রফিক সরকার,লামা (বান্দরবান) প্রতিনিধি :
বান্দরবানের লামায় ব্যাপক হারে কৃষি জমিতে তামাক চাষ হচ্ছে। ফলে অতিরিক্ত রাসায়নিক সার ব্যবহার করায় দিন দিন মাটির উর্বরা শক্তি হ্রাস পাচ্ছে। রবিশস্যের ফলনেও আশংকাজনক বিরুপ প্রভাব পড়ছে। চলতি মৌসুমে লামা পৌরসভা ও ৭টি ইউনিয়নে প্রায় ৫ হাজার একর কৃষি জমিতে তামাক চাষ শুরুকরেছে বিভিন্ন কোম্পানীর অন্তভ’ক্ত চাষীরা। এছাড়াও রেজিষ্ট্রেশন বহির্ভূত আরো প্রায় ১ হাজার একর কৃষি জমিতে তামাক চাষ হচ্ছে ।
সূত্রে জানা গেছে, লামা উপজেলার কৃষি জমিতে তামাক চাষীরা বেশি ফলনের আশায় বিগত ৩ দশক বছর ধরেই অতিরিক্ত ইউরিয়া সার প্রয়োগ করে আসছে। ট্যোবাকো কোম্পানীদের হিসাব মতে, প্রতি একর জমিতে ৭৫ কেজি ইউরিয়া সার প্রয়োগ করতে হয়।
কিন্তু অধিক ফলনের আশায় কৃষকরা জমিতে এ হারের দ্বিগুণ ইউরিয়া সার প্রয়োগ করছেন। যার কারণে দিন দিন এ উপজেলার কৃষি জমির উর্বরা শক্তি ব্যাপকহারে হ্রাস পাচ্ছে। তামাক চাষ শেষ হওয়ার পরপরই জমিতে ‘সবুজ সার’ প্রয়োগের নিয়ম রয়েছে। তামাক কোম্পানীগুলো সবুজ সার প্রয়োগের বিষয়ে স্থানীয় কৃষকদেরকে কোন ধরণের উৎসাহ দিচ্ছে না। তা বাস্তবে আদৌ প্রয়োগ করা হয়েছে কিনা তথ্যনির্ভরসূত্রে জানা যায়নি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, লামা উপজেলার অধিকাংশ মাটি বেলে-দোঁআশ থেকে এটেল-দোঁআশ এর মধ্যে সীমাবদ্ধ। প্রাচীনকাল থেকে এই মাটি পাহাড় ধসে, জৈব-রসায়নিক প্রক্রিয়া ও ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে নানাবিধ খনিজ পদার্থের মিশ্রণে সৃষ্টি হয়েছে। মাটির রং ঘন বাদামী থেকে হলুদাভ-বাদামী। মাটির পি.এইচ- ৪.৫-৬.০ পর্যন্ত। এ উপজেলায় মাটির ১১টি সনাক্তকৃত শ্রেণীর মধ্যে কাপ্তাই এটেল-দোঁআশ’ই সর্বাধিক। যা এলাকার আবাদি জমির প্রায় ৬৫% মাটির নির্দেশক।
কৃষি জমিগুলিতে অসম মাত্রায় অথবা শুধু ইউরিয়া সারের উদ্বেগজনক প্রয়োগ, বিষাক্ত ও নিষিদ্ধ বালাইনাশকের এলাপাথাড়ি ও অযাচিত ব্যবহার, গোবর ও জৈব সারের পরিমাণ কম এবং সীমিত পরিমাণ টুকুও অন্য কাজে ব্যবহার সর্বোপরি মাটির স্বাস্থ্য রক্ষায় কৃষকের জ্ঞান ও সচেতনতার অভাব প্রকট।
কৃষি ভিত্তিক জরীপে এখন এ এলাকার মাটির উর্বরা শক্তির এই হতাশা ও আশংকাজনক চিত্র ফুটে উঠেছে। এর পরেও প্রতিবছর তামাক চাষে অতিমাত্রায় রাসায়নিক সার প্রয়োগ করা হচ্ছে। ফলে অচিরেই এ অঞ্চলের মাটির উর্বরা শক্তি হারিয়ে কৃষি জমিগুলি মৃতপ্রায় মাটিতে পরিণত হওয়ার আশংকা করছেন কৃষি ও পরিবেশ বিধরা।
জানাযায়, কৃষি জমি গুলোতে যেহেতু জৈব পদার্থের পরিমাণ কম সেহেতু এ অঞ্চলের উপযোগি সবুজ সার ও ডাল জাতীয় ফসলের আবাদ আবশ্যক। এলাকার মাটি দৃঢ় অম্ল বিধায়, যে সমস্ত ফসল অম্ল মাটিতে জন্মাতে পারে তা চাষ করা প্রয়োজন। কিন্তু কৃষি বিভাগের অদুরদর্শিতার কারণে গত আড়াই দশক ধরে এখানকার কৃষি জমি হতে সবুজ সার ও ডাল জাতীয় ফসলের আবাদ প্রায় উধাও হয়ে গেছে। স্থান করে নিয়েছে পরিবেশ বেদ্বেষী তামাক চাষ।
এলাকার কৃষি সংশি¬ষ্ট প্রবীণ ব্যক্তিরা জানান, এ অঞ্চলে এক সময় প্রধান প্রধান কৃষিজাত দ্রব্যের মধ্যে ধান, তুলা, ভুট্টা, বাদাম, আলু, আঁখ, আদা, তিল, হলুদ, মরিচসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় ফল-ফলাদী উৎপন্ন হত। কিন্তু গত তিন দশকে তামাকের হীং¯্র’র ছোবলে এ সকল কৃষিপণ্যগুলোর উৎপাদন চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, এলাকায় পাহাড়ের ফাঁকে, নদী, ছড়া-ঝিরি তীরবর্তী যেসব সমতল কৃষি ভূমি রয়েছে, বর্তমানে এসব এলাকার লামা বন বিভাগ, লামা থানা,লামা ব্যাটালিয়ন আনসার ক্যাম্পের ফসলি জমিসহ ৯০% কোন কোন স্থানে ১০০% জমির মধ্যেই তামাক চাষে দখল নিয়েছে।
জানাগেছে, চলতি তামাক মৌসুমে লামায় ঢাকা ট্যোবাকো প্রায়’ দেড় হাজার একর, আবুল খায়ের ট্যোবাকো কোং লিঃ দেড় হাজার একর, ব্রিটিশ আমেরিকান ট্যোবাকো ১ হাজার একর ও নামে বেনামে কোম্পানী-১ হাজার একর কৃষি জমিতে তামাক চাষ করছে।
কৃষি সূত্রমতে, এ অঞ্চলের অধিকাংশ মাটির প্রতিক্রিয়া দৃঢ় অম্ল¬ থেকে মৃদু অম্ল¬। অম্ল¬তা বা ক্ষারত্বের ওপর নির্ভর করে জমির খাদ্য উৎপাদনের প্রাপ্যতা। তাই যে সমস্ত ফসল অম্ল¬তা পছন্দ করে বা অ¤ম্ল মাটিতে জন্মাতে পারে যেমন- আনারস, কমলা, লেবু, পেয়ারা, লিুচ, জাম্বুরা, আঙ্গুর, ভূট্টা, ধান, গম, শিম, মটরসুটি, আলু, মিষ্টি আলু, শাক-সব্জি, সরিষা, তিল-তিষি ইত্যাদি ফসল।
এ এস / জি এম এম / রাজীব প্রিন্স :::