অজ্ঞান পার্টির ছল—কখনও কাঁথা বিক্রেতা, কখনও ডাব ব্যাপারি

অজ্ঞান পার্টির চার সদস্যকে আটক করেছে বাকলিয়া থানা পুলিশ। এরা চট্টগ্রাম নগরীসহ দেশে বিভিন্ন স্থানে ডাবের সাথে ঘুুমের ওষুধ মিশিয়ে টার্গেটকৃত ব্যক্তির সর্বস্ব নিয়ে কেটে পড়ে। সারা বছর তারা একই পেশায় থাকে না। শীতকালে তারা নগরীর নিউমার্কেটের সামনের ফুটপাতে নকশী কাঁথা বিক্রি করে বলে জানিয়েছে।

অজ্ঞান পার্টির এই চার সদস্য হলেন শহীদুল ইসলাম, বাবুল, রতন মিয়া ও হারুন। মামুুনুর রশিদের অভিযোগের ভিত্তিতে বাকলিয়া থানা ও কোতোয়ালী থানার যৌথ অভিযানে নগরীর বিভিন্ন স্থান থেকে গ্রেপ্তার হন অজ্ঞান পার্টির এই চার সদস্য।

সর্বশেষ সোমবার (২৬ আগস্ট) নগরীর নতুন ব্রিজ এলাকায় আমির হোসেন নামের এক ফল ব্যবসায়ীকে ডাবের সাথে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে অজ্ঞান করে তার পকেট থেকে দুই হাজার ২৫০ টাকা নিয়ে কেটে পড়ে। আমির হোসেনের ভায়রা ভাই জসিম উদ্দিন ও শ্যালক মামুুনুর রশিদ একই এলাকায় ফলের ব্যবসা করেন। জসিম উদ্দিন তার ভায়রা ভাইকে পড়ে যেতে দেখে দৌঁড়ে এসে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করান। ২৭ আগস্ট দুপুর দুইটা পর্যন্ত আমির হোসেনের জ্ঞান ফেরেনি বলেন জানান তার শ্যালক মামুন।

এর আগে শনিবার (২৪ আগস্ট) রাত সোয়া আটটায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) এক শিক্ষার্থীও একই ঘটনার শিকার হন। তিনি বাদি হয়ে কোতোয়ালী থানা একটি অভিযোগ দায়ের করেন।

অজ্ঞান পার্টির খপ্পরের শিকার চবির সেই শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান রকি চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, শনিবার সন্ধ্যায় নিজের জন্য প্যান্ট, টি-শার্ট, শার্ট কিনে বিশ্ববিদ্যালয় যাওয়ার জন্য নিউমার্কেট থেকে একটি যাত্রবাহী বাসে উঠি। বাসের জানালা দিয়ে চুল-দাঁড়ি পাকা এক বৃদ্ধ লোক ডাব কিনতে অনুরোধ করলো। মায়াবী চেহারার বৃদ্ধের কষ্টের দিকে তাকিয়ে ইচ্ছে না থাকার পরেও ডাব খেলাম। ডাব খাওয়ার পর আর কিছু জানি না। রাতে নিজেকে আবিষ্কার করলাম ডাক্তারের চেম্বারে। পথে অন্য যাত্রীরা চোখে মুখে পানি ছিটিয়ে জিজ্ঞেস করছিল আমি কোথায় যাবো। তখন নাকি বলেছিলাম চবি যাবো। সেই সূূত্রে তারা আমাকে ক্যাম্পাসে পৌঁছে দিয়েছিল। সহপাঠীরা আমাকে চিকিৎসা করিয়েছে।

এ ব্যাপারে নগর পুুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) এসএম মেহেদী হাসান মঙ্গলবার এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, তারা সারা দেশব্যাপী ঘুরে ঘুরে একই কাজ করেন। বয়স্ক লোকটাকে দিয়ে ডাব অফার করান। যাতে ক্রেতারা সহজেই ইমোশনালি ব্ল্যাকমেইল হন। তারপর সেই ডাব ক্রেতার আশপাশে আগে থেকে থাকা চক্রের অপর সদস্যরা ওই ক্রেতা পরিচিতজন সেজে তার সেবা করার ছলে সব হাতিয়ে নিয়ে তাকে সুবিধাজনক স্থানে ফেলে চলে যান।

তাদের কাছ থেকে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন দুই প্রকারের ৪২০টি ট্যাবলেট, নগর টাকা ও মোবাইল উদ্ধার করা হয়। আটক শহিদুল ইসলাম ও বাবুলের বাড়ি খুলনা জেলায়, রতন মিয়ার বাড়ি ফিরোজপুর অপর আসামি হারুনের বাড়ি বরগুনায়।

এফএম/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!