লরির ধাক্কায় কলেজছাত্রীর মৃত্যু মিরসরাইয়ে

স্বপ্ন ছিল মেয়েকে ভার্সিটিতে পড়াবো, এজন্য শত কষ্টের মধ্যেও ভালো পড়াশোনা জন্য প্রাইভেটও পড়াচ্ছিলাম। কিন্তু আমার মেয়ের আর ভার্সিটিতে পড়ানো হলো না। ঘাতক লরি আমার মেয়েকে শেষ করে দিয়েছে। তোমরা আমার মেয়েকে ফিরে দাও—কান্নাচোখে এসব কথা বলছিলেন কলেজছাত্রী মিশু রানী দেবী পলির বাবা সূর্যমোহন দেবনাথ।

মঙ্গলবার (২ আগস্ট) সকাল ৮টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মিরসরাইয়ের নিজামপুর এলাকায় রাস্তা পার হওয়ার সময় দ্রুতগতির একটি লরির ধাক্কায় ঘটনাস্থলেই মারা যায় মিশু রানী দেবী পলি। সে নিজামপুর বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের কলেজের এইচএসসি ২য় বর্ষের ব্যবসা বিভাগের ছাত্রী।

পলি উপজেলার খৈয়াছড়া ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের শচীন্দ্র মিস্ত্রি বাড়ির সূর্যমোহন দেবনাথের মেয়ে।

পলির সহপাঠী তিশা সরকার ও মাহবুবা ইশরাত কান্নাচোখে বলেন, ‘আমরা প্রতিদিন নিজামপুরে স্যারের কাছে একসঙ্গে প্রাইভেট পড়তে যাই। আজ পলি আমাদের আগে চলে যায়। আমরা পরে নিজামপুর গিয়ে দেখি রাস্তার ওপর পলির নিথর দেহ পড়ে আছে। প্রথমে নিজেদের স্থির রাখতে পারিনি। এরপর একটি সিএনজি করে তার লাশ বাড়ি নিয়ে আসি। পলি এভাবে চলে যাবে কখনো ভাবতেও পারিনি।’

জানা গেছে, সূর্যমোহন দেবনাথের দুই মেয়ে ও এক ছেলের মধ্যে সবার বড় মিশু রানী দেবী পলি। পলি ২০১৭ সালে উপজেলার খৈয়াছড়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জেএসসি ও ২০২০ সালে এসএসসি পাস করে।

কুমিরা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ বলেন, ‘মঙ্গলবার সকাল ৮টার দিকে নিজামপুর বাজারে সড়ক পার হওয়ার সময় চট্টগ্রাম থেকে ঢাকামুখি একটি লরির ধাক্কায় কলেজছাত্রী পলি ঘটনাস্থলে মারা যায়। আমরা ঘটনাস্থলে যাওয়ার আগে পরিবারের লোকজন লাশ নিয়ে গেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এ ঘটনায় হাইওয়ে পুলিশের এসআই মোজাম্মেল বাদী হয়ে লরিচালক শাহজাহান শেখ ও চালকের সহকারী মো. লিমনকে আসামি করে মামলা করেছেন।’

বিকালে খৈয়াছড়া ইউনিয়নের পশ্চিম খৈয়াছড়া গ্রামে পলির সৎকারকাজ সম্পন্ন হয়েছে।

এদিকে দুর্ঘটনার প্রতিরোধে এক জরুরি সভা মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে নিজামপুর সরকারি কলেজ প্রতিনিধি, হাইওয়ে ও মিরসরাই থানার ওসি এবং স্থানীয় রাজনৈতিক, কলেজের ছাত্র সংগঠন নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

সভায় কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলাম আরিয়ান বলেন, ‘মিশু রানীর মতো যেনো আর কোনো ছাত্রছাত্রীর প্রাণ না যায় সেজন্য নিজামপুর কলেজ থেকে শুরু করে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত যেন সড়কের বিভাজকে (ডিভাইডার) লোহার নেট দেওয়া হয়। তাহলে শিক্ষার্থীসহ পথচারীরা বাধ্য হয়ে ফুটওভারব্রিজ ব্যবহার করবেন।

ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!