শেষমেশ প্রধানমন্ত্রীর পথ চেয়ে চট্টগ্রাম যুবলীগের অনিশ্চয়তার কমিটি

আহ্বায়ক কমিটির বৃত্ত থেকে বেরিয়ে দীর্ঘ ১৬ বছর পর চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের কমিটি গঠনে তোড়জোড় শুরু হলেও থমকে থাকা সেই প্রক্রিয়া আরও দীর্ঘতর হচ্ছে। চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের কমিটি গঠনে ওয়ার্ড পর্যায়ে সম্মেলন হবে কিনা— তা নিয়ে নেতাকর্মীদের মাঝে দেখা দিয়েছে সংশয়।

সংকট নিরসনে শুক্রবার দুপুরে (১১ অক্টোবর) ঢাকার দলীয় কার্যালয়ে যুবলীগের প্রেসিডিয়াম বৈঠকেও কোনও সিদ্ধান্ত আসেনি। সেটির সমাধান আসবে একমাত্র আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকেই। যু্বলীগের নেতৃবৃন্দ প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাত চেয়ে আবেদনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

এর আগে গত আগস্ট মাসে কেন্দ্র থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ওয়ার্ড পর্যায়ের সম্মেলন ও কাউন্সিলর তালিকা তৈরি করতে ডেডলাইন বেঁধে দিলেও সেভাবে এগুতে পারছেন না কমিটি গঠনের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। কেন্দ্রের সিদ্ধান্তে স্থানীয় সংসদ সদস্যদের সরাসরি হস্তক্ষেপে বেজায় নাখোশ ছিলেন যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির নেতারা। কমিটি গঠনে সম্পৃক্ত না রাখায় নাখোশ ছিলেন অভিভাবক সংগঠন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারাও। এরই মধ্যে ঢাকায় চলমান শুদ্ধি অভিযানে যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুকসহ অনেক সিনিয়র নেতার ব্যাংক হিসাব জব্দ করার ঘটনায় দেখা দিয়েছে স্থবিরতা।

নগর যুবলীগের গঠন প্রক্রিয়ার সমন্বয় ও কেন্দ্রীয় যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আলতাফ হোসেন বাচ্চু বলেন, ‘প্রেসিডিয়ামের বৈঠকে কোনও সিদ্ধান্তে আসতে পারিনি নগর যুবলীগ নিয়ে। এছাড়া কেন্দ্রীয় সম্মেলনসহ সার্বিক বিষয় নিয়ে আমরা নেত্রীর সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করছি। উনিই চূড়ান্ত গাইডলাইনসহ যেভাবে নির্দেশ দেবেন সেভাবেই হবে।’

দলীয় সূত্রে জানা যায়, চলতি মাসের (অক্টোবর) মধ্যেই ৪৩ সাংগঠনিক ওয়ার্ডের মধ্যে ৩৮ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তালিকা তৈরি করে কেন্দ্রে পাঠাতে সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। তবে সেই তালিকা তৈরির গঠন প্রক্রিয়ায় অনেকটাই কোণঠাসা ও ক্ষমতাহীন হয়ে পড়েছেন নগর যুবলীগের শীর্ষ নেতারা। যুবলীগের এ কমিটি গঠন ও কাউন্সিলর তালিকা তৈরিতে একচ্ছত্র ক্ষমতা পেয়েছেন স্থানীয় সংসদ সদস্যরা। এখন নগর যুবলীগের শীর্ষ নেতাদের মতামত ছাড়াই সব কমিটি ও কাউন্সিলর তালিকা তৈরি করছেন নগরীর সরকারদলীয় সাংসদরা। আর এ প্রক্রিয়া মানতে নারাজ যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির শীর্ষ নেতৃত্ব। তাদের সঙ্গে নাখোশ নগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্বও। ফলে সীতাকুণ্ড আসনের এমপি দিদারুল আলম নগর অংশে তার দুটি ওয়ার্ডের কউন্সিলরদের নাম জমা দিলেও নগরীর অন্য এমপিরা বিরোধ থেকে বাঁচতে যুবলীগের কাউন্সিলরদের নাম জমা দেননি।

