লবণের পানিতে পিচ্ছিল মহাসড়ক, পটিয়ায় একবছরে ১০ জনের মৃত্যু

লবণের পানিতে মৃত্যুকূপে পরিণত হয়েছে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক। বিশেষ করে পটিয়ার ইন্দ্রপুল লবণশিল্প এলাকায় প্রতিদিনই শতশত ট্রাক থেকে আনলোড করা হয় দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল হতে আসা অপরিশোধিত লবণ। তার মধ্যে কক্সবাজারের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা ৮০ শতাংশ পানিযুক্ত অপরিশোধিত লবণের ঝরেপড়া পানি পিচ্ছিল করে তুলছে ইন্দ্রপুল এলাকার প্রায় দশ কিলোমিটার মহাসড়ক। ফলে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা, অকালে ঝরছে প্রাণ। বিগত এক বছরে প্রায় ১০ জনের প্রাণহানি ঘটনা ঘটেছে, আহত হয়েছে শতাধিক। যাদের বেশিরভাগই ছিল মোটরসাইকেল আরোহী।
অপরিশোধিত লবণ থেকে ঝরে পড়া পানিতে প্রতিনিয়ত এত দুর্ঘটনা ঘটলেও তা বন্ধে প্রশাসন থেকে তেমন কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি বলে আহত ও নিহত পরিবারসহ সংশ্লিষ্ট ভুক্তভোগীদের অভিযোগ।

সূত্রে জানা যায়, প্রশাসনের পক্ষ থেকে পলিথিন দিয়ে লবণ পরিবহনের জন্য বার বার অবহিত করা হলেও কর্ণপাত করছে না লবণ ব্যবসায়ীরা। আবার কোনো কোনো লবণ পরিবহনকারী ট্রাকে পলিথিন ব্যবহার করলেও ইন্দ্রপুল এলাকায় সড়কের উপর লবণ আনলোড করার সময় ট্রাকের লবণাক্ত পানিতে মহাসড়ক সয়লাব হয়ে যায়।

পানিযুক্ত লবণ পরিবহনের ফলে মহাসড়ক ক্ষতিগ্রস্ত এবং পিচ্ছিল হয়ে দুর্ঘটনা বাড়ার কারণে চট্টগ্রাম জেলায় গত জানুয়ারি মাসের উন্নয়ন সমন্বয় সভায় সড়ক ও জনপথ বিভাগ থেকে পানিযুক্ত লবণ পরিবহনের নেতিবাচক দিকগুলো তুলে ধরা হয়।
সভায় সিদ্ধান্ত হয়, বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে লবণ ব্যবসায়ীদের নিয়ে মতবিনিময় করা হবে। এদিকে মহাসড়কের পাশে পানিযুক্ত লবণ আনলোড বন্ধে এক সপ্তাহ আগে মিল মালিকদের চিঠিও দিয়েছে পটিয়া লবণ মিল মালিক সমিতি। তবে এ চিঠি পাওয়ার পরেও সড়কের উপর লবণ আনলোড বন্ধ করেনি কেউ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পটিয়া লবণশিল্প এলাকায় চাঁনখালী খাল দিয়ে লবণ বোঝাই ট্রলার আসা-যাওয়া অনেকাংশ কমে যাওয়ার ফলে ট্রাকে করে লবণ পরিবহন বেড়ে গেছে। কয়েক বছর পূর্বে থেকে ট্রাকে করে লবণ পরিবহন করা হলেও কোনো পলিথিন ব্যবহার করা হতো না। অনেক চেষ্টা তদবিরের ফলে পলিথিন ব্যবহার শুরু হলেও নতুন করে ইন্দ্রপুল এলাকা আগের চেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে।

কক্সবাজার, মহেশখালী, চকরিয়া ও বাঁশখালী থেকে সড়ক পথে আসা ট্রাক থেকে ঝরে পড়া পরিশোধিত লবণের পানি ইন্দ্রপুল এলাকায় পড়ে। এসব লবণাক্ত পানি রওশন হাট থেকে মনসা বাদামতল মোড় পর্যন্ত প্রায় দশ কিলোমিটার মহাসড়ক সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।
জানা যায়, ২০১৮ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ১০টার দিকে পটিয়ায় একটি বিয়ে অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে আসা মোটরসাইকেল আরোহী চট্টগ্রাম নগর পুলিশের দুই সদস্য ইন্দ্রপুল থেকে নামতেই পিছলে পড়ে গিয়ে ট্রাকের নিচে চাপা পড়ে। এতে ঘটনাস্থলে দুই পুলিশ সদস্য প্রাণ হারায়।

ঠিক এর কয়েকদিন পর চট্টগ্রাম থেকে লোহাগাড়া বায়তুশ শরফের পীরের মাহফিলে যাওয়ার পথে সড়কে পিছলে গিয়ে পড়ে বাসের ধাক্কায় আরও দুইজন মোটরসাইকেল আরোহী শালা-ভাগ্নে নিহত হয়। সর্বশেষ গত নয় জানুয়ারি রাত ৮টায় মহাসড়কের পটিয়া উপজেলা গেট এলাকায় একই নিয়মে আরেক দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেল আরোহী পটিয়ার ভাটিখাইন ইউপি সদস্য আজম খান প্রাণ হারায়। এভাবে গত একবছরে দুর্ঘটনায় দশ জনের প্রাণহানি ও শতাধিক লোক আহত হয়েছে। এতে অনেকেই পঙ্গুত্ব হয়ে জীবন-যাপন করছেন।

এ ব্যাপারে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ দোহাজারীর নির্বাহী প্রকৌশলী জাহিদ হাসান চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, পানিযুক্ত লবণ পরিবহন বন্ধ করতে গত জানুয়ারি মাসের জেলা উন্নয়ন সভায় বলা হয়েছে। এছাড়া পানিযুক্ত লবণ পরিবহনের ক্ষতিকারক দিকগুলো তুলে ধরা হয়। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসককে অনুরোধ জানানো হয়েছে।

এ ব্যাপারে পটিয়া লবণ মিল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফজলুল হক আল্লাই বলেন, সড়কের উপর যারা পানিযুক্ত লবণ আনলোড করে তাদের সতর্ক করে চিঠি দেওয়া হয়েছে। চিঠিতে লবণ আনলোড বন্ধ করতে বলা হয়েছে। আমরা পুনরায় ওইসব মিল মালিকদের আবারও সতর্ক করবো। অন্যথায় তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ ব্যাপারে পটিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হাবিবুল হাসান চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে জানান, বিষয়টি অতি গুরুত্বপূর্ণ। আমরা শিগগিরই লবণ মালিকদের সঙ্গে বসবো। তবে যারা সড়কের পাশে লবণ আনলোড করছে তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

এএইচ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!