হোটেল জামানের ৮ লাখ টাকার বাসি খাবার, রান্না হয়েছিল একদিন আগে

পিএইচ আমিন একাডেমির ফ্যামিলি নাইট

চট্টগ্রামের পাহাড়তলীর দক্ষিণ কাট্টলীতে পিএইচ আমিন একাডেমি স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের ফ্যামিলি নাইটের পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান ছিল শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর)। অনুষ্ঠান উপলক্ষে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার লোকের জন্য প্রায় ৮ লাখ টাকার খাবার অর্ডার করা হয়েছিল চট্টগ্রাম নগরের অলংকার মোড়ের হোটেল জামান থেকে। কিন্তু দেখা গেছে, ডেলিভারিকৃত ৮০ শতাংশ খাবারই ছিলো নষ্ট। ২৭ তারিখ রাতের খাবার তারা ২৬ তারিখ রাতেই রান্না করে প্যাকেটজাত করে ফেলে।

খাবারের প্যাকেটে ছিল বিরিয়ানি, ডিম, চিকেন, কাবাব আর ঝোল। সাড়ে ৪ হাজার সদস্যের কেউই এই খাবার খেতে পারেনি। ক্ষোভ প্রকাশ করে সবাই হাত থেকে খাবার ফেলে দেন। সেই স্কুলের কক্ষের বেঞ্চের নিচে, উপরে এবং আশপাশে সব খাবার প্যাকেটগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল। জামানের বাসি খাবারের কারণে অনুষ্ঠানটির আনন্দই ম্লান হয়ে যায়।

হোটেল অলংকার মোড়ে অবস্থিত ‘হোটেল জামানের’ বিরুদ্ধে খাবারের মান নিয়ে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে পিএইচ আমিন একাডেমি স্কুলের এক প্রাক্তন শিক্ষার্থী অভিযোগ করে চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমাদের পিএইচ আমিন একাডেমি স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের ‘ফ্যামিলি নাইট’ অনুষ্ঠান অনেক সুন্দরভাবেই সম্পন্ন হয়েছিল। কিন্তু যখন খাবার খেতে যাই তখন আমরা সবাই হতাশ হয়ে যাই। হোটেল জামানের মতো এমন একটা হোটেল থেকে এতো বাজে খাবার আশা করিনি। জামানের খাবার প্যাকেট খুলতেই গন্ধে ওইখানে থাকতে পারছিলাম না। আমরা প্রায় সাড়ে ৪ হাজার সদস্য ছিলাম। ৪ হাজার সদস্যের জন্য প্রায় ৮ লাখ টাকার খাবার আনা হয়েছিলে হোটেল জামান থেকে। সাড়ে ৪ হাজার জনের একজনও এ খাবার মুখে নেয়নি। সবাই হাত থেকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছিল। চারদিকে ভাত, ডিম, মাংস আর ঝোল ছড়িয়ে ছিল।

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা অনুষ্ঠানে অনেক আনন্দ করেছি। আনন্দটাই হলো আসল। এ খাবারগুলো আনা হয়েছে সকল সদস্যদের কাছ থেকে চাঁদা তুলে। প্রায় ৮ লাখ টাকার খাবারই নষ্ট দিলো তারা। এটা তো তাদেরই দোষ। বারবার এই হোটেলকে জরিমানা করার পরও তারা কিভাবে এমন খাবার ডেলিভারি দেওয়ার সাহস পায় আমি বুঝি না।’

সিফাত সাইদ নামে এক প্রাক্তন শিক্ষার্থী বললেন,‘একটা দিনের জন্য মিলিত হব বলে তাই আমরা আয়োজকরা কোনরকম বেহুশের মত খেয়ে নিয়েছি। কিন্তু যাদের জন্য এই আয়োজন তারা বেশিরভাগই (৯৯%) খেতে পারেনি এই বাসী খাবার, অনেকে খবর পেয়েছি আজ সকাল থেকে অসুস্থ হয়ে গিয়েছে এর দায়ভার কার? সবাই বলেছে ভাত, ঝোল আর কাবাবটা কোনরকম খাওয়ার মত ছিল কিন্তু মুরগীর পিসটা থেকে প্রচুর পঁচা গন্ধ আসছিল, এই অভিজ্ঞতা শুধু আমার বা আমার ব্যাচের নয় সকল ব্যাচেরই একই অভিজ্ঞতা এমনকি আমরা পরিবারের মানুষ এনে লজ্জিত হয়েছি কারো খারাপ আচরণ না শুধুমাত্র এই খাবারের জন্য।’

পিএইচ আমিন একাডেমি প্রাক্তন শিক্ষার্থী পরিষদ কমিটির সদস্য সচিব মুজিবুর রহমান বলেন, ‘হোটেল জামান থেকে অনুষ্ঠানের দিন সাড়ে ৪ হাজার প্যাকেট খাবারের অর্ডার করা হয়। কিন্তু খাবার আসার পর শিক্ষার্থীরা যখন প্যাকেট খুলে তখন সবাই অভিযোগ করেন যে প্রায় খাবারই নষ্ট। তারা কেউ খেতে পারেনি। এ বিষয়টি নিয়ে আমাদের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত করে তারা আমাদের রিপোর্ট দেবে। রিপোর্টের পর ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।’

কমিটি সদস্য ও শিক্ষার্থী পরিষদের গঠনতন্ত্র প্রণয়ন কমিটির চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মাহফুজুর রহমান মিল্লাত বলেন, ‘প্রোগ্রামের আগের দিন ২৬ তারিখ রাতেই তারা হোটেলে রান্না করে খাবার প্যাকেট করে ফেলে। এরপরের দিন ৩.৩০ মিনিটে খাবার দিয়ে যায়। কিন্তু কথা ছিল ২৭ তারিখ রান্না করবে এবং সন্ধ্যা ৫টার পর পাঠাবে। কিন্তু তারা তা করেনি। যখন সবাই খাওয়ার জন্য নেয় তখন দেখা যায় ৮০% খাবারই বাসি এবং নষ্ট। এ খাবার খেয়ে অনেকে বমিও করেছেন। কেউ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন কিনা জানি না।’

তিনি আরও বলেন, ‘জামান হোটেল পচা-বাসি খাবার পরিবেশন করে। নির্দিষ্ট সময়ের আগে খাবার রান্না করে। তাদের আমরা আগেই সব টাকা পরিশোধ করে দিয়েছি। এ বিষয়ে আমরা জামান হোটেলের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করবো এবং এর ক্ষতিপূরণ চাইবো।’

অভিযোগের বিষয়ে হোটেল জামানের মালিক খালেকুজ্জামানকে প্রশ্ন করা হলে তিনি চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না। যদি এমন কোনো অভিযোগ আসে তাহলে আমি দেখবো।’

উল্লেখ্য, রোববার (৩ নভেম্বর) জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের বাজার তদারকিমূলক অভিযানে আগ্রাবাদের হোটেল জামানকে উৎপাদনের তারিখ ও মেয়াদোত্তীর্ণ দই বিক্রি ও ফ্রিজে খোলা ও বাসি খাবার সংরক্ষণ করায় ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। তারপরেও হোটেল জামানের কর্তৃপক্ষ তাদের হোটেলের খাবারের মানের প্রতি কোনো নজরদারিতে নেই।

এনজে/এসএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!