম্পানি লিমিটেডের (কেজিডিসিএল) এর পক্ষ থেকে মোট চারটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

এসএ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!