লড়াকু মানসিকতার সাথে রশিদ-নবীই আফগানের ভরসা

আফগানরা যেন ‘ফিনিক্স পাখি।’ ধ্বংসস্তুপে দাঁড়িয়ে অদম্য স্পৃহায় যারা লড়ে যাচ্ছে বেঁচে থাকার অভিপ্রায়ে। যুদ্ধবিধ্বস্ত ভূমিতে ক্রিকেট আফগানিস্তানের জন্য আশীর্বাদই বটে। ক্রিকেটই স্বপ্ন দেখাচ্ছে পর্বত ঘেরা দেশটিকে উঠে দাঁড়ানোর। ক্রিকেট এক সুতোয় গেঁথে দিয়েছে আফগানদের।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজেদের জাত চেনাতে বেশি সময় নেয়নি আফগানিস্তান। ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি সাফল্যের পর ২০১৭ সালে পেয়েছে ১২তম টেস্ট খেলুড়ে দেশের মর্যাদা। অবশ্য আফগানদের জন্য ক্রিকেট নতুন নয়। ১৯ শতকের মধ্যভাগ থেকে ক্রিকেট খেলছে তারা। আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ড গঠিত হয় ১৯৯৫ সালে এবং আইসিসির সদস্যপদ লাভ করে ২০০১ সালে।

২০০৯ সালে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম একদিনের ম্যাচে অভিষেক হয় আফগানিস্তানের। ২০১৮ সালে ভারতের বিপক্ষে খেলে প্রথম টেস্ট। টি-টোয়েন্টি অভিষেক হয় ২০১০ সালে, আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে।

আইসিসির সর্বশেষ প্রকাশিত টেস্ট র‌্যাংকিংয়ে সেরা দশে জায়গা হয়নি আফগানিস্তানের। ওয়ানডেতে অবশ্য জিম্বাবুয়ে ও আয়ারল্যান্ডের মতো দলকে টপকে দশম স্থানে আছে তারা। টি-টোয়েন্টিতে পেছনে ফেলেছে শ্রীলঙ্কা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, বাংলাদেশের মতো দলকে। টি-টোয়েন্টিতে আফগানদের র‌্যাংকিং সপ্তম।

ইংল্যান্ড ও ওয়েলস বিশ্বকাপের এক মাস আগে দলে একটি বড় পরিবর্তন এনেছে আফগানিস্তান। আসগর আফগানকে সরিয়ে অধিনায়ক করা হয়েছে গুলবাদীন নাঈবকে। ক্রিকেটের তিন ফরম্যাটে (২ টেস্ট, ৫৬ ওয়ানডে ও ৪৬টি-টোয়েন্টি) আফগানিস্তানকে চার বছর নের্তৃত্ব দিয়েছেন আসগর। আফগানরা অভিষেক টেস্টও (আইরিশদের বিপক্ষে) জিতেছে তার নেতৃত্বে।
লড়াকু মানসিকতার সাথে রশিদ-নবীই আফগানের ভরসা 1
বিশ্বকাপের পথে: দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বকাপের মঞ্চে আফগানিস্তান। ২০১৫ অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড বিশ্বকাপে ‘এ’ গ্রুপে পড়েছিল তারা। ৬ ম্যাচে জয় পেয়েছিল মাত্র একটিতে। র্যাঙ্কিংয়ে পিছিয়ে থাকায় ২০১৯ বিশ্বকাপের মূল মঞ্চের টিকেট পেতে আফগানদের পেরিয়ে আসতে হয়েছে বাছাইপর্ব। কোয়ালিফায়ার ফাইনালে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে মূল পর্বের টিকেট কাটে আফাগানিস্তান। অবশ্য বাছাইপর্বের দুই ফাইনালিস্ট দলই টিকেট পেয়েছে বিশ্বকাপের।

যাদের ওপর স্পটলাইট: বর্তমানে আফগানিস্তানের সবচেয় বড় তারকা রশিদ খান ও মোহাম্মদ শাহজাদ। আইপিএল খেলে দারুণ হাত পাকিয়েছেন উভয়ে। দেশের হয়ে রশিদ ৫৭ ম্যাচে ৩.৯০ ইকোনমি রেটে নিয়েছেন নিজেদের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ১২৩ উইকেট।

মারকুটে ব্যাটসম্যান শাহজাদ ৮০ ম্যাচে ৩৩.৯৮ গড়ে করেছেন ২৬১৭ রান। ১৪ হাফসেঞ্চুরির পাশাপাশি সেঞ্চুরি করেছেন ৫টি। এছাড়া অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার মোহাম্মদ নবীর ওপরও চোখ থাকবে বিশেষভাবে। ১১১ ম্যাচে ২৯.১৪ গড়ে ৩৫৬৫ রান আছে তার ঝুড়িতে। উইকেট আছে ১১৮টি।

গেম প্ল্যান: ২০১৫ বিশ্বকাপের পর থেকে আফগানদের প্রধান অস্ত্র হয়ে উঠেছে স্পিনাররা। মুজিব-নবী-রশিদ এই ত্রয়ীর ওপরই আফগানদের যত ভরসা। অবশ্য ইংলিশ কন্ডিশন তেমন পরিচিত নয় তাদের জন্য। তবে এবারের আসরে অাফগানদের প্রধান টার্গেট শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশ।

প্রস্তুতি: ইংলিশ সফরে এসেই প্রস্তুতি ম্যাচে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে হেরেছে আফগানিস্তান। রোববার (১৯ মে) বেলফাস্টে দুই ম্যাচের সিরিজের প্রথম ম্যাচে ৭২ রানে হারে তারা।

২০১৯ বিশ্বকাপে আফগানিস্তান: ১৯৯২ বিশ্বকাপের পর এবারই প্রথম রাউন্ড রবিনে খেলা হবে। শুরুতেই আফগানদের মোকাবেলা করতে হবে অস্ট্রেলিয়ার মতো পরাশক্তিকে। ০১ জুন বিস্ট্রলের কাউন্টি গ্রাউন্ডে প্রথম ম্যাচ খেলবে রশিদ-নবীরা। অাফগানরা বাংলাদেশের মুখোমুখি হবে ২৪ জুন, সাউদ্যাম্পটনে। নিজেদের শেষ ম্যাচে তাদের প্রতিপক্ষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ম্যাচটি হবে ৪ জুলাই, লিডসের হ্যাডিংলিতে।

২০১৯ বিশ্বকাপ স্কোয়াড: গুলবাদীন নাঈব (অধিনায়ক), মোহাম্মদ শাহজাদ (উইকেটরক্ষক) নুর আলী জাদরান, হযরতউল্লাহ জাজাই, রহমত শাহ, আসগর আফগান, হাশমতউল্লাহ শহিদী, নাজিবুল্লাহ জাদরান, সামিউল্লাহ শিনওয়ারী, মোহাম্মদ নবী, রশিদ খান, দাওলাত জাদরান, আফতাব আলম, হামিদ হাসান, মুজিব উর রহমান। কোচ-ফিল সিমন্স (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!