শেষ ওভারে গিয়ে কুমিল্লাকে জয় ‘উপহার’ চট্টগ্রামের

কুমিল্লার হাতের মুঠোয় থাকা ম্যাচ দুই ওভারেই ঘুরিয়ে নাটাই চট্টগ্রামের হাতে নিয়ে আসেন বার্ল ও রুবেল। মনে হচ্ছিলো সহজ জয় পেতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম। তখনও বাকি ছিলো ম্যাচের নাটকীয়তা, নির্দিষ্ট করে বললে শেষ ওভারের নাটকীয়তা। বিশ্বকাপজয়ী পেসার লিয়াম প্লাংকেটের মতো অভিজ্ঞ পেসারের কাছে ১৬ রান তুলে নিয়ে চট্টগ্রামের বাড়া ভাতে ছাই ঢেলে দেয় কুমিল্লার লোয়ার অর্ডার ব্যাটসম্যানরা। অধুনা টি-টোয়েন্টিতে শেষ ওভারে ১৬ রান হয়তে কোন ব্যাপারই না, বিশেষ করে যখন শেষ ওভারটি মোকাবেলা করবেন ডেভিড মালানের মতো টি-টোয়েন্টিতে দক্ষ ব্যাটসম্যানরা। কিন্তু শেষ ওভারের মাত্র দুটি বল খেলেন দুই রান নিয়ে আউট হয়ে যান মালান। তারপরও কুমিল্লার কঠিন লক্ষ্যকে সহজ করে দেন ওই প্লাংকেট। আবু হায়দার রনি আর মুজিবুর-উর রহমান মিলে ছিনিয়ে নেন চট্টগ্রামের জয়। বলা ভালো কুমিল্লাকে ‘জয় উপহার’ দিয়েছে চট্টগ্রাম ও প্লাংকেট।

শেষ ওভারের শেষ বলে জয়ী এই ম্যাচে কিন্তু একসময় কুমিল্লা ওয়ারির্য়স বেশ ভাল অবস্থানে ছিল। শেষ ১৮ বলে জিততে তাদের প্রয়োজন দাড়ায় ২৫ রানের। কিন্তু ইনিংসের ১৮ নম্বর ওভারে রুবেল হোসেনের দুর্দান্ত বোলিংয়ে নাটকীয় ভঙ্গিতে ম্যাচে ফিরে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স। মাত্র ১ রান দিয়ে রুবেল সেই ওভারে ২ উইকেট তুলে নেন। মেহেদি হাসানের পরের ওভার থেকে খরচ হলো ৮ রান। শেষ ওভারে চাই ১৬ রান। ব্যাটিংয়ে দাউদ মালান ও আবু হায়দার রনি।

শেষ ওভারে জয়ের জন্য ১৬ রান করতে হতো কুমিল্লাকে। চট্টগ্রামের পক্ষে এ চ্যালেঞ্জ নিতে এগিয়ে আসেন বিশ্বকাপজয়ী পেসার প্লাংকেট। সামনে স্ট্রাইকে ছিলেন ৪৯ বলে ৭২ রান করা মালান। তবে প্রথম বলে ১ রানের বেশি নিতে পারেননি মালান। যার ফলে পরের ৫ বলের জন্য স্ট্রাইকে চলে আসেন আবু হায়দার রনি। যার ব্যাটিং সামর্থ্য সম্পর্কে খুব একটা ধারণা ছিলো না প্লাংকেটের। তাই টানা দুইটি ডেলিভারি শর্ট লেন্থে করেন ইংলিশ পেসার। দুই বলেই বাউন্ডারি হাঁকান রনি। ওভারের দ্বিতীয় বলে অবশ্য ভাগ্যের ছোঁয়াও ছিলো কুমিল্লার সঙ্গে। মিড উইকেটে নাসুম আহমেদ ও রায়ান বার্লের মধ্যে বোঝাপড়ার অভাবে নিশ্চিত ক্যাচ আউট থেকে বেঁচে গিয়ে সৌভাগ্যজনক ৪ রান পান রনি। পরের বলে অবশ্য সোজা ছক্কা হাঁকিয়ে বসেন তিনি।

সমীকরণ নেমে আসে ৩ বলে ৫ রানে। চতুর্থ বলে ১ রান নিয়ে অধিনায়ক মালানকে স্ট্রাইক ফেরত দেন রনি। ২ বলে ৪ রানের সমীকরণে দ্রুত ডাবল নিতে গিয়ে রানআউট হয়ে ফিরে যান ৫১ বলে ৭৪ রান করা মালান। উইকেটে আসেন মুজিব উর রহমান।জয়ের জন্য তখন ১ বলে প্রয়োজন ৩ রান। ভুল করে বসেন প্লাংকেট, দিয়ে বসেন লেগস্টাম্পে ফুলটস। সহজ সুযোগ পেয়ে স্কয়ার লেগ বাউন্ডারিতে পাঠিয়ে দলের জয় নিশ্চিত করেন আফগান স্পিনার মুজিব।

