শিকলবাহায় আছে বিদ্যুৎ কেন্দ্র, নেই বিদ্যুৎ

কর্ণফুলী উপজেলার শিকলবাহা ইউনিয়নে বিদ্যুৎ সরবরাহের দৃশ্য দেখে মনে হবে ‘প্রদীপের নিচে অন্ধকার’। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১২ ঘণ্টাও বিদ্যুৎ থাকে না এই ইউনিয়নে। অথচ এই ইউনিয়নেই রয়েছে ৪৩৫ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎ কেন্দ্র।

জানা যায়, চট্টগ্রামে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) সাতটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র রয়েছে। সাত কেন্দ্রের তিনটি গ্যাসভিত্তিক, দুটি পিকিং পাওয়ার প্লান্ট, একটি পানিবিদ্যুৎ কেন্দ্র ও একটি কম্বাইন্ড সাইকেল। যার উৎপাদন ক্ষমতা ১ হাজার ২৮৫ মেগাওয়াট।

দীর্ঘ দিন ধরে সেগুলো চলছিল জোড়াতালি দিয়ে। এর মধ্যে চারটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ রয়েছে। এদের মধ্যে রয়েছে শিকলবাহার বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোও। গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকায় দীর্ঘ দিন ধরে বন্ধ রয়েছে গ্যাসভিত্তিক এই তিন কেন্দ্র।

শিকলবাহায় রয়েছে ২২৫ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন একটি কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎ কেন্দ্র। এছাড়া ১৫০ মেগাওয়াট ও ৬০ মেগাওয়াট দুটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র রয়েছে। কর্ণফুলী উপজেলার জুলধা ইউনিয়নে রয়েছে ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র ইউনিট-২ এবং ৩ নম্বর ইউনিটে রয়েছে ১০৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র।

চট্টগ্রামে দৈনিক সাড়ে ৮০০ থেকে ৯০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রয়োজন। এর বিপরীতে তিন কেন্দ্র থেকে মিলছে মাত্র ২০০ থেকে ৩০০ মেগাওয়াট। ফলে বেসরকারি ৬ বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং জাতীয় গ্রিডের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। এরপরও থেকে যাচ্ছে ঘাটতি। ফলে বাধ্য হয়ে প্রতিদিন ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা করে লোডশেডিং করা হচ্ছে বলে দাবি করেছে পিডিবি।

এ বিষয়ে পটিয়া বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘পিডিবির বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে যতটুকু পাওয়া যাচ্ছে তার বাইরে বেসরকারি কেন্দ্র এবং জাতীয় গ্রিড থেকে প্রাপ্ত বিদ্যুৎ দিয়ে চাহিদা মেটানো হচ্ছে। আমরা চেষ্টা করছি কিছুদিনের মধ্যে শিকলবাহাকে আলাদা জোন করতে। তখন শিকলবাহায় লোডশেডিং কমে যাবে। শিকলবাহায় বিদ্যুৎ নিয়ে সমস্যা যে নেই তা বলবো না। কারণ স্থানীয় চেয়ারম্যান জনগণের সুবিধার জন্য বিষয়টি আমাদেরকে অনেকদিন যাবৎ বলে আসছেন। তাই শিকলবাহা ফিডার ব্যবস্থা আলাদা করা হলে বিদ্যুৎ সরবরাহ আগের তুলনায় অনেক ভালো সার্ভিস দিবে। সে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।’

পিডিবি সূত্র জানায়, চট্টগ্রামে গ্যাসনির্ভর তিন বিদ্যুৎ কেন্দ্র পুরোপুরি সচল রাখতে প্রয়োজন ১৪৩ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। এর মধ্যে শিকলবাহা ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র সচল রাখতে প্রয়োজন ৩৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস ও শিকলবাহার ৬০ মেগাওয়াটের অপর বিদ্যুৎ কেন্দ্রে প্রয়োজন ১৭ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস।

গত বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে শিকলবাহার দুই বিদ্যুৎ কেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেয় কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (কেজিডিসিএল)।

কেজিডিসিএল ম্যানেজার অনুপম দত্ত বলেন, ‘সংকটের কারণে সরকারি সব ক’টি কেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কবে নাগাদ বন্ধ সরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহ করা যাবে তা বলা যাচ্ছে না।’

কেজিডিসিএল সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তারা বলছেন, এই পরিস্থিতির উপর কারও হাত নেই। এটি বৈশ্বিক সংকট। কবে এই সংকটের সুরাহা হবে তা কেউ জানে না।

শিকলবাহা মাষ্টারহাটের আলমগীর কবির বলেন, ‘যাহা লইয়া গর্ব করা হয়, একটু তলাইয়া ভাবিলে তাহা কখনো-কখনো লজ্জার কারণও হইতে পারে। হয়তো আমরা শিকলবাহাবাসী গর্ববোধ করে বলি আমাদের এলাকায় বিদ্যুৎ কেন্দ্রে রয়েছে। কিন্তু বিদ্যুৎকেন্দ্রের আশেপাশের গ্রামে বিদ্যুৎ থাকে না।’

প্রসঙ্গত, গত বছরের ১০ ডিসেস্বর চট্টগ্রামের শিকলবাহা এলাকায় নবনির্মিত ২২৫ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এ কেন্দ্রের প্রধান প্রকৌশলী বিজয় ভবন দত্ত জানান, ‘খরচ বেশি পড়ে যাচ্ছে। তাই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এই কেন্দ্র চালু রাখতে ৪৬ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস প্রয়োজন।’

এমএফও

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!