শুকনো খাবার খেয়ে দিন কাটছে বন্যা দুর্গতদের

শুকনো খাবার খেয়ে দিন কাটছে বন্যা দুর্গতদের 1মুকুল কান্তি দাশ,চকরিয়া: মো.আব্দুল গণি (৬০)। কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার বিএমচর ইউনিয়নের (ভেওলা মানিকচর) খঞ্জনাঘোনা এলাকার মৃত আলী হোসেনের ছেলে। সংসার জীবনে চার ছেলে ও চার মেয়ের জনক। তিন ছেলে বিয়ে করে ছেড়ে গেছে তাদের। বড় মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। বর্তমানে স্ত্রী, ছোট ছেলে ও তিন মেয়েকে নিয়ে সংসার তার।
দিনমজুরি করে কোনমতে টেনে নিচ্ছিলেন সংসারের ঘানি। টাকার অভাবে মেয়েদের বিয়ে দিতে পারছেন না। বিয়ের টাকা জোগাড় করতে গত তিনবছর ধরে ফসল জমিয়ে আসছিলেন তিনি।
কিন্তু মাতামুহুরি নদীর ঢলে সৃষ্ট বন্যায় বড় একটি ধাক্কা খেলেন তিনি। বন্যার পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে তার এতদিনের জমানো সব ফসল (ধান)। ঘরবাড়ি পানিতে ভেসে গেছে। পরিবার নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন রাস্তায়। পলিথিনের তৈরি ঘরে শুকনো খাবার খেয়ে দিন কাটাতে হচ্ছে। শুধু গণি নন, তার মতো পাশ্ববর্তী রাস্তায় আশ্রয় নিয়েছেন চকরিয়ার বিভিন্ন ইউনিয়নের শত শত পরিবার।
আব্দুল গণি বলেন, ‘চারদিনের টানা বর্ষণ আর পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ঠ বন্যার পানিতে বসতবাড়ি ডুবে গেলে আঞ্চলিক মহাসড়কে আশ্রয় নিতে বাধ্য হই। পুরো পরিবার নিয়ে খেয়ে না খেয়ে থাকলেও কেউ আমাদের খবর নেয়নি। এখনো পর্যন্ত একমুঠো ত্রাণ পাইনি। ‘পাইনি সরকারি বা বেসরকারি কোন সাহায্য। শুধুমাত্র ইউপি চেয়ারম্যান এসএম জাহাঙ্গীর সামান্য চিড়া আর এক টুকরো গুড় দিয়ে গেছেন। কিন্তু এরপর দুদিন পার হয়ে গেলেও কেউ আমাদের খোঁজ নেয়নি। খুব কষ্টে দিন কাটাচ্ছি। ’
উপজেলার কোণাখালীর বাসিন্দা রাজিয়া বেগম বন্যার কারণে ঘরবাড়ি ছেড়ে মূল্যবান জিনিসপত্র ও গবাদি পশু নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন কোণাখালী ইউনিয়নের বেঁড়িবাধের উপর। কিন্তু সেখানেও তারা নিরাপদ নয়। উঠতি বয়সি মেয়েদের নিরাপত্তা নিয়েও উদ্বিগ্ন সড়কে আশ্রয় নেওয়া এসব অভিভাবকরা।
কাকারা ইউনিয়নের এসএমচরের বাসিন্দা সিনিয়র সাংবাদিক এম.জাহেদ চৌধুরী বলেন, চারদিন ধরে ঘরে পানিবন্দী হয়ে আছি। কেউ খবর নেয়নি। শুকনো খাবার খেয়ে দিন কাটছে। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে খুবই কষ্টের মধ্যে আছি।
তিনি আরো অভিযোগ করে বলেন, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা নিজেদের জাহির করার জন্য লোক দেখানো ত্রাণ বিতরণ করে ফেসুবকে ছবি দিচ্ছে। যা খুবই হতাশাজনক।
বিএম চর ইউপির চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম জানান, সরকারি বরাদ্দ পর্যাপ্ত নয়। তারপরও ব্যক্তিগত উদ্যোগে বন্যার্ত মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করছি। তাদের জন্য খিচুড়ি রান্না করে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাহেদুল ইসলাম বলেন, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে নগদ দেড়লাখ টাকা ও শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া বন্যা দুর্গতদেও মাঝে ১ হাজার প্যাকেট ডাল, তেল, লবণ, পেঁয়াজ, মরিচ বিতরণ করা হবে। পাশাপাশি আবারো নগদ অর্থ দেওয়া হবে। এছাড়া সড়কের উপর যারা আশ্রয় নিয়েছেন তাদেও খাবার দেওয়ার জন্য চেয়ারম্যানদেও নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!