শিক্ষকের পেনশন বন্ধ, প্রধান শিক্ষককে শিক্ষা বোর্ডের তলব

চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার এনায়েতপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র সহকারী শিক্ষক নজির আহমদের পেনশন আটকে রাখার অভিযোগ উঠেছে ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক নুরুল আবছারের বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুহুল আমীন বরাবর অভিযোগ দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী ওই শিক্ষক। অভিযোগটির বিষয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে দুর্নীতি দমন কমিশন ও চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যানকে সুপারিশ করেছিলেন ইউএনও।

চিঠি প্রদানের ৭ মাস পর সেই চিঠির প্রেক্ষিতেই বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহন করেছে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড কর্তৃপক্ষ।

গত ১২ আগস্ট চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক ড. বিপ্লব গাঙ্গুলি স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক নুরুল আবছারকে শিক্ষকের পেনশন সংক্রান্ত নথি আটকে রাখার ব্যাখ্যা তলব করেন। এবং ৭ দিনের মধ্যে এ ব্যাখ্যা প্রদানের জন্য নির্দেশনা প্রদান করেন।

এ বিষয়ে হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুহুল আমীন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘এনায়েতপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক আমাকে পেনশনের কাগজপত্র অন্যায়ভাবে আটকে রাখার অভিযোগ দিয়েছেন। আমি অভিযোগটির বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন ও চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান মহোদয়কে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য অগ্রায়ন করেছি। শিক্ষাবোর্ড এ বিষয়ে স্কুলের প্রধান শিক্ষকের কাছ থেকে ব্যাখ্যা তলব করেছে।’

এর আগে এনায়েতপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র সহকারী শিক্ষক নজির আহমদ হাটহাজারী ইউএনও রুহুল আমীন বরাবর দেওয়া চিঠিতে উল্লেখ করেন, ২০১৯ সালের ৭ আগস্ট সরকারি বিধি অনুযায়ী চাকরির বয়স শেষ করে অবসরে যান সহকারী শিক্ষক নজির আহমদ। শিক্ষক কল্যাণ ফান্ডসহ পেনশনের টাকা গ্রহনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র চেয়ে ওই বছরের ১৮ আগস্ট স্কুলের প্রধান শিক্ষক বরাবর আবেদন করেন তিনি। কিন্তু প্রায় সাত মাস পার হলেও পেনশনের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সরবরাহ করেনি স্কুলের প্রধান শিক্ষক।

এনায়েতপুর উচ্চ বিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা জানান, বিদ্যালয়টির অডিট কমিটির সদস্য ছিলেন সিনিয়র সহকারী শিক্ষক নজির আহমদ। এ কমিটিতে ছিলেন বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি খোরশেদুল আলম। বিদ্যালয়টির বিভিন্ন আয়-ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন থাকায় অডিট কমিটির সদস্য হিসেবে সিনিয়র সহকারী শিক্ষক নজির আহমদ অনুমোদন প্রদান করেননি।

এছাড়া ২০১৯ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে কেন্দ্র ফি বাবদ নিয়ম বহির্ভূতভাবে দুই দফা টাকা নেন প্রধান শিক্ষক। প্রথম দফায় ৪৫০ টাকা ও পরে আবারো ৪৫০ টাকা করে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেওয়া হয়। এ বিষয়ে সিনিয়র সহকারী শিক্ষক নজির আহমদ প্রতিবাদ জানায়।

অডিট কমিটির সদস্য সজির আহমদ বিদ্যালয়ের বিভিন্ন ক্রয় ও ব্যয় সংক্রান্ত রশিদে অসংগতি ও অনিয়ম থাকায় স্বাক্ষর করেননি। এসব কারণে প্রধান শিক্ষক নুরুল আবছার ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি খোরশেদুল আলমের সঙ্গে নজির আহমদের দ্বন্দ্ব হয়।

এ ক্ষোভ থেকে বিদ্যালয় পরিচালনা সভাপতি খোরশেদ আলমের নির্দেশে প্রধান শিক্ষক নুরুল আবছার সিনিয়র সহকারী শিক্ষক নজির আহমদের পেনশন সংক্রান্ত কাগজপত্র আটকে রাখেন সাত মাস ধরে।

এ বিষয়ে এনায়েতপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র শিক্ষক নজির আহমদ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘বিদ্যালয় পরিচালনার বিভিন্ন আয়-ব্যয়ে অসংগতি থাকায় আমি কিছু রশিদে স্বাক্ষর করা থেকে বিরত থাকি। কারণ পরবর্তীতে এসব বিষয়ে সরকারিভাবে অডিট হলে আমি দোষী সাব্যস্ত হব। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক নিজেদের মত করে বিদ্যালয়ের নামে অর্থ খরচ করেছেন। অডিট কমিটির সদস্য হিসেবে আমার দায়িত্ব এসব খরচে কোনো অসঙ্গতি আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা। তারা তাদের কোনো অন্যায়ের বৈধতা আমার কাছ থেকে আদায় করতে না পারায় সাত মাস ধরে আমার পেনশনের কাগজপত্র আটকে রেখেছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘২০১৯ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে দুই দফায় কেন্দ্র ফি নেওয়া নিয়েও আমি প্রতিবাদ করেছি। কারণ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অন্যায়ভাবে বাধ্য করে দুই দফায় টাকা নেওয়া আইন পরিপন্থি। এসব বিষয়ে আমি হাটহাজারী উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও উপজেলা শিক্ষক সমিতি বরাবরে অভিযোগ প্রদান করেছি।’

এ বিষয়ে এনায়েতপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুল আবছার বলেন, ‘আমি স্কুলে চাকরি করি। স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি যা বলেন তা আমাকে মানতে হয়। শিক্ষক নজির আহমদ স্কুল কমিটির বিরুদ্ধে মামলা করেছেন তাই ওনার ভাতা আটকে রয়েছে। উনি মামলা প্রত্যাহার করলে ভাতার জন্য সুপারিশ করা হবে।’

বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি খোরশেদুল আলম বলেন, ‘নজির আহমেদ স্কুলের কমিটির বিরুদ্ধে বিভিন্ন জায়গায় মামলা, অভিযোগ করেছেন। তাই উনার ভাতার ব্যাপারে সুপারিশ করিনি। আগে উনাকে স্কুলের বিরুদ্ধে মামলা তুলে নিতে হবে । তারপর আমরা উনার ভাতার ব্যাপারে সুপারিশ করবো।’

সিএম/এমএফও

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!