শাটলে রাজনীতি বন্ধ হবে কি! সংশয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীরা

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শাটল ট্রেনে বগিভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। ট্রেনভিত্তিক দ্বন্দ্ব-সংঘাত নিরসনে গৃহীত এ পদক্ষেপকে চবি ছাত্রলীগ স্বাগত জানিয়ে এখন থেকে হলভিত্তিক রাজনীতি শুরুর কথা বললেও, সাধারণ শিক্ষার্থীরা ঘোষিত সিদ্ধান্তের কার্যকারিতা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) ছাত্রলীগের বগিভিত্তিক বিভিন্ন গ্রুপের নামে চিকামারা, টি-শার্ট, প্ল্যাকার্ড, স্লোগান সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) সকালে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক মো. আহসান হাবীব স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখায় বগি নিয়ে রাজনীতি নিষিদ্ধ। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের অনুমতিক্রমে এ ধরনের কার্যক্রম সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা হলো। আদেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে যথাযথ সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ২২ জুলাই বগিভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। এরপর শাটল ট্রেন থেকে বগিভিত্তিক নাম ও স্লোগান মুছে দেয়া হয়। কমে আসে সিট দখলকেন্দ্রিক সাধারণ শিক্ষার্থী ও উপ-গ্রুপসমূহের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব। শাটল ট্রেনকেন্দ্রিক ঝামেলার কিছুটা সমাধান হলেও ক্যাম্পাসে বগিভিত্তিক গ্রুপের আধিপত্য থেকে যায়। যার রেশ ধরে আধিপত্য বিস্তার করতে কিছুদিন পরপরই সংঘর্ষে জড়ায় উপ-গ্রুপগুলো। দীর্ঘ ১৯ মাস কমিটিবিহীন থাকার পর চলতি বছরের ১৪ জুলাইয়ে নব-কমিটির ঘোষণা দেয় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। এতে রেজাউল হক রুবেলকে সভাপতি এবং ইকবাল হোসেন টিপুকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে এক বছরের জন্য মনোনীত করা হয়। এরপর থেকে হলভিত্তিক রাজনীতি সক্রিয় করার তোড়জোড় চালায় সংগঠনটি। অস্ত্র ও মাদকমুক্ত ক্যাম্পাস গড়ে তোলার পাশাপাশি বুদ্ধিভিত্তিক ও শিক্ষাবান্ধব রাজনীতির ঘোষণা দেয় নতুন কমিটি। কিন্তু একইসঙ্গে গ্রুপভিত্তিক রাজনীতিও চলতে থাকে। যা সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাপক আকার ধারণ করে। আবাসিক হল, একাডেমিক ভবন, ক্যান্টিন, গুরুত্বপূর্ণ সড়কসহ ক্যাম্পাসের সর্বত্র বিভিন্ন গ্রুপের নাম ও স্লোগান লেখার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।

কেন্দ্রীয় নির্দেশের সাথে একাত্মতা জানিয়ে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেল বলেন, আমাদের মূল লক্ষ্য ছিল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার পাশাপাশি ক্যাম্পাস থেকে মাদক ও অস্ত্রের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা। সাথে নেতাকর্মীদের মধ্যে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন তৈরি করা। বগিভিত্তিক রাজনীতিকে বিদায় জানিয়ে হলভিত্তিক রাজনীতির সূচনা করা।

সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসাইন টিপু বলেন, বগিভিত্তিক রাজনীতিকে বিদায় জানিয়ে হলভিত্তিক রাজনীতির দিকে এগুচ্ছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ। এজন্য সবার আন্তরিক সহযোগিতা কাম্য।

শিক্ষার্থীরা জানান, এপিটাফ, একাকার, সিক্সটি নাইন, উল্কা, ভিএক্স, বিজয়, কনকর্ড, ককপিট, খাইট্যা খা, সাম্পান ও রেড সিগন্যাল নামের বিভিন্ন বগি সংগঠনের সদস্যরা এখনো শাটল ট্রেনে তাদের আধিপত্য বজায় রেখেছে। এসব সংগঠনের সদস্যরা ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত বলে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ।

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ছাত্রলীগের একাধিক সক্রিয় কর্মী জানান, কয়েক দশক ধরে চলে আসা ছাত্রলীগের বগিভিত্তিক রাজনীতি পুরোপুরি বন্ধ করা সম্ভব না। পদপ্রাপ্তরা হয়তো এটা মেনে নেবেন। কিন্তু পদবঞ্চিতরা তা মানবে কি না সন্দেহ রয়েছে।

চট্টগ্রাম মহানগরী থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শাটল ট্রেনে প্রতিদিন প্রায় ১৯ হাজার শিক্ষার্থী যাওয়া-আসা করে। এই শাটল ট্রেনে বগিভিত্তিক কয়েকটি গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে ছাত্রলীগের।

বগিভিত্তিক এসব গ্রুপের মধ্যে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে মাঝেমধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়, যা বেশিরভাগ সময়ই সংঘাতে রূপ নেয়।

সিআর

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!