শুভ বুদ্ধ পূর্ণিমা আজ, এবার অনাড়ম্বর

বৌদ্ধদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শুভ বুদ্ধ পূর্ণিমা এবার অনাড়ম্বরভাবে পালিত হচ্ছে বাংলাদেশে। বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারির কারণে বুদ্ধ পূর্ণিমার অনুষ্ঠান সূচিতে পরিবর্তন আনা হয়েছে। বৈশাখী পূর্ণিমার এই দিনে মহামানব গৌতম বুদ্ধ জন্মগ্রহণ, বুদ্ধত্ব লাভ ও মহাপরিনির্বাণ (মৃত্যু) লাভ করেন। ত্রিস্মৃতি বিজড়িত এই দিনটি বিশ্ব বৌদ্ধবাসীর কাছে ‘শুভ বুদ্ধ পূর্ণিমা’ হিসেবে সুপরিচিত।

বুধবার (৬ মে) ২০২০ খৃষ্টাব্দ, ২৫৬৪ বুদ্ধাব্দ বিভিন্ন বিহারে অবস্থানরত ভিক্ষুসংঘরাই কেবল বিহারের ভেতরে ধর্মীয় অনুষ্ঠান, পূজা, বন্দনা, সূত্রপাঠসহ ধর্মীয় কার্যাবলী সম্পন্ন করবেন। অন্যরা নিজ নিজ বাড়িতে থেকে ধর্মীয় কাজ প্রতিপালন করবেন। দেশের শীর্ষ বৌদ্ধ সংগঠনগুলো মিলে এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।

বাংলাদেশ বৌদ্ধ সমিতি, বাংলাদেশ বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘ, বাংলাদেশ বুড্ডিস্ট ফেডারেশন, বাংলাদেশ বৌদ্ধ যুব পরিষদ, বাংলাদেশ বৌদ্ধ ভিক্ষু মহাসভা, বাংলাদেশ সংঘরাজ ভিক্ষু মহাসভা, পার্বত্য ভিক্ষু সংঘ বাংলাদেশ, বনভান্তে শিষ্য সংঘসহ সকল বৌদ্ধ সংগঠন মিলে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এবার বিহারে বুদ্ধ পূর্ণিমার অনানুষ্ঠানিক কর্মসূচি পালন করা হবে।

শুভ বুদ্ধ পূর্ণিমা উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী পৃথক বাণীতে বাংলাদেশ ও বিশ্বের সকল বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের মৈত্রীময় শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন।

রাষ্ট্রপতি মো.আবদুল হামিদ তাঁর লিখিত বাণীতে বলেন, ‘শুভ বুদ্ধ পূর্ণিমা বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের পবিত্র ধর্মীয় উৎসব। বুদ্ধ পৃথিবীকে সুখী ও শান্তিপূর্ণ করে গড়ে তোলার জন্য নিরন্তর প্রয়াস চালান। তিনি স্থান -কাল-পাত্রের উর্ধ্বে উঠে পৃথিবীর সকল জীবের কল্যাণ ও সুখ কামনা করেন। অহিংসা পরম ধর্ম— বুদ্ধের এই অমিয় বাণী আজও সমাজে শান্তির জন্য সমভাবে প্রযোজ্য। বৌদ্ধ কৃষ্টি, ঐতিহ্যের চর্চা ও বুদ্ধের মহান আদর্শকে ধারণ করে বৌদ্ধ সম্প্রদায় দেশের উন্নয়নে তাদের কর্মপ্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবেন এ প্রত্যাশা করি।’ এ বছর নিজ নিজ ঘরে পরিজনদের সাথে বুদ্ধ পূর্ণিমা পালনের আহ্বান জানান রাষ্ট্রপতি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর লিখিত বাণীতে বলেন, ‘মহামতি গৌতম বুদ্ধ আজীবন মানুষের কল্যাণে এবং শান্তি প্রতিষ্ঠায় অহিংসা, সাম্য ও মৈত্রীর বাণী প্রচার করেছেন। শান্তি ও সম্প্রীতির মাধ্যমে আদর্শ সমাজ গঠনই ছিল তাঁর একমাত্র লক্ষ্য। বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। আবহমানকাল থেকে এদেশে প্রত্যক ধর্মের মানুষ উৎসবমুখর পরিবেশে নিজ নিজ ধর্ম নির্বিঘ্নে পালন করে আসছেন। তবে এবার করোনা মহামারির কারণে সবাইকে জনসমাগম এড়িয়ে বুদ্ধ পূর্ণিমা উদযাপনের আহ্বান জানাচ্ছি।’

নবপন্ডিত বৌদ্ধ বিহার কাতালগঞ্জের বিহারাধ্যক্ষ অধ্যাপক উপানন্দ মহাথের বলেন, ‘স্মরণাতীতকালের মধ্যে এবারের বুদ্ধ পূর্ণিমা ব্যতিক্রম। কোভিড-১৯ এর কারণে সৃষ্ট মহামারির নিমিত্তে বিশ্বব্যপী লকডাউন চলছে। বাংলাদেশ সরকারের নির্দেশনা মেনে যার যার অবস্থানে থেকে বুদ্ধের ত্রিস্মৃতি বিজরিত দিনকে স্মরণ ও পূজা করতে হবে আমাদের সবাইকে। সব্বে সত্তা সুখিতা হোন্তু— জগতের সকল প্রাণী সুখী হোক। বিশ্ব তাড়াতাড়ি করোনা মহামারি থেকে মুক্ত হোক।’

এদিকে বাংলাদেশ বৌদ্ধ সমিতির চেয়ারম্যান অজিত রঞ্জন বড়ুয়া এবং মহাসচিব সুদীপ বড়ুয়া একটি বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সবাইকে এবার বিহারে না এসে সরকারি বিধিনিষেধ মেনে নিজ নিজ বাড়িতে ধর্মীয় কার্যাদি সম্পাদনের অনুরোধ জানান।

প্রসঙ্গত, কপিলাবস্তুর রাজকুমার সিদ্ধার্থ গৌতম ৬২৫ খৃষ্টপূর্বাব্দের ৭ এপ্রিল বৈশাখী পূর্ণিমায় নেপালের লুম্বিনী কাননে শাল বৃক্ষের নিচে জন্মগ্রহণ করেন। ৬ বছর কঠোর সাধনার পর ভারতের বুদ্ধগয়ায় বোধিবৃক্ষতলে ১০ এপ্রিল ৫৯০ খৃষ্টপূর্বাব্দ শুভ বৈশাখী পূর্ণিমায় ৩৫ বছর বয়সে বুদ্ধত্ব লাভ করেন। ৮০ বছর বয়সে ভারতের কুশীনগরে ২২ এপ্রিল ৫৪৫ খৃষ্টপূর্বাব্দে বৈশাখী পূর্ণিমায় জমজ শাল বৃক্ষতলে মহাপরিনির্বাণ লাভ করেন। ত্রিস্মৃতি বিজরিত এই দিনটি তাই বৌদ্ধদের নিকট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও পবিত্র। বিশ্ব বৌদ্ধ সৌভ্রাতৃত্ব সংঘ ও ইউনাইটেড ন্যাশনস এর সাধারণ সভায় ১৯৯৯ সালে বুদ্ধ পূর্ণিমাকে ‘International Vesak day’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!