পুকুরচুরি/ এক ফুটোতেই ধসে গেল শত কোটি টাকার পতেঙ্গা রিং রোড!

চট্টগ্রামের পতেঙ্গার সমুদ্র পাড়ে শহর রক্ষায় জন্য নির্মাণাধীন ‘উপকূলীয় বাঁধ কাম আউটার রিং রোডে’র একটি অংশ ধসে পড়েছে। বহুল আলোচিত এ প্রকল্প নিয়ে নগরবাসীর যেমন উচ্ছ্বাস ছিল, তেমনি এ ঘটনার পর সিডিএর কাজের মান নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। তবে প্রকল্প পরিচালক সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস্ বলছেন, গাইডওয়াল থাকার পরও সামান্য একটা ফুটো থাকায় সেটা দিয়ে বালি জোয়ারের পানিতে বালি চলে যাওয়ায় সামান্য ওয়াকওয়ে ধসে গেছে। তবে সেটি নির্মাণাধীন যে দুই কিলোমিটার সড়কের কাজ বাকি, তার মধ্যে পড়ায় তা দ্রুত সময়ের মধ্যেই সংস্কার করা হবে।

শনিবার (১৩ জুলাই) সকালে অব্যাহত ভারী বর্ষণ ও অস্বাভাবিক জোয়ারে পানির তোড়ে নগরীর পতেঙ্গা থানার খেজুরতলার এলাকার সাগর পাড়ের আউটার রিং রোডের ওয়াকওয়ের কয়েকশত ফুট ধসে যায়। বিষয়টি ছবি তুলে ফেসবুকে দিয়ে অনেকে সিডিএর আলোচিত প্রায় ২ হাজার ৪২৬ কোটি টাকার এ প্রকল্পের কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

নগরবাসীর এমন সমালোচনার মুখে দুপুরে প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করেন সিডিএর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। সেখান থেকে মানুষজনকে সরিয়ে দিয়ে ওয়াকওয়েটি সংস্কারের কাজ শুরুর উদ্যোগ নেয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান স্পেকট্রা ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন।

প্রসঙ্গত, জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা) ২০০৫ সাল থেকে পতেঙ্গা থেকে ফৌজদারহাট পর্যন্ত বেড়িবাঁধ কাম আউটার রিং রোড নির্মাণের জন্য ২০০৭ সালে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে চুক্তি করে জাইকা। ২০১৬ সালের জুলাইয়ে চার লেনের এ সড়কটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়। আড়াই হাজার কোটি টাকার এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। উপকূলীয় বাঁধ কাম আউটার রিং রোড নির্মাণ নামে এ প্রকল্পের আওতায় ১৭ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ হবে। এর মধ্যে ১৫ দশমিক ২০ কিলোমিটার মূল ও ২ দশমিক ১৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক। এছাড়া প্রায় সাড়ে ৫ কিলোমিটার ওয়াকওয়ে তৈরি করা হবে।

শুরুতে এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ৮৬৫ কোটি ২৮ লাখ ৬০ হাজার টাকা। দুই বার সংশোধনের পর বর্তমানে ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৪২৬ কোটি ১৪ লাখ ৯৫ হাজার টাকা। এর মধ্যে বাংলাদেশ সরকার ১ হাজার ৭২০ কোটি ১১ লাখ ৮০ হাজার ও জাইকার সহায়তা ৭০৬ কোটি টাকা। ইতোমধ্যে প্রকল্পের বেশিরভাগ কাজ শেষ হয়েছে। ২০১৯ সালে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা।

স্থানীয় বাসিন্দা জাবেদুল ইসলাম শিপন বলেন, ‘শুরু থেকেই সিডিএর এ কাজের মান নিয়ে নানা প্রশ্ন ছিল। সাগরের পাড় ঘেঁষে মূল বেড়িবাঁধের পাশে যে ওয়াকওয়েটি নির্মাণ করা হয়েছিল, সেটি সকালে জোয়ারের পানিতে কয়েকশত গজ ধসে যায়। মূলত গাইডওয়াল দিয়ে সেখানে যেনতেনভাবে বালি ভরাট করায় বালি পানির তোড়ে সরে যায়। ফলে সিসি ঢালাই করা ওয়াকওয়ে ধসে পড়ে।’ ওয়াকওয়েটা সিসি ঢালাই না করে আরসিসি ঢালাই করা উচিত ছিল বলেও মন্তব্য করেন স্থানীয় এ বাসিন্দা।

প্রকল্পের পরিচালক ও সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেন, ‘ওয়াকওয়ের পাশে গাইডওয়াল ছিল। তবে তাতে একটি ফুটো হয়ে জোয়ারের পানি ঢুকে যায়। এতে বালি চলে গিয়ে ওয়াকওয়েটা ধসে গেছে। আর আরসিসি ঢালাইয়ের যে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে সেটা সম্ভব নয়। কেননা এটা ওয়াকওয়ে। আরসিসি ঢালাই হলে মানুষ গরমে হাঁটতে পারবে না। সবকিছু বিবেচনায় রাখতে হবে। মনগড়া কথা বললেই হবে না।’

তবে নগর পরিকল্পনাবিদ প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেনের ভাষ্য ভিন্ন। তিনি বলেন, ‘সাধারণত সাগরপাড় ঘেঁষে এসব প্রকল্পে অনেক সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়। এ ধরনের কাজগুলো পাইলিংয়ের ওপর হয়। এছাড়া অতিরিক্ত ভার বহন করার প্রয়োজন হলে সেখানে প্রিকাস্ট কংক্রিট পাইল ব্যবহার করা হয়। কিন্তু ধসে পড়া ওয়াকওয়েটির ক্ষেত্রে এসব করা হয়নি বলেই তা ধসে পড়েছে।’

এ অভিযোগের প্রেক্ষিতে প্রকল্প পরিচালক বলেন, ‘এটি আন্তর্জাতিকমানের প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে কাজ করানো হচ্ছে। সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে আর মেনেই করা হচ্ছে। এখানে তো গাইডওয়াল ধসে পড়েনি। ওয়ালে একটা-দুটো ফুটো হওয়ায় জোয়ারের পানির তোড়ে বালি চলে যাওয়ায় এরকম হয়েছে। হয়তো ওখানে হয়েছে। অন্য কোনো স্থানে তো এরকম হয়নি।’

এ প্রসঙ্গে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে সিডিএ চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ বলেন, ‘বিষয়টা আমি জেনেছি। আগামীকাল পতেঙ্গায় পরিদর্শনে যাব। তারপর করণীয় কি তা ঠিক করব।’

এ প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দোভাষ বলেন, ‘আমি তো নতুন দায়িত্ব নিয়েছি। এ প্রকল্পের কাজ আগের চেয়ারম্যানের সময় করা। এরপরও দুর্নীতির বিষয়টি খতিয়ে না দেখে বলতে পারব না। সবকিছুরই খোঁজ নেবো। দুর্নীতি হলে কেউ পার পাবে না।’

এডি/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!