লালদিঘি পাড়ের ঝুঁকিপূর্ণ ওরিয়েন্ট টাওয়ার বিপদে ফেলছে সবাইকে

পার্কিংয়ের জায়গায় মার্কেট ও দোকান, অবৈধভাবে উপর ও পাশে ভবন বাড়ানো, নালার ওপর স্থাপনা—এমন সব অভিযোগ নিয়ে চট্টগ্রাম নগরীর লালদিঘির উত্তর পাড়ে দাঁড়িয়ে আছে একটি ভবন, নাম তার ওরিয়েন্ট টাওয়ার। নকশা বহির্ভূতভাবে এই ভবনটির অবৈধ স্থাপনা নিরাপত্তা ঝুঁকিতে ফেলেছে পাশের দালানগুলোকে। ভবনের নিচে পার্কিং না থাকায় বিভিন্ন অফিসের গাড়ি রাখা হয় ব্যস্ততম সড়কের ওপর, ফলে নিত্য যানজট লেগেই থাকে। অভিযোগ রয়েছে, ভবন মালিকের এসব অরাজকতার সবকিছুই ঘটছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃৃপক্ষের (সিডিএ) জ্ঞাতসারেই!

নগরীর কোতোয়ালী থানাধীন লালদিঘির উত্তর পাড়ে ওরিয়েন্ট টাওয়ারের অবস্থান। ভবনটির মালিক সাতকানিয়ার ইছামতি পুলের মোজাহের মিয়ার পুত্র এসএম আহমদ হোসেন। তিনি ইমকো প্রপার্টিজের স্বত্বাধিকারী।

অভিযোগ রয়েছে, ওরিয়েন্ট টাওয়ার নির্মাণের সময় সিডিএ থেকে আট তলার নকশা অনুমোদন নেওয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে সিডিএর অনুমতি ও নকশা ছাড়া অবৈধভাবে আট তলার স্থলে নয় তলা করা হয়েছে। ২০১৩ সালে ভবনের পূূর্বাংশ দেবে যাওয়ায় এটি ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে পরিণত হয়েছিল। পরবর্তীতে আরও এক তলা অর্থাৎ নয় তলা করায় সেটি আরও বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে প্রাণহানির হুমকি দেখা দিয়েছে।

জানা যায়, ২০১৩ সালে ভবনের অনুমোদনকৃত নকশা দেখানোর জন্য সিডিএ থেকে বারবার অনুরোধ করা হলেও মালিকপক্ষ সেটি দেখাতে পারেনি। নির্মাণের সময় নিচতলায় পার্কিং স্পেস রেখে নকশা অনুমোদন নেওয়া হয়েছিল আটতলার। পরবর্তীতে পার্কিংয়ের জায়গায় মার্কেট ও দোকান ভাড়া দেয় মালিকপক্ষ। এর ফলে ভবনে স্থিত থাকা অফিসগুলোর গাড়ি রাস্তার ওপর পার্কিং করার কারণে ওই স্থানে যানজট লেগেই থাকে। অভিযোগ রয়েছে, নকশা বহির্ভূতভাবে উত্তর পাশে নালার ওপর ভবন বর্ধিত করায় পানি চলাচল ও নালার ময়লা আবর্জনা উত্তোলনে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। ভবনের সামনে ‘মালঞ্চ’ নামে নকশাবহির্ভূত দোকানের কারণে যানজট মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছে।

ওরিয়েন্ট টাওয়ারের পার্কিংয়ের জায়গায় প্রায় ১৭-১৮টি দোকান রয়েছে। পার্কিংয়ের জায়গায় দোকান কেন প্রশ্ন করা হলে ওই ভবনের ভাড়াটে রাইয়ান এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী নাম প্রকাশে অনিচ্ছা জানিয়ে চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘ভাড়া দিলে আমি-আপনি যে কেউ দোকান নেবো। বৈধ-অবৈধ দেখার দায়িত্ব সিডিএর। এখানে আমাদের কোন হাত নেই।’

লালদিঘির পূর্ব পাড়ের পাঁচ তলা দালান আজিম সেন্টারের মালিক মহিউদ্দীন আবদুুল হাই অভিযোগ করে চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমার মালিকানাধীন দালানের উত্তর পাশে ওরিয়েন্ট টাওয়ারের নিচতলায় পার্কিং স্পেস রেখে সিডিএ থেকে আট তলার নক্সা নিয়ে ত্রুটিপূর্ণভাবে নির্মাণ কাজ করা হয়েছে। পরবর্তীতে নকশা বহির্ভূতভাবে অনুমতি ও অনুমোদনবিহীন নয় তলার কাজ করেছে ভবন মালিক। এর ফলে আজিম সেন্টারের মালিক হিসেবে আমি নিরাপত্তা ঝুঁকিতে আছি।’

মহিউদ্দীন আবদুুল হাইয়ের পুত্র তারিন মহিউদ্দিন আজিম বলেন, ‘ওরিয়েন্ট টাওয়ার নির্মাণের সময় পাঁচ তলা পর্যন্ত সীমানা দেয়াল নির্মাণ করলেও নকশা বহির্ভূতভাবে গায়ের জোরে ছয় তলা থেকে নয় তলা পর্যন্ত ছাদের অংশ দক্ষিণ দিকে পাঁচ ফুট বাড়িয়ে আজিম সেন্টারের ছাদের ওপর ছাদ করেছে। যা অপসারণ করা দরকার।’

অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য নিতে ইমকো প্রপার্টিজের কার্যালয়ে একাধিকবার গিয়েও এসএম আহমদ হোসেনের দেখা পাওয়া যায়নি। এছাড়া একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও মুুঠোফোনে সাড়া দেননি তিনি।

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে সিডিএর অথরাইজড অফিসার-২ মোহাম্মদ শামীম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘বিষয়টি আমাদের জানা নেই। লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আমরা ব্যবস্থা নেবো।’

এমএ/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!