লালদীঘি মসজিদের তিন শৌচাগার ইজারা দিয়ে টাকা চায় চসিক, মুসল্লিদের ক্ষোভ

চট্টগ্রামের কোতোয়ালী এলাকায় অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী লালদিঘী জামে মসজিদ। প্রাচীন এ মসজিদের উত্তর পাশে রয়েছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মালিকানাধীন তিনটি গণশৌচাগার। এ শৌচাগারগুলো দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার করে আসছেন নামাজ পড়তে আসা মুসল্লিরা। সম্প্রতি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন থেকে বাণিজ্যিকভাবে গণশৌচাগার হিসেবে ব্যবহারের জন্য দরপত্র দেওয়া হয়। তবে এতে মসজিদের পবিত্রতা বিনষ্ট হওয়ার আশঙ্কায় বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ছেন মসজিদে আসা মসুল্লিরা।

শুধু তাই নয়, ধর্মীয় স্থাপনার ভেতরে এ শৌচাগার ব্যবহার করতে দিনের চব্বিশ ঘণ্টা খোলা রাখতে হচ্ছে মসজিদের মূল ফটক। এতে মুসল্লি ছাড়াও মসজিদের ভেতরে যে কারো প্রবেশের ফলে বিনষ্ট হচ্ছে হচ্ছে পবিত্রতা ও নিরাপত্তা।

সিটি কর্পোরেশনের যৌক্তিক ও বাণিজ্যিক ব্যবহারের উদ্দেশ্যে দেওয়া দরপত্র বাতিল চেয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে মসজিদ পরিচালনা কমিটি।

জানা যায়, চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী তাজুল ইসলাম ও সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বরাবরে মসজিদের ভেতরে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের গণশৌচাগারের দরপত্রটি বাতিল করে মুসল্লিদের জন্য নামাজ পড়ার সুযোগ তৈরি করার অনুরোধ জানিয়ে পৃথকভাবে দুটি চিঠি দেওয়া হয়।

ওই চিঠিতে বলা হয়েছে,‌ লালদিঘী মসজিদে মুসল্লিদের অনুরোধে প্রেক্ষিতে শৌচাগারটি নির্মাণ করে দেয় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। এটি দীর্ঘদিন ধরে মুসল্লিদের জন্য উন্মুক্ত ছিল। সম্প্রতি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন মসজিদ পরিচালনা কমিটির সঙ্গে কোনো রকম আলাপ-আলোচনা না করে হঠাৎ করে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে শৌচাগারটি ইজারা দিয়ে দেন। এতে প্রায় প্রতিদিনই গণশৌচারের লোকজনদের সাথে মুসল্লিদের বাদানুবাদের ঘটনা ঘটছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, মসজিদের উত্তর পাশে গণশৌচারগাটি। সেখানে প্রবেশ করতে হয় মসজিদের মূল ফটক খুলে। অথচ মসজিদের বারান্দা ও তার আশপাশের অধিকাংশ জায়গায় নামাজ আদায় করেন মুসল্লিরা। এতে প্রতিদিন মুসল্লি ছাড়াও বিভিন্ন লোকজন শৌচাগারটি ব্যবহার করায় মসজিদের পবিত্রতায় বিঘ্ন ঘটছে।

জানা গেছে, ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর তিন মাসের জন্য লালদিঘী মসজিদের তিনটি শৌচাগার ইজারার জন্য দরপত্র দেয় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত এসব শৌচাগার থেকে মাশুল আদায় করার অনুমতি দেওয়া হয়।

জানতে চাইলে লালদিঘী মসজিদ পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, ‘ঐতিহ্যবাহী লালদিঘী মসজিদের ভেতরে কর্পোরেশন কর্তৃক বাণিজ্যিক শৌচাগার সম্প্রতি নিলাম দেয়। সারাদিন বহিরাগহতদের প্রবেশ ও চলাফেরা করায় মসজিদের পবিত্রতা বিনষ্ট হওয়ার পাশাপাশি বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ছেন মসুল্লিরা।

প্রতিদিন মুসল্লিরা অজু করতে গেলে সেখানে গোসল করতে আসা বহিরাগত লোকজনদের সাথে প্রায় বাকবিতণ্ডা হয়। মসুল্লিদের কথা বিবেচনা করে উক্ত দরপত্রটি বাতিল করতে মন্ত্রণালয় বরাবরে দুটি চিঠিও দেওয়া হয়। সংশ্লিষ্টদের প্রতি অনুরোধ, মসজিদের ভেতরে শৌচাগারের দরপত্র বাতিল করে মুসল্লিদের জন্য উম্মুক্ত করা হউক।’

এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী মুহাম্মদ মোজাম্মেল হক বলেন, ‘গত ৩১ ডিসেম্বর লালদিঘী মসজিদের ভেতরে শৌচাগারটি থেকে মাশুল আদায়ের জন্য দরপত্র দেওয়া হয়। শর্তসাপেক্ষে এ দরপত্র দেওয়া হয়েছে, যাতে কোনো মুসল্লিদের অজু বা চলাফেরা করতে কোনো ধরনের ব্যাঘাত না ঘটে। তারপরও যদি মুসল্লিদের নামাজের ব্যাঘাত ঘটার কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়, তাহলে দরপত্রটি বাতিল করার সুযোগ রয়েছে। প্রয়োজনে দরপত্রটি বাতিল করা হবে।’

মুআ/কেএস/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!