লালখানবাজারে বেলালের মুখোমুখি মাসুম, ‘চরমপত্র’ গেল শীর্ষনেতাদের কাছে

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে লালখানবাজারে ফের মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়িয়েছে ওই এলাকার আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের নেতাকর্মীরা। ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক দিদারুল আলম মাসুম ও কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আবুল হাসনাত বেলালের মধ্যে বেশ কিছুদিন ধরেই চলছে অভিযোগ ও পাল্টা অভিযোগ। নেতাদের এই মুখোমুখি অবস্থানকে কেন্দ্র করে তাদের অনুসারীদের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়েছে উত্তেজনা।

উত্তেজনার পারদ এমন পর্যায়ে গেছে যে আওয়ামী লীগ মনোনীয় মেয়র প্রার্থীর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির দায়িত্ব থেকে দিদারুল আলম মাসুমকে বাদ দিতে এর মধ্যে মহানগর আওয়ামী লীগসহ দলের সিনিয়র নেতাদের চিঠি দিয়েছেন কাউন্সিলর প্রার্থী আবুল হাসনাত বেলাল। তবে বেলালের এই চিঠি দেওয়াকে ‘পাগলামি’ হিসেবে অভিহিত করে এমন দাবি করার এখতিয়ার নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন দিদারুল আলম মাসুম।

এখানেই শেষ নয়, চিঠি চালাচালির এই বিতর্কে ঘি ঢেলেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া দিদারুল আলম মাসুমের একটা পোস্টও। বেলালের দাবি, নির্বাচনে তাকে পরাজিত করার চক্রান্ত করছেন দিদারুল আলম মাসুম। এজন্যই তিনি মাসুমকে দলীয় নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। এখন অনেকেই বলছেন, বেলালের আশংকা যে ভুল ছিল না মাসুমের সর্বশেষ ফেসবুক পোস্টই তার প্রমাণ।

দুই দিন আগে ৫ জানুয়ারি নিজের টাইমলাইনে দেওয়া ওই স্ট্যাটাসে দিদারুল আলম মাসুম লিখেছেন, ‘কোন অযোগ্য কিশোর গ্যাং লিডার , বিএনপি, জামাতির আশ্রয়দাতা, প্রিয় হারানো ছাত্রলীগ নেতা সুদীপ্তর পোস্টার, সুদীপ্তর বাবা মা’কে ব্যবহারকারী লেবাসী ভাল মানুষ কাউন্সিলর হওয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়ন অন্তত এই লালখানবাজারের মানুষ হতে দেবে না। যদিও আমি এই পৃথিবীতে না থাকি…।’

বেলালের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে দিদারুল আলম মাসুম বলেন, ‘আমার স্ট্যাটাসের কোথাও আমি বেলালের নাম লিখেছি? তিনি গায়ে নিলেন কেন? তবে কি আমি যেসব কথা বলেছি তিনি মনে করেন এসব কিছুই উনাকে নির্দেশ করে?’

তিনি ‘বেঁচে থাকতে কাউকে কাউন্সিলর হতে দেবেন না’— এমনটি বলেননি দাবি করে মাসুম বলেন, ‘আমি বলেছি কিশোর গ্যাং লিডারদের লালখানবাজারবাসী কাউন্সিলর হতে দেবে না। এটা তো আমি দেবো না হয় না। এর পরে লিখেছি যদি আমি মরেও যাই। এই কথা আমি কেন বলেছি সেটাও তো বলা আছে ওই স্ট্যাটাসে।’

দলের নির্বাচন পরিচালনা কমিটি থেকে মাসুমকে অব্যাহতি দেওয়ার জন্য বেলালের চিঠি দেয়ার এখতিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তুলে মাসুম বলেন, ‘সে যে চিঠি দিয়েছে সেখানে সিটি কর্পোরেশনের লোগো কিভাবে ব্যবহার করে? সে তো কাউন্সিলর প্রার্থী। এখনও তো কাউন্সিলর হয়নি। তাছাড়া আমি দায়িত্ব পেয়েছি দলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে। এই চিঠিই তো অবান্তর।’

অন্যদিকে নিজের দাবির যৌক্তিকতা তুলে ধরে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে দেওয়া চিঠিতে আবু হাসনাত বেলাল লিখেছেন, ‘দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে লালখান বাজার ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের মেয়াদ উত্তীর্ণ কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক দিদারুল আলম মাসুম নির্বাচনে আমার বিজয় ঠেকাতে নানামুখী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। স্থগিত নির্বাচনের নতুন তারিখ ঘোষণার পর থেকে তার অনুগত সন্ত্রাসী বাহিনী হানিফ, শরীফ ও জাহেদের নেতৃত্বে আমার নেতাকর্মীদের ওপর পরিকল্পিতভাবে ধারাবাহিক হামলা চালিয়ে ছুরিকাঘাতসহ তাদের যানবাহন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও ঘরবাড়ি ভাংচুর করা হয়।’

মাসুম তাকে পরাজিত করার ষড়যন্ত্র করছে— একথা উল্লেখ করে বেলাল বলেন, ‘মনোনয়ন বঞ্চিত হওয়ায় নির্বাচনকে সামনে রেখে আমার বিজয় ঠেকাতে মামলা হামলার মাধ্যমে আতংক সৃষ্টি করে নেতাকর্মীদের মনোবল নষ্ট করাই দিদারুল আলম মাসুমের প্রধান লক্ষ্য। তাছাড়া লালখানবাজার ওয়ার্ডে যে কমিটি হয়েছে সেটিও নিয়ম মেনে হয়নি। সবখানে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আহ্বায়ক হয়েছেন। এখানে দিদারুল আলম মাসুম স্বেচ্ছাচারিতা করে নিজে আহ্বায়ক হয়েছেন।’

তবে বেলালের এমন অভিযোগকে ‘পাগলামি’ হিসেবেই দেখছেন দিদারুল আলম মাসুম। চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে তিনি বললেন, ‘এগুলো পাগলামি ছাড়া কিছু নয়। তার বোধহয় মাথা নষ্ট হয়ে গেছে। এখানে যে কমিটি হয়েছে, সেটা মহানগরের বেধে দেওয়া নিয়ম অনুযায়ী হয়েছে। সব ওয়ার্ডেই ওয়ার্ডের সভাপতিকে আহ্বায়ক ও সেক্রেটারিকে সদস্য সচিব করা হয়েছে। সে যে আন্দাজে অভিযোগ করছে এটা তো তারই প্রমাণ।’

এআরটি/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!