এর আগে লক্ষ্য পয়েন্ট টেবিলে খাদের কিনারায় দাড়িয়েছিল কুমিল্লা ওয়ারিয়র্স। সেই বিপদ থেকে দলকে উদ্ধার করলেন অধিনায়ক দাউদ মালান। ৫১ বলে ৪ ছক্কা ও ৫ বাউন্ডারিতে ৭১ রান করে মালান এই ম্যাচের সেরা খেলোয়াড়। চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সকে ৩ উইকেটে হারানোর এই ম্যাচে অবশ্য এখনো কুমিল্লার সঙ্কট কাটেনি। কিন্তু একটা দিক অন্তত তারা ফিরে পেয়েছে। এখনো শেষ চারে তাদের পৌছানোর পথ অনেক বাকি। কিন্তু টেবিলের শীর্ষে থাকা চট্টগ্রামকে হারিয়ে কুমিল্লা ওয়ারির্য়স অন্তত এক কদম তো সামনে বাড়তে পারল!

৩ উইকেটের জয়ে কুমিল্লা ওয়ারির্য়সের সেটাই সবচেয়ে বড় স্বস্তি। এই ম্যাচে চট্টগ্রামের তোলা ১৫৯ রানের পিছু তাড়া করতে নামা কুমিল্লা ওয়ারির্য়সের পথ চলা খুব একটা মসৃণ ছিল না। ১০ ওভারের মধ্যে ৭০ রানে তিন উইকেট হারায় কুমিল্লা। তবে দলকে জয়ের পথ দেখান অধিনায়কের দায়িত্ব পাওয়া দাউদ মালান। চট্টগ্রাম পর্বে ৫৪ বলে সেঞ্চুরি পাওয়া এই ইংলিশ ব্যাটসম্যানের ৭১ রানের ঝলমলে হাফসেঞ্চুরি কুমিল্লাকে টুর্নামেন্টের তৃতীয় জয় এনে দিল।

এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে চট্টগ্রামকে উড়ন্ত সূচনা এনে দেন দুই ওপেনার লেন্ডল সিমন্স আর জুনায়েদ সিদ্দিকী। ৬৯ বলের ঝড়ো উদ্বোধনী জুটিতে তারা তুলেন ১০৩ রান। থিতু হয়ে যাওয়া এই জুটি যখন চোখ রাঙাচ্ছিল, তখন কুমিল্লার মুখে হাসি ফোটান বোলার সৌম্য সরকার। হাফসেঞ্চুরিয়ান সিমন্সকে সানজামুলের ক্যাচ বানিয়ে বড় ওপেনিং জুটিটা ভাঙেন ডানহাতি এই পেসার। ৩৪ বলে ৫ বাউন্ডারি আর ২ ছক্কায় সিমন্স করেন ৫৪ রান।

সেই শুরু! তিন বল ব্যবধানে পরের ওভারেই রানআউট হয়ে যান আরেক সেট ব্যাটসম্যান জুনায়েদ। ৩৭ বলে ৬ চারে তিনি তখন হাফসেঞ্চুরির দোরগোড়ায় (৪৫)। তার পরের ওভারে ফের আঘাত সৌম্যর। এবার তার শিকার রায়ান বার্ল (২)।

ওভারে-ওভারে উইকেট হারানোর সেই গতিটা থামেনি তাতেও। ১৫তম ওভারে ৯ রান করে সানজামুলের কাছে উইকেট দেন চ্যাডউইক ওয়ালটন। এরপর প্রায় একাই দলকে টেনে নেয়ার চেষ্টা করেছেন জিয়াউর রহমান। মাঝে নুরুল হাসান সোহান (৪), লিয়াম প্লাংকেটরা (৪) সেভাবে সঙ্গ দিতে না পারলেও শেষ পর্যন্ত খেলে গেছেন জিয়া। ২১ বলে ৪ ছক্কায় তিনি অপরাজিত থাকেন ৩৪ রানে। কুমিল্লার পক্ষে বল হাতে সবচেয়ে সফল সৌম্য সরকার। ৪ ওভারে মাত্র ২০ রান খরচায় তিনি নেন ২টি উইকেট।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:
চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স: ১৫৯/৬ (২০ ওভারে, সিমন্স ৫৪, জুনায়েদ ৪৫, জিয়াউর ৩৪, সৌম্য ২/২০, সানজামুল ১/৩৩, ভিসা ১/২৬)।
কুমিল্লা ওয়ারিয়র্স: ১৬১/৭ (২০ ওভারে, মালান ৭১, আবু হায়দার ১২, মেহেদি হাসান ১/৩১, বার্ল ১/৯)।
ফল: কুমিল্লা ওয়ারিয়র্স ৩ উইকেটে জয়ী।
ম্যাচসেরা: মালান।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!