শেখ হাসিনাকে প্রতিবছর চট্টগ্রামে আসার আহ্বান কর্মীদের

মো. বাবুল মিয়া, বয়স প্রায় ৭০ বছর। লাঠিতে ভর দিয়ে এসেছেন সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে একবার দেখতে। এক হাতে শেখ হাসিনার ছবি, আরেক হাতে লাঠি। থাকেন নগরীর হালিশহরের ঈদগাঁ এলাকায়। কিন্তু গাড়ি না চলায় সমাবেশস্থলে আসতে বেগ পেতে হয়েছে তাকে। সমাবেশস্থলে ঢুকতে না পারলেও বাইরে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য শুনেছেন তিনি।

এত কষ্ট করে কেন আসলেন—এমন প্রশ্নের উত্তরে বাবুল মিয়া বলেন, ‘মুজিব সাহেবের রাজনীতি করেছি, এখন তার বেটির রাজনীতি করি। আমার নেত্রী আমাদের এত কাছে আসছে আর আমি তারে একটু দেখতে আসবো না—এটা কেমন কথা? তাই যতই কষ্ট হোক, চলে আসছি।’

এত বছর আওয়ামী লীগের সমর্থক থাকলেও বাবুল মিয়ার কপালে কখনো জোটেনি পদ-পদবি। তবুও তিনি চান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিবছর যেন চট্টগ্রামে আসেন।

রোববার (৪ ডিসেম্বর) চট্টগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে একবার দেখতে এভাবে ছুটে এসেছেন এমন হাজারো নেতাকর্মী।

মাথায় বেতের তৈরি নৌকা, গায়ে লাল-সবুজের ব্যাগ নিয়ে ঢাকা থেকে সমাবেশে এসেছিলেন মোহাম্মদ আলী (৪৫)। দেশের যে প্রান্তেই আওয়ামী লীগের সম্মেলন হোক না কেন নিজ খরচে চষে সেখানে পৌঁছে যান মোহাম্মদ আলী। চট্টগ্রাম থেকে তার পরবর্তী গন্তব্য কক্সবাজার। কারণ পর্যটননগরীতে আগামী ৭ ডিসেম্বর আসছেন প্রধানমন্ত্রী। এখনও পর্যন্ত দেশের মোট ২৬ জেলার আওয়ামী লীগের সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন আলী। দলীয় কোনো পদ-পদবির মালিক না হলেও শুধুমাত্র শেখ হাসিনার প্রতি বিশ্বাসের জন্যই এমন কাজ করে বেড়ান তিনি।

এছাড়া ১২ হাজার টাকা খরচ করে নৌকা বানিয়ে সমাবেশে এসেছেন পশ্চিম মাদাড়বাড়ির ৫১ বছর বয়সী মো. সেলিম। পেশায় একজন নাইটগার্ড তিনি। টানাপোড়েনের সংসারের মাঝেও কিছু টাকা জমিয়ে ও ধার করে তিনি নৌকা বানিয়েছেন। দামি কিছু ফুল দিয়ে সুন্দর করে নৌকাটি সাজিয়েছেন।

লাখ লাখ মানুষের ভিড়ে যখন পলোগ্রাউন্ড মাঠে যাওয়া দুষ্কর তখন সমাবেশস্থল থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূর কদমতলী ফ্লাইওভারের নিচে নাতিকে নিয়ে বক্তব্য শুনছেন ৭৬ বছরের অবসরপ্রাপ্ত চাকরিজীবী মো. ইব্রাহিম। মুজিবের আদর্শ প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ছড়িয়ে দিতেই নাতিকে নিয়ে এসেছেন তিনি। তবে মানুষের ভিড় থাকায় সমাবেশের ভেতরে না গিয়ে দূর থেকেই শুনছেন বক্তব্য।

ঘরে বসেওতো টিভিতে দেখতে পারতেন—এমন প্রশ্নের উত্তরে মো. ইব্রাহিম বলেন, ‘রাজনীতি করতে হয় মাঠে থেকে, ঘরে বসে রাজনীতি করিনি, শিখিনি। আমরা যদি নাতিদের হাতে ধরে রাজনীতি না শেখাই তবে দেশ আগামীতে চলবে কি করে?’ গাড়ি বন্ধ থাকলেও দুই কিলোমিটার পর্যন্ত হেঁটে এতদূর এসেছেন বলে জানান তিনি।

সমাবেশে কেউ নৌকা বানিয়ে এনেছেন, কেউ গায়ে রং মেখে এসেছে। আবার অনেকে বাঁশি বাজিয়ে আনন্দ নিয়ে অংশ নিয়েছেন সমাবেশে। চট্টগ্রামের সমাবেশে ২৯টি প্রকল্পের ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!