শিশুকালের বিয়ে চট্টগ্রামেই সবচেয়ে কম, সবার ওপরে চাঁপাইনবাবগঞ্জ

১৫ বছরের কনে দেড় কোটি

জেএসসি পাস করে পরিবারের চাপে বিয়ের পিঁড়িতে বসেছিল ১৫ বছরের কিশোরী আফরোজা খানম মুমু। চট্টগ্রামের লোহাগাড়ার আধুনগর এলাকার ৪৮ বছর বয়সী শফিকুর রহমান শফির সঙ্গে বিয়েও হয়ে যায় তার ঘটা করে। বিয়ের দেড় মাস পর স্বামীকে ভালো করে চেনার আগেই বিদেশে চলে যান শফি। স্বামী বিদেশ চলে যাওয়ার পর মুমু নবম শ্রেণীতে ভর্তি হয় স্থানীয় হাজী সামশুল ইসলাম উচ্চ বিদ্যালয়ে। এরপর শফির ভাগ্নে হারুনের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে মুমুর। জানতে পেরে শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাকে নির্যাতন শুরু করে। সেই নির্যাতন সইতে না পেরে সবার অজান্তে বিষপান করে মুমু। পাঁচদিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যায় মেয়েটি। গত বছরের ২১ মের ঘটনা।

দক্ষিণ এশিয়ায় এরকম বাল্যবিয়ের ঘটনা সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশে। আর বাংলাদেশে বাল্যবিয়ে সবচেয়ে কম চট্টগ্রাম জেলায়— মাত্র ৩৯ শতাংশ। অন্যদিকে সারা দেশে সবচেয়ে বেশি বাল্যবিয়ে হয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জে, যা চট্টগ্রামের প্রায় দ্বিগুণ— ৭৩ শতাংশ।

বুধবার (৭ অক্টোবর) ‘শিশু বিয়ে সমাপ্তি: বাংলাদেশের অগ্রগতির চিত্র’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য প্রকাশ করে ইউনিসেফ জানিয়েছে, এখন বাংলাদেশে যেসব বিবাহিত তরুণীর বয়স ২০ থেকে ২৪ বছর— তাদের ৫১ শতাংশের বিয়ে হয়েছে শিশু থাকা অবস্থায়। এর মানে দেশে ৩ কোটি ৮০ লাখ মেয়ের বিয়ে হয়েছে তাদের ১৮তম জন্মদিনের আগে। এর মধ্যে এক কোটি ৩০ লাখ মেয়েকে ১৫ বছরের আগেই বিয়ে করতে হয়েছে।

ইউনিসেফের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, দেশের মধ্যে বাল্যবিয়েতে শীর্ষে রয়েছে ঢাকা বিভাগ। এ বিভাগে ৯০ লাখ নারীর বাল্যবিয়ে হয়েছে। অন্যদিকে চট্টগ্রাম জেলায় বাল্যবিয়ের ঘটনা সবচেয়ে কম হলেও চট্টগ্রাম বিভাগে বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে ৭০ লাখ নারী। তবে বিভাগের মধ্যে চট্টগ্রাম ও সিলেটে গত ২৫ বছরে সবচেয়ে বেশি অগ্রগতি হয়েছে।

জেলা পর্যায়ে বাল্যবিয়েতে সবার আগে চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাম। এ জেলায় বাল্যবিয়ের হার সর্বোচ্চ ৭৩ শতাংশ। এরপরই আছে নড়াইল (৭১ শতাংশ), নওগাঁ (৭১ শতাংশ), রাজশাহী (৭০ শতাংশ), বাগেরহাট (৭০ শতাংশ), বগুড়া (৬৯ শতাংশ), টাঙ্গাইল (৬১ শতাংশ), কুমিল্লা (৫৩ শতাংশ), ময়মনসিংহ (৫০ শতাংশ), ঢাকা (৪১ শতাংশ)। এই তালিকায় সবচেয়ে কম বাল্যবিয়ের কৃতিত্ব চট্টগ্রাম জেলার)। এ জেলায় বাল্য বিয়ের হার ৩৯ শতাংশ।

ইউনিসেফের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বাল্যবিয়েপ্রবণ পৃথিবীর শীর্ষ ১০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান অষ্টম। তবে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ আছে তালিকার শীর্ষে। দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের পরে রয়েছে নেপাল, আফগানিস্তান, ভারত, ভুটান, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপ। ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের পুরো জনসংখ্যার মধ্যে ৩ কোটি ৮০ লাখ নারীর বাল্যবিয়ে (১৮ বছরের আগে বিয়ে) হয়েছে। এদের মধ্যে এক কোটি ৩০ লাখের বিয়ে হয়েছে ১৫ বছরের আগে।

প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়, বাল্যবিয়ের শিকার শিশুদের বেশিরভাগ দরিদ্র পরিবারের ও গ্রামে বসবাস করেন। বাল্যবিয়ের শিকার মেয়ে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার হার অবিবাহিত মেয়ে শিক্ষার্থীদের তুলনায় ৪ গুণ বেশি।

বিবাহিত প্রতি ১০ জনের মধ্যে প্রতি পাঁচজন ১৮ বছরের আগে ও প্রতি ৮ জন ২০ বছরের আগে সন্তান জন্ম দেয়।

২০১১ সালের জরিপ অনুযায়ী বাংলাদেশে ৫২ শতাংশ মেয়ে বাল্যবিয়ের শিকার হতো। কিন্তু ২০১৮ সালে ইউনিসেফ জানিয়েছিল, বাল্যবিয়ের হার পৌঁছেছে ৫৯ শতাংশে।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!