শীত সইতে না পেরে মায়ের আঁচলের নিচে পড়ে থাকে এই শিশুরা

উত্তরের শীতল হাওয়ায় থরথর করে কাঁপছে তিন ভাই-বোন রাকিব, ইসরাত ও শাওনের সারা শরীর। তাদের পরনে ছিলো ছেঁড়া পাতলা কাপড়। শীত নিবারণের মত কোন কাপড় না থাকায় রাতে মায়ের আঁচল ঢেকেই কোন রকম শীত নিবারনের চেষ্টা তিন সন্তানের। তারা জানিয়েছে, ঘরে শীত কাটানোর মত কোন শীতবস্ত্র নেই। তাই মায়ের আঁচলে গা ঢেকেই কিছুটা গরম পরশ অনুভব করে। মুজিববর্ষে একটি পরিবারও গৃহহীন না থাকার কথা থাকলেও তাদের কপালে জোটেনি সেই সরকারি বরাদ্দের ঘর। এভাবেই কাটছে তাদের মানবেতর জীবন।

শাকিলা বেগম (৩৫)। স্বামী মোহাম্মদ ইউনুস। পনের বছর আগে বিয়ে হয় তাদের। তাদের সংসারে রয়েছে দুই ছেলে ও এক মেয়েসহ তিন সন্তান। নিজস্ব কোন ভিটেমাটি না থাকায় উপজেলার সদর ইউপির গোঁয়াখালী মাতবরপাড়া মেইন রোডের পাশেই নদীর ধারে বসবাস। ভাঙা বাঁশের বেড়া ও পলিথিন মোড়ানো একটা জরাজীর্ণ কুঁড়েঘর। তার অর্ধেকটা আবার গ্রাস করে নিয়েছে নদী।

ঘরের মেঝেতেই থাকা-খাওয়া সব করতে হয় তাদের। কোন রকম দিনমজুরি কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন স্বামী ইউনুস। বর্তমানে হাড়ের বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত। কাজ করতে অক্ষম। তাই কোন রকম খেয়ে না খেয়ে জীবন চলছে তাদের। শীত তীব্র থেকে তীব্রতর হলেও তাদের কপালে জোটেনি শীতের কাপড়। জোটেনি সরকারি-বেসরকারি কোনো সহযোগিতা।

সরেজমিনে গিয়ে এমনি এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের দেখা মেলে কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের গোয়াখালী মাতবরপাড়া এলাকায়। রাস্তার ধারে ভাঙা বাঁশের বেড়া ও পলিথিন মোড়ানো জরাজীর্ণ একটি কুঁড়েঘর। নেই কোন বিদ্যুৎ, নেই বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খোলামেলা একটি টয়লেট। সড়ক প্রশস্ত হওয়ার কারণেও স্থান বদল করতে হয়েছে তাদের। কোনমতে মাটি ভরাট করে থাকার ঠাঁই হলেও তার অর্ধেকটা নদীতে হারাতে বসেছে।

শাকিলা বেগম জানান, তাদের নিজস্ব কোন ভিটেমাটি না থাকায় ৭-৮ বছর ধরেই নদীর ধারে বসবাস করি। স্বামী অসুস্থ হওয়ায় কোন কাজ করতে পারি না। ছোট ছোট বাচ্চা নিয়ে খুব কষ্টে দিন কাটছে আমাদের। কোন ধরনের সহযোগিতাও আমাদের কপালে জোটেনি।

তিনি বলেন, শীতের তীব্রতা সইতে না পেরে শাড়ির আঁচলে ঘুমায় শিশুরা। রাতে শীতের যন্ত্রণায় বাচ্চাদের কান্না যেন থামানো যায় না। তাদের কাছে যেন আমি এক ব্যর্থ মা।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!