শিক্ষক নিয়োগে নাটকীয়তা চবির ইসলামিক স্টাডিজে, কলকাঠিতে নড়ছে প্রশাসনও

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে অস্বাভাবিক জটিলতার। বিভাগের শিক্ষকদের মধ্যে গ্রুপিংসহ নানা কারণে বারবার পিছিয়েছে বিভাগটির প্রভাষক পদে নিয়োগের পরীক্ষা। এ নিয়ে মোট চারবার নিয়োগ পরীক্ষা পেছাতে বাধ্য হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

জানা গেছে, গত ১৬ নভেম্বর এ বিভাগের নিয়োগ বোর্ড আহবান করা হয়। অজ্ঞাতকারণে তা স্থগিত করে ২১ ডিসেম্বর আবারও এ বিভাগের নিয়োগ বোর্ড আহবান করা হয়। পরে তা স্থগিত করে ঘোষণা দেওয়া হয় ২২ ডিসেম্বর। সোমবার (১৯ ডিসেম্বর) এই বোর্ড স্থগিত করে চতুর্থ দফা দিনক্ষণ ঠিক করা হয় ২৪ ডিসেম্বর।

বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান পদে দায়িত্ব পালন করছেন বিএনপি-জামায়াতপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দলের সদস্য প্রফেসর ড. ইলিয়াস সিদ্দিকী। চেয়ারম্যান পদে তার দায়িত্ব শেষ হবে ৩১ ডিসেম্বর। পদাধিকারবলে তিনি প্রভাষক পদে নিয়োগে গঠিত বোর্ডের সদস্য হওয়ায় ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের নিয়োগ পরীক্ষাটি তার দায়িত্ব পালনকালেই তিনি নিতে চান।

অভিযোগ উঠেছে, হেফাজতে ইসলামের ঘনিষ্ঠ একজনকে নিয়োগ দিতে নানাভাবে চাপ তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছেন ইলিয়াস সিদ্দিকী। এ বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পর্যায়ে জানাজানি হলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নিয়োগ প্রক্রিয়াটি পিছিয়ে দেয়। গত চার মাসে তিন বার এ নিয়োগ পরীক্ষা পিছিয়েছে। সর্বশেষ আগামী ২৪ ডিসেম্বর আবারও নিয়োগ পরীক্ষা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

কলা অনুষদের একাধিক জ্যেষ্ঠ শিক্ষক জানান, ইলিয়াস সিদ্দিকীর নাম ফার্সি বিভাগের নিয়োগ কেলেংকারির অডিও রেকর্ডিংয়ে উঠে এসেছে৷ জামায়াতপন্থী শিক্ষক হয়ে বিভাগে ছড়ি ঘোরানোর সুযোগ পেয়ে তিনি এখন তাঁর দলীয় আদর্শের প্রার্থীকে শিক্ষক হিসেবেও নিয়োগ দিতে চান। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যসহ প্রশাসনকে সতর্ক থাকতে হবে।

ওই শিক্ষকরা জানান, ইলিয়াস সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে নানা তথ্য সম্বলিত একটি চিঠিও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের হাতে হাতে ঘুরছে। ওই চিঠিতে ইলিয়াস সিদ্দিকীর বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগের ইতিহাসসহ নানা বিষয় তুলে ধরা হয়।

ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, তৎকালীন উপাচার্য প্রফেসর নুরুদ্দিন চৌধুরীর বিশ্বস্ত ব্যক্তি হিসেবে ২০০৪ সালে ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগে যোগদান করা শিক্ষক ইলিয়াস সিদ্দিকী ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হতে চান। আগামী বছরের ৪ জানুয়ারি ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের মেয়াদ শেষ হবে। বাংলাদেশের প্রায় ১৭০০ ফাজিল ও কামিল মাদ্রাসার নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএনপি-জামায়াতপন্থী শিক্ষকের উপাচার্য হওয়ার আগ্রহ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন প্রগতিশীল শিক্ষকদের অনেকে।

নানা অভিযোগের বিষয়ে চবি ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান ড. ইলিয়াস সিদ্দিকী বলেন, ‘নিয়োগ পরীক্ষার তারিখ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নির্ধারণ করে। বিভিন্ন কারণে পরীক্ষা পিছিয়েছে প্রশাসন। ফার্সি বিভাগের নিয়োগ সংক্রান্ত অডিও ফাঁসের বিষয়ে আমাকে জড়িয়ে রিউমার ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। অথচ সেখানে আমার কোন কণ্ঠ নাই, আমি কোনো কথা বলিনি। একটি পক্ষ আমাকে বিব্রত করতেই নানা কৌশলে প্রপাগাণ্ডা ছড়াচ্ছে।’

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!