লাকড়ির চুলায় রোগীর খাবার রান্না হচ্ছে জেনারেল হাসপাতালে

বকেয়া বিল না দিলে গ্যাস সংযোগ নয়

গ্যাস নেই, তাই বলে কী রোগীদের না খাইয়ে রাখা যায়? কষ্ট করে লাকড়ি (কাঠ) দিয়ে রান্না করে রোগীদের খাওয়ানো হচ্ছে। লাকড়ির চুলার ধোঁয়ায় চোখ কচলাতে কচলাতে ভেজা চোখে এই তথ্য জানিয়েছেন বাবুর্চি নুরুল আলম।

কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (কেজিডিসিএল) কর্তৃপক্ষ চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার ২৭ ঘন্টা পার হলেও গ্যাস সংযোগ পুনরায় স্থাপন করা হয়নি। ফলে রোগীদের খাবার দিতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গ্যাসের চুলা খুলে রেখে ইটের উপর মাটি দিয়ে চুলা তৈরি করে ঝুঁকিপূর্ণভাবে রান্নার কাজ করছেন বাবুর্চি নুরুল আলম ও মুরাদ। জেনারেল হাসপাতালের চারপাশ থেকে কুড়ানো শুকনো কাঠ আর কয়লা দিয়ে রান্নায় ব্যস্ত বাবুর্চিরা।

চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের বাবুর্চি নুরুল আলমের সঙ্গে কথা হলে লাকড়ির চুলায় ফুঁ দিতে দিতে চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, গ্যাস তো নাই, তাই লাকড়ি দিয়ে রান্না করতে হচ্ছে। কখনও লাকড়ি দিয়ে রান্না করেনি, খুব কষ্ট হচ্ছে। তারপরও রোগীদের কথা চিন্তা করে লাকড়ি দিয়ে রান্না করছি। রোগীদের দু’বেলা খাবার দেওয়া হচ্ছে।

মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ১৭৬ জনকে খাবার দেওয়া হয়েছে। সব খাবার আমাদের দু’জনকেই বানাতে হচ্ছে। তার ওপর লাকড়ি চুলার কারণে বার বার নিভে যাচ্ছে। তাই সময় মত খাবার দিতে পারছি না।

লাকড়ির চুলায় রোগীর খাবার রান্না হচ্ছে জেনারেল হাসপাতালে 1

হাসপাতালের ৮ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি ডায়বেটিস রোগী সীমার শক্ত খাবার খাওয়া বারণ চিকিৎসকের। তারপরও কষ্ট করে দুইদিন ধরে শক্ত খাবার খেতে হচ্ছে। গ্যাস না থাকায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ স্যুপ দিতে পারছে না বলে জানান রোগীর সঙ্গে থাকা ছেলের বউ।

বোন হয়েছে তাই জেনারেল হাসপাতালে মার পাশে বার বার ঘোরাঘুরি করছে চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র নিলয়। তার সঙ্গে কথা বললে খুব সরল ভঙ্গিতে সে বলল, খাবার তো দেয়। কিন্তু দেরিতে দেয় বলে খুব খিদা লাগে। আমার বোন হয়েছে। তাই মাকে বিরক্ত করি না। চকলেট, জুস খেয়ে থাকি। খাবার দিলে মার সঙ্গে খাই।

এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের নার্সিং কর্মকর্তা চায়না রাণী শীল জানান, বকেয়া গ্যাস বিল পরিশোধ না হওয়ায় সোমবার থেকে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। দুইদিন ধরে রোগীদের খাবার পরিবেশ করতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে। তাছাড়া রোগীদের একটু ভোগান্তি তো হচ্ছেই।

জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. অসীম কুমার নাথ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (কেজিডিসিএল) সাথে গতকাল (সোমবার) থেকে যোগাযোগ করার চেষ্টা চলছে। তাদের সাথে কোনও মতে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। আমাদের পক্ষ থেকে কোনও কলই রিসিভ করছেন না তারা। আমাদের লোক ওদের অফিসে গিয়েছে বিল পরিশোধ করে দিলেই নাকি পুনরায় সংযোগ দেয়া হবে।

তিনি আরও বলেন, ২৫০ শয্যার হাসপাতালটিতে বর্তমানে রোগী ভর্তি আছেন ১৭৬ জন। কোনও মতে লাকড়ি দিয়ে রান্না করে রোগীদের খাওয়ানো হচ্ছে। এটা একটা সরকারি প্রতিষ্ঠান। টাকা দিতে গেলেও কিছু প্রসেসিং থাকে। ২০১৫ সাল থেকে বকেয়া বিল ছিল। এতদিন অপেক্ষা করতে পারলে আর কয়েকটা দিন অপেক্ষা করতে পারলো না কেন।

কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (কেজিডিসিএল) কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বকেয়া বিল পরিশোধ হলেই জেনারেল হাসপাতালে পুনরায় গ্যাস সংযোগ দেয়া হবে।

প্রসঙ্গত, ৫১ মাসের কর্ণফুলী গ্যাস বিল বকেয়া থাকায় সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয় কর্ণফুলী গ্যাস কর্তৃপক্ষ।

এসএ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!