শেষ রাতে পুলিশের হানা, দরজা আটকে ফেসবুক লাইভে আইনজীবীর আকুতি (ভিডিও)

‘অজানা’ অভিযোগে শিক্ষানবিশ আইনজীবীর বাড়িতে শেষ রাতে হানা দিল পুলিশ। তা নিয়ে আরেক কাণ্ড। ভীত-সন্ত্রস্ত সেই আইনজীবী ফেসবুকে পরপর স্ট্যাটাস দেওয়ার একপর্যায়ে লাইভে এসে চাইলেন সহকর্মীদের সহায়তা। সোমবার (১৮ মে) ভোর রাত তিনটার দিকে এ ঘটনা ঘটে। কক্সবাজারের দ্বীপ উপজেলা কুতুবদিয়ায় ঘটা এই ঘটনার শিকার চট্টগ্রামে কর্মরত শিক্ষানবিশ আইনজীবী জাহেদুল ইসলাম। চট্টগ্রাম আদালতের আইনজীবীরা বলছেন, ওয়ারেন্ট ছাড়া রাতে পুলিশ কারও বাড়িতে এভাবে যেতে পারে না।

একাধিক সূত্রে জানা গেছে, কুতুবদিয়ায় নিজের এলাকায় করোনাভাইরাস নিয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করতে গিয়ে শিক্ষানবিশ আইনজীবী জাহেদুল ইসলাম এলাকায় কিছু লোকের রোষানলে পড়েন। তারই প্রেক্ষিতে তাকে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়াই রাতে তার বাড়িতে হানা দেয় পুলিশ।

সোমবার (১৮ মে) ভোর রাত তিনটার দিকে ফেসবুক লাইভে ওই আইনজীবীকে বলতে শোনা যায়, ‘আপনারা আমার ছাদের দরজা ভেঙ্গে ভেতরে ঢুকেছেন কেন? এত রাতে আমি আপনাদের সাথে যাব না। আমি শিক্ষানবিশ আইনজীবী। আমি সকালে থানায় যাব। আমি আদেশ অমান্য করলে তবেই আপনারা আমার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েন। এখন সেহেরির সময়। আপনারা চলে যান। এখন আপনাদের সঙ্গে গেলে আমি জীবন নিয়ে অনিশ্চয়তা বোধ করছি।’

ওই লাইভে পুলিশের সাথে তার বাকবিতণ্ডার শব্দ শোনা যায়। জাহিদুল ইসলাম বারবার অনুরোধ করছিলেন, ‘কাল সকালে গিয়ে আমি সারেন্ডার করব। এখন আমি জীবন আশংকা বোধ করছি।’ ওই সময় তাকে বারবার পুলিশ সদস্য ‘জয়নাল ভাই’ নাম উচ্চারণ করতে শোনা যায়।

এর আগে জাহিদুল ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন, ‘আমি করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে কুতুবদিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কর্তৃক স্বেচ্ছাসেবক। আমি সন্ত্রাসী না, ডাকাতও না, আমি একজন শিক্ষানবিশ আইনজীবী। আমার সিনিয়র চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির বর্তমান সভাপতি অ্যাডভোকেট সৈয়দ মুক্তার আহমদ স্যার আমার ইনটিমেশন সিনিয়র।’

এদিকে কুতুবদিয়া পুলিশ সূত্র বলছে, জাহিদুলের বিরুদ্ধে সাইবার ক্রাইমের অভিযোগ আছে।

জানতে চাইলে কুতুবদিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) দিদারুল ফেরদৌস চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘এখন রাত। এ বিষয়ে এ মুহূর্তে কথা বলতে চাই না। তবে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ থানার নয়, সাইবার ক্রাইমের। বিষয়টি আমি আইনজীবী সমিতির সেক্রেটারিকে জানিয়েছি। তার কাছ থেকে জেনে নিন।’

এদিকে এ ঘটনায় ক্ষোভ জানিয়েছেন চট্টগ্রাম আদালতের আইনজীবীরা। তারা বলছেন, ওয়ারেন্ট ছাড়া রাতে কারও বাড়িতে যাওয়া আইনসঙ্গত নয় পুলিশের।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম আদালতের আইনজীবী হোসাইন ইকবাল বলেন, ‘স্থানীয় ভূমিদস্যুদের বিরুদ্ধে কথা বলায় জাহিদ সবার শত্রু হয়ে যায়। এজন্য কিছুদিন আগে উপজেলা নির্বাহী অফিসার কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত করোনা বিষয়ে সচেতন কার্যক্রম পরিচালনার সময় তার ওপর হামলা চালায় এসব সন্ত্রাসী। এখন প্রশাসনকে ব্যবহার করে তার বাড়িতে হামলা চালানো হচ্ছে। তাকে শেষরাতে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাচ্ছে। অথচ তার বিরুদ্ধে কোন মামলা-অভিযোগ বা ওয়ারেন্টও নেই। জাহিদ বারবার আকুতি জানানো সত্ত্বেও শেষ পর্যন্ত কী হল জানা যায়নি। জাহিদের নিরাপত্তা নিয়ে আমরা শঙ্কিত।’

এ বিষয়ে আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এএইচএম জিয়া উদ্দিন বলেন, ‘কুতুবদিয়ার ওসির সাথে কথা বলেছি। তিনি জানিয়েছেন রাতে অ্যারেস্ট করা হবে না। এছাড়াও আমি জাহিদের নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে যথাসাধ্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’

এসএস/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!