শিকলবাহার সড়কে প্রশিক্ষিত বিশেষ বাহিনীর হাতেই খুন হন শ্যামলীর বাসচালক (ভিডিও)

চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ-বন্দর) মোস্তাইন হোসাইন নিশ্চিত করছেন, ঘটনার সময়ে তাদের কোনো টিম সেখানে দায়িত্বরত ছিল না। চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার নুরে আলম মিনাও বলছেন, জেলা ডিবির কোনো টিম ওই দিন অভিযানে যায়নি। তাহলে কারা গেল?

চট্টগ্রামের শিকলবাহায় গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) পরিচয়ে কক্সবাজার থেকে আসা শ্যামলী পরিবহনের বাসচালক জালালকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় প্রশিক্ষিত বিশেষ একটি বাহিনীর সম্পৃক্ততা পেয়েছে পুলিশ।

জালালকে জেলার পটিয়া থানা এলাকা থেকে ধরে এনে সিএমপির কর্ণফুলী থানা এলাকায় মারধরের ঘটনা ঘটেছে। একারণে জেলা পুলিশ ও কর্ণফুলী থানা পুলিশের পাশাপাশি নগর গোয়েন্দা পুলিশও বিষয়টির তদন্তে নামে। তিনটি ইউনিটের তদন্তেই বিশেষ একটি প্রশিক্ষিত বাহিনীর তল্লাশির নামে মারধরের পর বাসচালক জালাল মারা গেছে বলে নানা তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে তারা জানতে পেয়েছে।

এরপর সিএমপি কমিশনার মাহবুবুর রহমানকে ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরে গোয়েন্দা পুলিশ ও কর্ণফুলী থানা পুলিশ। ঘটনার বিস্তারিত জেনে সিএমপি কমিশনার আইজিপিকে বিষয়টি অবহিত করেন বুধবার সন্ধ্যায়। এরপরই নিহত বাস চালক জালালের ছোট ভাই বাদি হয়ে অজ্ঞাত কয়েকজনকে আসামি করে কর্ণফুলী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। অন্যদিকে এ ঘটনার প্রতিবাদে বাংলাদেশ পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের ডাকা ৪৮ ঘণ্টার ডাকা ধর্মঘট জেলা প্রশাসকের মধ্যস্থতায় ১২ ঘন্টায় কমিয়ে আনা হয়।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, এর আগে কক্সবাজার থেকে গাজীপুরমুখী শ্যামলী পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাস গত সোমবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে শান্তিরহাট এলাকা অতিক্রম করার পর একটি পেট্রোল পাম্পের কাছে সাদা পোশাকে থাকা একদল লোক ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে বাসটি থামায়। তারপর সেখান থেকে কর্ণফুলীর ভেল্লাপাড়া ব্রিজের এ পাশে এনে গাড়িতে উঠে ইয়াবা আছে বলে তল্লাশি চালায় তারা।

হ্যান্ডক্যাফ, ওয়্যারলেস সেটসহ গাড়িতে ওঠা ডিবি পরিচয়ধারী চারজন লোক তল্লাশির একপর্যায়ে গাড়িচালক জালাল উদ্দিনকে (৪৪) বাস থেকে নামিয়ে অদূরে নিয়ে গিয়ে মারধর করে। একপর্যায়ে লাথি মারতে মারতে অন্ধকারাচ্ছন্ন জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়। কয়েক দফা নির্যাতনের পর তাকে আধমরা করে বাসে তুলে দিয়ে সাদা মাইক্রোবাসটি চলে যায়। এরপর অন্য একটি বাসের চালক রাত আড়াইটার দিকে মুমূর্ষু জালালকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে আনলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

তদন্তে যুক্ত পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, সোমবার রাতে ঘটনার সময় মোট একটি ‘নোহা’ ও দুটি ‘হাইস’ গাড়ি অভিযানে অংশ নেয়। তাদের ব্যাকআপ টিম হিসেবে দুটি নিশান জিপও অদূরে দাঁড়িয়ে ছিল। এঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে হাইওয়ে পুলিশের বক্তব্যেও।

এ ঘটনায় বুধবার বিকালে নিহত জালাল উদ্দিনের ছোট ভাই জুয়েল হোসেন কর্ণফুলী থানায় মামলাটি করেছেন। তবে নির্দিষ্ট কারও নাম উল্লেখ না করে অজ্ঞাত কয়েকজনকে আসামি করা হয়েছে মামলায়।

নগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘সন্ধ্যায় মামলাটি তদন্তের জন্য নগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের পরিদর্শক আফতাব হোসেনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। মামলার তদন্ত শুরু হয়েছে।’

এদিকে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে বাসচালক জালালকে পিটিয়ে হত্যা করার অভিযোগ উঠলেও নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ কমিশনার (দক্ষিণ-বন্দর) মোস্তাইন হোসাইন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘ওই সময়ে আমাদের ডিবির কোনো টিম সেখানে দায়িত্বরত ছিল না। এরপরও আমি নিজেও বিষয়টি তদন্ত করে দেখেছি, ঘটনার বিস্তারিত আমি পুলিশ কমিশনার স্যারকে জানিয়েছি। এখন সিটি ইউনিট তদন্ত করে ঘটনার রহস্য উদঘাটন করবে।’

কর্ণফুলী থানার ওসি আলমগীর মাহমুদ বলেন, ‘এ ঘটনায় নিহত বাসচালকের ভাই অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেছেন। প্রাথমিক অনুসন্ধান শেষে আমরা তিনটি গাড়িতে করে ডিবি পরিচয়ে এ হত্যাকাণ্ড ঘটানোর সত্যতা পেয়েছি। তবে আসলে কারা এ ঘটনা করেছে তদন্ত কর্মকর্তা তা উদঘাটন করবেন।’

চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার নুরে আলম মিনাও বলেছেন তাদের জেলা ডিবির কোনো টিম ওই দিন অভিযানে যায়নি।

চট্টগ্রাম জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি মো. মুছা চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘বাসচালক জালাল হত্যার বিচারের দাবিতে আমাদের আন্দোলন অব্যাহত রয়েছে। হ্যান্ডকাফ, ওয়্যারলেস সেটসহ গাড়িতে ওঠে প্রকাশ্যে রাস্তার ওপর যেভাবে ইয়াবা খোঁজার নামে নির্যাতন করা হয়েছে সেটি সাধারণ কোনো মানুষ বা অপরাধীর কাজ নয় সেটা নিশ্চিত। এখন নিজেদের ডিবি পরিচয়ে দিয়ে যে হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে সেটা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোনো সংস্থাই করেছে। এখন যেহেতু মামলা হয়েছে তদন্তকারী কর্মকর্তাই বিষয়টির সুষ্ঠু তদন্ত করে আসল রহস্য বের করুক।’

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!