শীতলঝর্ণার তীব্র স্রোতে ভেসে গেল কিশোর, খোঁজ মেলেনি
‘বইন, আমার ছেলেকে পাওয়া যাচ্ছে না। বইন, আমার ছেলেকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। বইন, আমি অনেক মানুষ দিছি ওরে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। আপা আমার ছেলেকে ব্যবস্থা করে দেন। আপা রে আমার ছেলেটা ছাড়া আমার কিছু নাই বইন। আপা আমার ছেলেটারে আইনা দেন’—এভাবেই আহাজারি করে বুক চাপড়ে কান্না করছেন খালে ভেসে যাওয়া নিখোঁজ শিপনের মা সুমী বেগম।
চট্টগ্রামের রৌফাবাদ রেলব্রিজের উপর থেকে পা ফসকে শীতল ঝর্ণা খালে পড়ে মো. শিপন (১৬) নামের এক কিশোর নিখোঁজ হয়ে যায়। পশ্চিম ষোলশহরের ৫০ সদস্যের আরবান ভলান্টিয়ার (স্বেচ্ছাসেবী) ও বায়েজিদ স্টেশন ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট ঘটনাস্থল থেকে আউলিয়া কলেজ সংলগ্ন খালের মোড় পর্যন্ত খোঁজ চালিয়ে যাচ্ছে।
বুধবার (১০ জুলাই) দুপুর তিনটার দিকে এ ঘটনা ঘটে। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা উদ্ধার কাজ অব্যাহত রেখেছে।
মো.শিপন চান্দা মিয়া ও সুমী বেগমের বড় ছেলে। ছোট ভাই ও বাবা-মায়ের সঙ্গে নিয়ে রৌফাবাদ কলোনীর সিটি করপোরেশন পশুজবাইখানার পাশে থাকে নিখোঁজ শিপন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, নিখোঁজ শিপন সরু রেললাইন ধরে হাঁটতে গিয়ে পা ফসকে হঠাৎ খালে পড়ে যায়। অনবরত বৃষ্টি থাকায় খালে স্রোত তৈরি হলে স্রোতে ভেসে নিখোঁজ হয়ে যায় সে। পরক্ষণে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এসে উদ্ধারকাজ শুরু করে। দুই ঘন্টা চেষ্টা চালিয়েও কিশোরকে পাওয়া যায়নি।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, দুপুরে ভাত খাওয়ার পর মা সুমী বেগম দুই ছেলের মাঝে বড় ছেলে মো. শিপনকে রাতের খাবারে তরকারি রান্নার জন্য দোকান থেকে তেল কিনতে পাঠানোর পর শিপন আর ফিরে আসেনি।
নিখোঁজ শিপনের নানী কান্নাজড়িত কন্ঠে চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমার নাতি খালে পড়ে গেছে। পানির স্রোতে নিয়া গেছে। তারে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। আপনারা একটু খুঁজে আইনা দেন। নইলে আমার মাইয়াটা মইরা যাইবো।’
ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক মো. জসীম উদ্দিন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘৯৯৯ থেকে কল পাওয়ার পর পরই আমরা ঘটনাস্থলে আমাদের একটি ইউনিট পাঠাই। আমাদের কর্মীরা এখনও উদ্ধার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। যেহেতু খালে স্রোত আছে সেক্ষেত্রে খুঁজে পেতে একটু সময় লাগছে। খবর পেলেই জানাবো বাকিটা।’
৭নং পশ্চিম ষোলশহর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. মোবারক আলী চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘পাহাড়ধসের আশঙ্কায় উদ্ধার কাজে নিয়োজিত আমাদের ৫০ সদস্যের ভলান্টিয়াররাও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের সাথে কাজ করে যাচ্ছে। এখন উদ্ধারকর্মীরা ঘটনাস্থল থেকে আউলিয়া কলেজ সংলগ্ন খাল পর্যন্ত উদ্ধার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। ছেলেটার ভাগ্যে কী আছে জানি না!’
এসআর/সিপি