লামায় জমি দখলে ব্যর্থ হয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের চেষ্টা : প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চাই এলাকাবাসী

রফিক সরকার, লামা প্রতিনিধি :
জমি দখলে ব্যর্থ হয়ে একটি সংঘবদ্ধ চক্র বান্দরবানের লামা উপজেলার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের পায়তারা করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ সংঘবদ্ধ চক্রটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন- কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলার বাসিন্দা বজেন্দ্র মহাজনের ছেলে অর্পন মহাজন ও ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের বনপুর বাজার এলাকার তয়েরা মুরুয়ের ছেলে চম্পাত মুরু।

news_img8-400x240_5569

শুধু তাই নয়, সংঘবদ্ধ চক্রটি জমি দখল করতে না পেরে ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের বনপুর এলাকার বৌদ্ধ মূর্তি ভাংচুরের মত স্পর্শকাতর মিথ্যা ঘটনার সৃষ্টি করে গত মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলা পরিষদ সম্মুখ সড়কে মানববন্ধন ও প্রধানমন্ত্রী বরাবরে স্মারকলিপি প্রেরন করে। এ ধরণের স্পর্শকাতর ঘটনা রটিয়ে রাজপথে মানববন্ধন ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর আবেদন করায় সচেতন সমাজ বিস্ময় প্রকাশ করেন।

 

এদিকে মিথ্যা অভিযোগ এনে সম্প্রীতি বিনষ্ট করে জমি দখল চেষ্টার অভিযোগে জমির মালিকের ছেলে এস.এম আজিজ প্রতিকার চেয়ে বান্দরবান জেলা প্রশাসকসহ প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছেন। এতে অভিযুক্ত অন্য ব্যক্তিরা হলো- বনপুর বাজার এলাকার মৃত জোগেন্দ্র ধরের ছেলে রিংকু বাবু ধর, মে অং মার্মার ছেলে মংথোয়াইচিং মার্মা, রাঅং হেডম্যানের ছেলে লাংকম মুরুংসহ অজ্ঞাত নামা আরও ১০-১২জন। এলাকায় সম্প্রীতি রক্ষায় প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন স্থানীয়রা।

 
স্থানীয় সূত্রে জানাগেছে, ২৮৫নং সাঙ্গু মৌজার ১৬১নং হোল্ডিং মূলে বনপুর বাজার এলাকায় ৫ একর জমির মালিক হন মাষ্টার জয়নাল আবেদীন। পাশে একই সময় ২০৪ নং হোল্ডিং মূলে ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. জাকের হোসেন মজুমদার ৫ একর দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণীর জমি বন্দোবস্তি পায়। বন্দোবস্তিকৃত এসব জমির উপর খামার ঘর, ফলজ ও বনজ গাছের বাগান সৃজন করে ৩০-৩৫ বছর ধরে ভোগ দখল করে আসছেন। হঠাৎ করে পাশ্ববর্তী জমির মালিক ইমারত হোসেনের কেয়ার টেকার অর্পন মহাজন লোকজন নিয়ে ২০১৫ সালের ৭ আগস্ট মো. জাকের হোসেন মজুমদার ও জয়নাল আবেদীনের খামার ঘর ভেঙ্গে দিয়ে সৃজিত রাবার, সেগুন, একাশিয়া, আম, কলাসহ বিভিন্ন জাতের গাছের চারা কেটে জবর দখল করার চেষ্টা করে। না পেরে সাংবাদিকদের মিথ্যা তথ্য দিয়ে গীর্জা ভাঙ্গার সংবাদ পত্রিকায় পরিবেশন করে প্রশাসনের মাঝে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করে ওই সংঘবদ্ধ চক্রটি।

 

পরে দু’পক্ষের পাল্টাপাল্টি অভিযোগের প্রেক্ষিতে ৮ আগষ্ট তৎকালীন বান্দরবান জেলা পরিষদের সদস্য মো. জহিরুল ইসলাম, উপজেলার সনাতন ও আওয়ামীলীগ নেতা বিজয় আইচ, লামা সদর ইউপি চেয়ারম্যান মিন্টু কুমার সেন, ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি নুর হোসেন চৌধুরী, সাধারন সম্পাদক ও ইউপি সদস্য শহীদুজ্জামান, উপজেলা যুবলীগের যুগ্ন-সম্পাদক প্রদীপ কান্তি দাশ, উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ওসমান গনি বাদশা, কানু লাল, স্থানীয় ইউপি সদস্য আপ্রুচিং মার্মা ও নাছিমা আক্তারসহ গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ সরেজমিন পরিদর্শন করে ঘটনার সত্যতা পায়নি।

 