দলীয় সূত্রে আরও জানা যায়, গত মাসে চট্টগ্রাম মহানগরসহ সারা দেশ থেকে যুবলীগের ১০টি ইউনিটকে ঢাকায় ঢেকে পাঠিয়েছিল কেন্দ্রীয় কমিটি। পরে যুবলীগের চেয়ারম্যান চলতি মাসে (সেপ্টেম্বর) কাউন্সিলরদের তালিকা কেন্দ্রে জমা দিয়ে আগামী অক্টোবরেই সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠন করার নির্দেশ দেন। এসব কমিটি গঠন ও কাউন্সিলরের তালিকা তৈরির সময় স্থানীয় সংসদ সদ্স্যদের দায়িত্ব দেওয়া হয়। আর এ প্রক্রিয়ায় সমন্বয় করার দায়িত্ব দেওয়া হয় যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আলতাফ হোসেন বাচ্চুকে।

আলতাফ হোসেন বাচ্চু বলেছেন, ‘যুবলীগ চেয়ারম্যানের নির্দেশনা অনুযায়ী আমি নগর যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির শীর্ষ পাঁচ নেতার সঙ্গে বসেছি। তাদের বিস্তারিত কেন্দ্রীয় নির্দেশনা জানিয়েছি। এরপর নগরীর আওয়ামী লীগের সব সংসদ সদস্যকেও বিষয়টি জানিয়ে কাউন্সিলরদের তালিকা চলতি মাসের মধ্যেই জমা দেওয়ার অনুরোধ করেছি। কিন্তু সীতাকুণ্ডের এমপি দিদারুল আলম ছাড়া কোনও এমপিই আমাকে এ সময় পর্যন্ত তালিকা জমা দেননি।’

তবে কি নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই কমিটি গঠন প্রক্রিয়া শেষ হচ্ছে না— এমন প্রশ্নের উত্তরে আলতাফ হোসেন বাচ্চু বলেন, ‘অনেক সময় পর এসে যেভাবে এগিয়ে যাওয়ার কথা সেভাবে আমরা এগোতে পারিনি। এরই মধ্যে নভেম্বরে আমাদের কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের সময় নির্ধারণ করা হয়েছে।’

অপর এক প্রশ্নের জবাবে বাচ্চু বলেন, ‘যেসব ওয়ার্ডের এমপি আওয়ামী লীগের না, সেখানে আমিসহ নগর যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে সমন্বয় করেই কমিটি গঠন করা হবে। প্রত্যেক ওয়ার্ডে মোট ২৫ সদস্যদের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হবে। তারাই কাউন্সিলর হিসেবে নগর যুবলীগের নেতৃত্ব নির্বাচন করবেন।’

এর আগে যুবলীগের চেয়ারম্যান বলেছিলেন, গত সেপ্টেম্বরের মধ্যেই যদি ৪৩টি সাংগঠনিক ওয়ার্ডের সম্মেলন করে কাউন্সিলর তালিকা কেন্দ্রে জমা দিতে না পারে তাহলে অক্টোবরেই ভেঙে দেওয়া হবে নগর যুবলীগের বর্তমান আহ্বায়ক কমিটি। নতুন আহ্বায়ক কমিটির মাধ্যমে দ্রুত সময়ের মধ্যে ওয়ার্ড সম্মেলন করে কাউন্সিলরের মাধ্যমে সম্মেলন করে নগর কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। তবে প্রেসিডিয়ামের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন না।

উল্লেখ্য, ২০১৩ সালকে কেন্দ্র থেকে নগর যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছিল। সেই কমিটিতে মহিউদ্দিন বাচ্চুকে আহ্বায়ক করে তিন মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার নির্দেশনা ছিল। তবে ৬ বছর পার হলেও কমিটি করতে পারেনি আহ্বায়ক কমিটি। ১০১ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটির অনেক নেতা আওয়ামী লীগ ও এর বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হয়ে পড়েছেন। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ৩ বছর আগেই মেয়াদোত্তীর্ণ হয় এই কমিটির।

এডি/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!