লালদিয়ার চর/ বাড়ির সঙ্গে চূর্ণ হল মাইনুর নাসিমার স্বপ্ন!

বাইশ বছর আগে পতেঙ্গার লালদিয়ার চরে বসতি স্থাপন শুরু করেছিলো মাইনুর এবং নাছিমার পরিবারের সদস্যরা। চট্টগ্রাম বন্দরের জায়গায় শত শত পরিবার চার যুগ ধরে বসতি স্থাপন করে আছে এই ভরসায় সেখানে নিজেদের একখণ্ড জমি কেনার স্বপ্ন দেখতে থাকেন তারা। মাঝে মাঝে উচ্ছেদ আতঙ্ক ভর করলেও অন্যদের দেখে ভরসা পান, সেই সাথে রাজনৈতিক বলয়ে থাকা প্রভাবশালীদের অভয়বানীও তাদের সেখানে স্থায়ী বসবাসে আগ্রহী করে তোলে।

এস আই আলাউদ্দিন নামে এক পুলিশ কর্মকর্তার কাছ থেকে ১ গন্ডা ২ কাঠা ভূমির দখলস্বত্ব কিনে লালদিয়ায় বসত শুরু করেছিলেন এ দুই পরিবার। জীবনের সব সঞ্চয় দিয়ে প্রায় ২১ লাখ টাকা ব্যয়ে তিন বছর আগে পাকা দালান নির্মাণ করেন তারা। জীবনের শেষ সম্বলটুকু সোমবার (২২ জুলাই) কয়েক মিনিটের মধ্যেই গুড়িয়ে গেলো চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের স্কেভেটরের আঘাতে। চোখের সামনে এই দৃশ্য দেখে মাইনুর- নাছিমা অঝোরে কেঁদেছেন। সহায় সম্বল আর ভিটেমাটি হারিয়ে লালদিয়ার চরে উচ্ছেদ হওয়া ১৩০ পরিবারের মতো তারাও নিঃস্ব হলেন।

গার্মেন্টস কর্মী নজিম উদ্দিনের স্ত্রী মাইনুর বেগম। নাজিমের ছোট বোন নাছিমা আক্তার। নাছিমার স্বামী সিদ্দিকুর রহমান দিদার। সবাই কাজ করেন গার্মেন্টসে। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে যখন সুখের মুখ দেখছিলেন তখনই লালদিয়ার চরের উচ্ছেদ অভিযান তাদের সব স্বপ্নকে তছনছ করে দিলো।

সোমবার (২২ জুলাই) সকালে উচ্ছেদ অভিযান চলাকালে নাজিম উদ্দিন বলেন, ২২ বছর ধরে আমরা লালদিয়ার চরে বসবাস করছি। মাঝে মধ্যে উচ্ছেদ অভিযান চলানোর খবর শুনলেও স্থানীয় প্রভাবশালীদের আশ্বাসে এখানে স্থায়ী বসতি স্থাপনে আমরা আগ্রহী হই। এক পুলিশ কর্মকর্তা এসআই আলাউদ্দিন থেকে জায়গার দখলস্বত্ব ক্রয় করি। তিনি পুলিশ হওয়ায় আমরাও আশাবাদী ছিলাম হয়তো উচ্ছেদ হবে না লালদিয়ার চরে।

স্কেভেটর দিয়ে যখন নতুন নির্মিত পাকাঘরও গুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছিল তখন নাজিম উদ্দিনের স্ত্রী মাইনুর বেগম এবং তার ননদ নাছিমা আক্তার দাঁড়িয়ে অঝোরে কাদছিলেন। শান্তনা দেওয়ার মতো কেউ ছিলনা পাশে।
ক্ষোভমিশ্রিত কণ্ঠে তারা জানান, প্রভাবশালীদের আশ্বাসে তারা ঘর নির্মাণ করেন। বিভিন্ন সময় নোটিশ এলেও তারা আশ্বস্ত করছিলো যত বাধাই আসুক প্রতিহত করবে। হঠাৎ করে যখন উচ্ছেদ অভিযান শুরু হলো তারা এখন কেউ পাশে নেই।

নাজিম উদ্দিন জানান, উচ্ছেদ আতঙ্কে এতদিন কাজে যোগ দিতে পারিনি। গার্মেন্টসে এমব্রয়ডারি ইনচার্জ হিসেবে কাজ করতাম। অনুপস্থিত থাকায় সেই চাকুরিও চলে গেছে। পরিবার পরিজন নিয়ে কোথায় গিয়ে উঠবো এই চিন্তায় আমরা দিশেহারা।

উচ্ছেদের শিকার নাছিমা আক্তার বলেন, বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে সবার দাবি ছিলো উচ্ছেদকালে যাতে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়। সেই দাবি রাখেনি বন্দর। সারা জীবনের সঞ্চয় আর ঋণের টাকায় মাথা গোজার ঠাঁই করে নিয়েছিলাম। সোমবার (২২ জুলাই) শেষ সহায় সম্বল সবটুকুই শেষ হয়ে গেলো।

প্রসঙ্গত: পতেঙ্গার লালদিয়ার চরে লালদিয়া মাল্টিপারপাস টার্মিনাল নির্মাণের জন্য ওই এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে বন্দর কর্তৃপক্ষ। সোমবার (২২ জুলাই) ৪০ শতাংশ উচ্ছেদ কর্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে।
লালদিয়ার চরে প্রায় ১ হাজার ৭০০ পরিবার বসবাস করলেও কর্ণফুলী নদীর তীর সংলগ্ন ১৩০ পরিবারকে উচ্ছেদ করা হবে।

এসসি/এসএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!