লক্ষ্যভ্রষ্ট গুলিতে রাঙামাটিতে প্রাণ গেল নিরীহ মানুষের

আবারও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে পাহাড়ের অবৈধ অস্ত্রধারীরা। নিজেদের ‘দাপুটে অস্তিত্ব’ জানান দিতে প্রতিপক্ষের নেতাকর্মীদের হরহামেশা খুন-খারাবি করছে। হত্যার নয়া টার্গেটে পরিণত হচ্ছেন জনপ্রতিনিধিরাও। কিন্তু এসব হত্যাকাণ্ডে মাঝে মধ্যেই প্রাণ হারাচ্ছেন সাধারণ মানুষও।

সর্বশেষ বুধবার (৮ জানুয়ারি) রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলায় ‘টার্গেট কিলিং’ এর ফাঁদে ফেলে এক যুবককে গুলি করে হত্যা করেছে অস্ত্রধারীরা। নিহতের নাম বাচিমং মারমা (৩০)। তিনি ‘ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালক’ ছিলেন। দুপুর আড়াইটার দিকে উপজেলার রাইখালী ইউনিয়নের দেবতাছড়ি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

নিহত বাচিমং একই ইউনিয়নের গবাছড়ার আগাপাড়া এলাকার বাসিন্দা ক্যাচিং প্রু’র ছেলে।

এনিয়ে গত এক বছরে কাপ্তাই উপজেলায় অস্ত্রধারীদের গুলিতে একটি জোড়া খুনসহ পৃথক তিনটি হত্যাকাণ্ডে ৪ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটলো।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, বুধবার বাচিমং ভাড়ার মোটরসাইকেলে যাত্রী হিসেবে রাজস্থলী উপজেলার বাঙ্গালহালিয়া থেকে গবাছড়ার কার্বারী (গ্রাম প্রধান) ক্যাচিং মং মারমাকে নিয়ে গবাছড়ি এলাকায় যাচ্ছিলেন। ঘটনাস্থলে পৌঁছালে আগে থেকে ওঁৎপেতে থাকা অস্ত্রধারীরা গুলি চালায়। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান বাচিমং। গুলিবিদ্ধ হন কার্বারী ক্যাচিং মংও। ঘটনার পরপরই সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়।

পরে খবর পেয়ে বাঙ্গাহালিয়া আর্মি ক্যাম্পের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা ওই এলাকায় গিয়ে গুলিবিদ্ধ কার্বারিকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠান।

চন্দ্রঘোনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি তদন্ত) শফিউল আজম হত্যাকাণ্ডের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করেছে। হামলার সঙ্গে কারা জড়িত এখনও তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।’

রাইখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এনামুল হক বলেন, ‘অস্ত্রধারীদের গুলিতে নিহত বাচিমং মারমা কোনো রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলো না। সে ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালাতো।’

বাড়ছে হত্যাকাণ্ড
এর আগে গত বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি বিকাল ৪টায় কাপ্তাইয়ের রাইখালী কারিগর পাড়া (ভাল্লুক্যা মুখ) এলাকায় একদল অস্ত্রধারী ব্রাশফায়ার করে মংসিনু মারমা (৪০) ও স্থানীয় ছাত্রলীগ কর্মী মো. জাহিদ হোসেনকে (৩৫) হত্যা করে।

হত্যাকাণ্ডের একদিন পর ৫ ফেব্রুয়ারি রাতে নিহত মংসিনু মারমার শ্বশুর আপ্রু মারমা বাদী হয়ে চন্দ্রঘোনা থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় ২১ জনের নাম উল্লেখ করে আরও ১০-১৫ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়।

এ জোড়া খুনের মামলায় এজাহারভুক্ত আসামি কাপ্তাইয়ের রাইখালী ইউপি চেয়ারম্যান ও জেএসএস উপজেলা সাধারণ সম্পাদক সায়মং মারমা ও চিৎমরম ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা সাংগঠনিক সম্পাদক খ্যাইসা অং মারমাকে আসামি করা হয়েছে।

এছাড়া গত ১৯ মে মধ্যরাতে রাজস্থলী উপজেলায় যুবলীগ নেতা ক্যহ্লা চিং মারমাকে (৪০) অস্ত্রধারীরা ঘরে ঢুকে গুলি করে হত্যা করে। ক্যহ্লাচিং বাঙ্গালহালিয়া ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি ছিলেন। এসব হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পাহাড়ের আঞ্চলিক দল সন্তু লারমার পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি-জেএসএসকে দায়ী করা হলেও সংগঠনটি তা অস্বীকার করেছে।

এএইচ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!