লাল কার্ডের ছড়াছড়ির ম্যাচে চেন্নাইকে হারালো বসুন্ধরা কিংস

সাধারণত লাল রঙের জার্সি আর মোজা পড়ে ম্যাচ খেলে বসুন্ধরা কিংস। বৃহস্পতিবার এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্লাব কাপের টিকে থাকার লড়াইয়ে নামা চেন্নাই সিটির বিপক্ষেও ব্যত্যয় হয়নি লাল সাদার বসুন্ধরার জার্সির। কিন্তু ম্যাচে যতো না বসুন্ধরার লাল জার্সি মন ও দৃষ্টি কেড়েছে তার চেয়ে ঢের বেশি কেড়েছে রেফারির পকেটে থাকা ছোট লাল রঙের কার্ডটি। ঘটনাবহুল ম্যাচে শ্রীলঙ্কান রেফারি লাকমল ভিরাক্কোডি লাল কার্ডের ব্যবহার করেছেন চারবার, যার দুটি চেন্নাইয়ের দুই খেলোয়াড় এবং অন্য দুটি দু’দলের দুই কোচকে। ওহ, সেই সাথে ছিল রেফারির অন্য পকেটে থাকা হলুদ কার্ডেরও চারবারের ব্যবহার।

কার্ডের ছড়াছড়ি আর আগুনে উত্তাপের লড়াইয়ে ৯ জনের দলে পরিণত হওয়া চেন্নাই সিটি এফসিকে ৩-২ গোলে হারিয়ে শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্লাব কাপে সেমিফাইনালের স্বপ্ন টিকিয়ে রাখল বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন বসুন্ধরা কিংস।

এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে গ্রুপ ‘বি’তে চেন্নাইকে হারানোয় বসুন্ধরা পেল ৩ পয়েন্ট। শেষ চারে যেতে হলে নিজেদের শেষ গ্রুপ ম্যাচে মালয়েশিয়ার তেরেঙ্গানু এফসিকে হারাতেই হবে কিংসদের।

গোকুলম কেরালার বিপক্ষে হারা ম্যাচের একাদশে বড় এক পরিবর্তন এনে বৃহস্পতিবার দল সাজান বসুন্ধরা কোচ অস্কার ব্রুজেন। জাতীয় দলের চার খেলোয়াড় বিপলু আহমেদ, রবিউল হাসান, ডিফেন্ডার ইয়াসিন খান ও সুশান্ত ত্রিপুরা আর দুই সেন্ট্রাল ডিফেন্ডারের সঙ্গে অস্কার দলে রেখেছিলেন পাঁচ মিডফিল্ডারকে। ফরোয়ার্ড খেলিয়েছেন তিনজন।

পরিবর্তিত একাদশে দ্রুতই এসেছে ফল। ষষ্ঠ মিনিটে মাঝমাঠ থেকে ডি-বক্সে ক্রস করেছিলেন অধিনায়ক ড্যানিয়েল কলিন্দ্রেস। তাতে হেড নেন কিরগিজ মিডফিল্ডার বখতিয়ার দুশানবে। সেই হেড মাটিতে পড়ার আগেই বল বুক দিয়ে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে বাঁ-পায়ের দারুণ শটে গোল আদায় করেন বসুন্ধরার হয়ে দ্বিতীয় ম্যাচে নামা লেবানিজ জাতীয় দলের ফরোয়ার্ড মোহাম্মদ কুদ জালাল।

ম্যাচের ২৪ মিনিটে ঘটে যায় অদ্ভুত এক ঘটনা। হঠাতই রেফারির উপর খেপে যান চেন্নাইয়ের জাপানি মিডফিল্ডার কাতসুমি ইয়ুসা। খেপে গিয়ে লাথি মেরে ফেলে দেন মাঠের বাইরে থাকা রেফারির টেবিল। এক পর্যায়ে তেড়ে যান রেফারির দিকেও। থমথমে পরিবেশে খেলা বন্ধ থাকে ১২ মিনিট। সেসময় খেলা ছেড়ে উঠে যাওয়ার সিদ্ধান্তও নেয় চেন্নাই।

এক ফাউলকে কেন্দ্র করে রেফারির সঙ্গে কাতসুমির বাকবিতণ্ডা। কাতসুমিকে তখন ‘চায়নাম্যান’ বলে ডাক দিয়েছিলেন শ্রীলঙ্কান রেফারি লাকমল ভিরাক্কোডি। তাতেই লঙ্কাকাণ্ড! বাধ্য হয়ে হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে নেপালি ম্যাচ কমিশনার মহেশ বিস্তাকে। পরে কাতসুমিকে লাল কার্ড দেখিয়ে শুরু হয় খেলা।

