শিক্ষক পরিবারকে অস্ত্র ঠেকিয়ে টিপসই নেন যুবলীগ নেতা!

আনোয়ারায় সংখ্যালঘু মন্দির ও জায়গা দখল

যেন বাংলা সিনেমার কোন গল্প! আর ওই গল্পের ভিলেন আনোয়ারার এক সাবেক যুবলীগ নেতা ও তার দলবল। সিনেমার গল্পকে বাস্তবেই রূপ দিয়ে তারা দখল করে নিয়েছে সনাতনী সম্প্রদায়ের কালিমন্দির, শত বছর বয়সী এক শিক্ষক পরিবারের বাড়িভিটা, পুকুরসহ শেষ সম্বলটুকুও। তাও আবার আনোয়ারা সাব রেজিস্ট্রারকে সামনে রেখে।

১০ এপ্রিল সময় সন্ধ্যা ৬টা ১৫ মিনিটে দলবল নিয়ে আসে ওই যুবলীগ নেতা কামরুল ইসলাম হেলাল, আনোয়ার ও তার দলবল। এরপর থেকে বাপদাদার ভিটাবাড়ি ছাড়া হয় হিন্দু পরিবারটি। কালিমন্দিরে ঝুলছে তালা, বাড়িতেও ঝুলছে তালা। মন্দিরে এসে পূণ্যার্থীরা পূজা ও প্রণাম না জানিয়েই ফিরে যাচ্ছে মনোকষ্ট নিয়ে। কিন্তু ভয়ে কেউ মুখ খুলছে না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা সাব-রেজিস্টার কর্মকর্তা সালাহ উদ্দিন আহমেদ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমার কাছে প্রণব রঞ্জন চক্রবর্তী ভূমি রেজিস্ট্রিদাতা তার বাবা চলাফেরায় অক্ষম- এই মর্মে একটি আবেদন করেন। ওই কারণে আমি তাদের বাড়িতে গিয়ে কাগজপত্র দেখে সাক্ষীদের উপস্থিতিতে জায়গা রেজিস্ট্রি করি। তবে তাদেরকে জায়গার টাকা বুঝে পেয়েছে কিনা জিজ্ঞেস করলে তারা বলেছে টাকা আমরা বুঝে পেয়েছি। এর আগে ও পরে এবং এখন কী হচ্ছে তার কিছুই আমি জানি না।’

আনোয়ারা উপজেলার সদর ইউনিয়নের জয়কালি বাজার এলাকার প্রবীণ শিক্ষক নিরঞ্জন চক্রবর্তী। ৯৮ বছর বয়সী এই শিক্ষক পেশা থেকে অবসর নেন বহু আগেই। তিনি আনোয়ারা উচ্চ বিদ্যালয় এবং তৈলারদ্বীপ বারখাইন উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা পেশায় যুক্ত ছিলেন। পুরো আনোয়ারায় তিনি ‘পন্ডিত স্যার’ নামে পরিচিত। নিরঞ্জনের একমাত্র ছেলে প্রণব চক্রবর্তীও তৈলারদ্বীপ বারখাইন উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা পেশায় যুক্ত ছিলেন।

অভিযোগে জানা যায়, গত ১০ এপ্রিল উপজেলার সদর ইউনিয়নের জয়কালী বাজার এলাকায় পন্ডিত বাড়ির নিরঞ্জন চক্রবর্তী পরিবারকে অস্ত্র ঠেকিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে সাব রেজিস্ট্রারের সামনেই যুবলীগ নেতা নামধারী কামরুল ইসলাম হেলাল, আনোয়ার ও তার দলবল দখল করে নেন কোটি টাকার সম্পত্তি। এছাড়া তাদের দখলে যায় সনাতনী সম্প্রদায়ের একটি কালি মন্দিরও। সাব-রেজিষ্ট্রারকে জিম্মি করে সন্ধ্যায় ওই বাসায় এনে জোরপূর্বক রেজিস্ট্রি নেওয়ার ঘটনায় জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। ওই ঘটনার পর নিরঞ্জন চক্রবর্তীর পুত্র প্রণব চক্রবর্তী মামলা দায়েরের জন্য থানায় দিনরাত ঘুরলেও মামলা নিতে পুলিশের অনীহা। মামলার অভিযোগে পুরো ঘটনার বিবরণও লিখতে পারছেন না বাদি। অস্ত্র ঠেকিয়ে জোরপূর্বক স্বাক্ষর নিলেও অভিযোগে লিখতে হয়েছে দা কিংবা কিরিচের মতো ধারালো অস্ত্রের কথা। গত ১৮ এপ্রিল মামলা নথিভুক্ত না করে শুধুমাত্র অভিযোগ হিসেবে গ্রহণ করে তদন্তের নামে কালক্ষেপণ করছে পুলিশ। এমন অভিযোগ জানালেন মামলার অভিযোগকারী শ্রীমা চক্রবর্তী। তিনি নিরঞ্জনের পুত্রবধু।

তবে আনোয়ারা থানার ওসি তদন্ত মাহবুব মিল্কী চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘ওই ঘটনায় ১৮ এপ্রিল থানায় একটি মামলা রেকর্ড হয়েছে। আমরা তদন্ত করে দেখছি।’

ওসি তদন্ত ১৮ এপ্রিল মামলা নথিভুক্তের কথা বললেও ভুক্তভোগীদের মামলার কাগজে লেখা রয়েছে ১৩ এপ্রিল।

এ বিষয়ে জানতে কামরুল ইসলাম হেলালের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে তিনি বলেন, ‘সাব রেজিস্ট্রারসহ তিনজন সরকারি কর্মকর্তার সামনেই ৪০ লাখ টাকায় জায়গাটি রেজিস্ট্রেশন করেছি। এটি জোরপূর্বক দখল করা হয়নি। আমার পারিবারিক ও সামাজিক মর্যাদা ক্ষুণ্ন করার জন্যে স্থানীয় চেয়ারম্যানের নেতৃত্বেই অপপ্রচার চালাচ্ছে একটি চক্র। তিনি বলেন, ওই পরিবারটি এর আগেও জায়গাটি কয়েকজনকে আমমোক্তার দিয়ে আবার প্রত্যাহার করেছে। এ নিয়ে সিএমপির ডবলমুরিং থানায়ও একটি অভিযোগ রয়েছে। অস্ত্র ঠেকিয়ে কিংবা জোরপূর্বক স্বাক্ষরের কোন প্রমাণ পেলে সব শাস্তি মেনে নেব।’ ফেসবুকে অপপ্রচার নিয়ে মানসিকভাবে কষ্টে আছেন দাবি করে প্রকৃত ঘটনার সত্যটি খুঁজে বের করতে তিনি সহযোগিতা কামনা করেন। তিনি যুবলীগের সাবেক সদস্য ছিলেন বলে এ প্রতিবেদককে জানান।

বিরোধপূর্ণ ওই জায়গায় স্থাপিত সাইনবোর্ডে অংশীদার হিসেবে উল্লেখিত মো. আনোয়ার হোসেন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘জায়গাটি জোরপূর্বক রেজিস্ট্রি নেওয়া হয়নি।’ জায়গাটি কার নামে রেজিষ্ট্রেশন নেওয়া হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি এর কোন অংশীদার নই। এটি কামরুল ইসলাম হেলালের নামে। কিন্তু ওই জায়গায় ঝুলন্ত সাইনবোর্ডে আমার নাম দেখে আমি হতবাক হয়েছি।’

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!