সম্প্রতি চক্রটি পূণরায় জায়গা দখলে নেয়ার জন্য হঠাৎ মথাচড়া দিয়ে বৌদ্ধ মূর্তি ভাংচুরসহ চুরির মত স্পর্শকাতর ঘটনার রুপ দেয়। বিষয়টি জানতে পেরে তাৎক্ষনিকভাবে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান থোয়াইনু অং চৌধুরী, নির্বাহী অফিসার খালেদ মাহ্মুদ, সহকারী পুলিশ সুুপার আল্ মাহমুদ হাসান, থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. ইকবাল হোসেনসহ স্থানীয় সাংবাদিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক নেতৃবৃন্দ সরজমিন পরিদর্শন করে সত্যতা পায়নি বলে জানা গেছে।

 

লিখিত অভিযোগে ভুক্তভোগী এস.এম আজিম আরও জানায়, অভিযুক্তরা সম্প্রতি তার বাবার নামীয় ও ভোগদখলীয় জমিতে সৃজিত ২০০টি আম গাছ কেটে নিয়ে যায় এবং চার লক্ষ টাকা চাঁদা দিলে আর মন্দির নির্মাণ বা জমি নিয়ে ঝামেলা করবেন না। চাঁদার টাকা না দিয়ে জমিতে গেলে অপহরন পূর্বক হত্যা করবে বলেও হুমকি দেয়। এছাড়া প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে মিথ্যা মামলা, অভিযোগ ও সাংবাদিক সম্মেলন করে সুনাম ক্ষুন্ন ও মানহানি করে এলাকার শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নষ্ট করছে অভিযুক্তরা। এসব থেকে রক্ষা পেতে শনিবার বান্দরবান জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।
স্থানীয় আবুল কালামসহ ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি লুৎফর রহমান বলেন, মূর্তি ভাংচুরের ঘটনা সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত। ঘটনাস্থলে কখনো বৌদ্ধ মন্দির কিংবা কোন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ছিলনা। একটি মহল স্থানীয়দের মধ্যে সাম্প্রদায়িক উস্কানি দিয়ে এলাকার শান্তি শৃঙ্খলা নষ্টের পাশাপাশি জমি দখলের পায়তারা করছে মাত্র। তারা আরও জানান, ২০১৫ সালে অর্পন মহাজন নামের এক ব্যক্তি বনফুর এলাকায় প্রবেশ করে কিছু মুরুং ও ত্রিপুরা সম্প্রদায় নিয়ে গীর্জ-মন্দির ও ক্যায়াং করার নামে জমি জবর দখলের চেষ্ঠা করছে।
২০১৫ সালে সরজমিন বিরোধীয় জমি পরিদর্শনে গেলে স্থানীয় প্রবীণ বাসিন্দা আবু ছালেহ (৭৫) ও মোহাম্মদ আলীসহ (৬০) আরো অনেকে এ প্রতিবেদককে জানান, পাকিস্তান আমল থেকে বনপুর এলাকায় বসবাস করে আসছি। কখনো শুনিনি ওই জমিতে গীর্জা, কেয়াং কিংবা কোন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান আছে। তারা আরো বলেন, গত বছর অর্পন মহাজন চকরিয়া উপজেলা থেকে বনপুরে এক ব্যক্তির জমির কেয়ারটেকারের দায়িত্ব নেন। এলাকায় তার নামে কোন জমি নেই, এলাকার স্থায়ী বাসিন্দাও নন। তিনি লোভের বশবতি হয়ে মাষ্টার জয়নাল আবেদীন ও চেয়ারম্যান জাকের হোসেন মজুমদারের জমি দখলে ব্যর্থ হয়ে প্রশাসনকে বিভ্রান্ত করে সম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের চেষ্ঠা করছে মাত্র। তাই বিষয়টি সমাধানে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ জরুরী।
এ বিষযে অভিযুক্ত অর্পন মহাজন বলেন, আমরা কারো জমি দখলের চেষ্টা করছি না। জমিটি খাস, তাই আমাদের উদ্দেশ্য হলো- ধর্মীয় স্বার্থে খাস জাযগায় মন্দির, গীর্জা ও বৌদ্ধ বিহার নির্মান করা। তবে বৌদ্ধ মূর্তি ভাংচুর কিংবা চুরির বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না বলে জানান।

 

ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জাকির হোসেন মজুমদার জানায়, মূর্তি ভাংচুর বা জবর দখলের কোন ঘটনা ঘটেনি। অর্পন মহাজন গং কাল্পনিক ঘটনার রুপ দিয়ে ঘোলাপানিতে মাছ শিকার করে আমাদের দীর্ঘলালিত সম্প্রীতি নষ্টের চেষ্টা করছে। তিনি আরও বলেন, ২০১৫ সালেও একইভাবে মিথ্যাচার করে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে ফল পায়নি ওই চক্রটি।

 

লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার খালেদ মাহ্্মুদ বলেন, ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে একটি তদন্ত টিম গঠন করা হয়েছে। তদন্তে সত্যতা পাওয়া গেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। তবে উপজেলা চেয়ারম্যান থোয়াইনু অং চৌধুরী জানান, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে কথিত মূর্তি ভাংচুর কিংবা চুরির সত্যতা পাওয়া যায়নি।

 

এ এস / জি এম এম / আর এস পি ::

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!