উত্তেজনার সময় আরেক অদ্ভুত ঘটনা ঘটিয়েছেন অস্কার ব্রুজেন। খেলোয়াড়দের শান্ত করতে মাঠে ঢুকে যান বসুন্ধরার স্প্যানিশ কোচ। ফুটবলের নিয়ম অনুযায়ী যেখানে কোনো কোচ ডাগআউটের নির্ধারিত সীমানার বাইরে যেতে পারেন না, সেখানে অস্কারের মাঠে ঢুকে যাওয়া জন্ম দিয়েছে প্রশ্নের।

১০ জনের দল নিয়েও ৪৩ মিনিটে সমতায় ফেরে চেন্নাই। ডি-বক্সের বামপ্রান্ত দিয়ে জোড়াল শট নিয়েছিলেন ফরোয়ার্ড মাশরুর শেরিফ। তার শট বসুন্ধরা গোলরক্ষক আনিসুর রহমান জিকোর কাছে প্রতিহত হলেও পুরোপুরি বিপদমুক্ত হয়নি। ফিরতি বলে আলতো শটে গোল তুলে নেন অধিনায়ক পেদ্রো হাভিয়ের ক্রুজ।

প্রথমার্ধের অতিরিক্ত সময়ে আবারও উত্তেজনা। এবার চেন্নাই ডাগআউটে তেড়ে যান বসুন্ধরা কোচ অস্কার ব্রুজেন। জড়িয়ে পড়েন চেন্নাই কোচ মোহাম্মদ আকবরের সঙ্গে হাতাহাতিতে। ফলে দুই কোচকেই লাল কার্ড দেখান শ্রীলঙ্কান রেফারি লাকমল। বিরতির সময় রেফারিদের কঠোর নিরাপত্তায় বাইরে নিয়ে যান পুলিশ সদস্যরা।

দশ জনের চেন্নাইকে পরে চেপে ধরে ৫৯ মিনিটে আবারও এগিয়ে যাওয়া বসুন্ধরা। কর্নার থেকে পাওয়া বল ডি-বক্সে কলিন্দ্রেসকে বাড়িয়ে দেন ইমন মাহমুদ। অধিনায়ক উড়িয়ে ক্রস দিয়ে বল ফেলেন গোলবার বরাবর। বারে কাছে ওঁত পেতে থাকা বখতিয়ার দুশানবে ভুলে করেননি। হেডে বল জড়ান জালে।

দুটি লাল কার্ডের ফলে নয়জনের দলে পরিণত হওয়া চেন্নাই সিটির বিপক্ষে শেষ মুহুর্তের গোলে জয় পায় বসুন্ধরা কিংস। ছবি: আজীম অনন
দুটি লাল কার্ডের ফলে নয়জনের দলে পরিণত হওয়া চেন্নাই সিটির বিপক্ষে শেষ মুহুর্তের গোলে জয় পায় বসুন্ধরা কিংস। ছবি: আজীম অনন

ম্যাচের ৬৭ মিনিটে চেন্নাই গোলরক্ষককে একা পেয়েও ফায়দা নিতে পারেননি মোহাম্মদ জালাল। ৬৯ মিনিটে লাল কার্ড দেখেন আরেক চেন্নাই ফুটবলার রবের্তো সুয়ারেজ। ফাউল করে স্প্যানিশ ডিফেন্ডার দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখলে ৯ জনের দলে পরিণত হয় চেন্নাই।

নয় জনের দল নিয়েও ৭১ মিনিটে দ্বিতীয়বারের মতো সমতায় ফেরে চেন্নাই। চেন্নাই গোলরক্ষকের বাড়ানো বল নিজেদের ডি-বক্সে পড়লে ঠিকমত হেড করতে পারেননি ডিফেন্ডার বিশ্বনাথ ঘোষ। এসময় খানিকটা উপরে উঠে এসেছিলেন গোলরক্ষক জিকো। গোলবার ফাঁকা পেয়ে ভলি করেন মাশরুর শেরিফ। জিকোর মাথার উপর দিয়ে বল ঢুকে যায় জালে।

পরে ৮২ থেকে ৮৪ মিনিটের মধ্যে দুই সহজ সুযোগ হাতছাড়া হওয়ার পর ৮৮ মিনিটে জয়সূচক গোলটি তুলে নেয় বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন বসুন্ধরা কিংস। ২৫ গজ দূর থেকে শট নিয়েছিলেন রবিউল হাসান। তার শট গোলরক্ষকের হাতে লেগে ফিরলেও ফিরতি শটে বল জালে জড়িয়ে জয় নিশ্চিত করেন মোহাম্মদ জালাল কুদ।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!