লক্ষণ ছাড়া করোনা রোগীরা চট্টগ্রামের নতুন বিপদ হয়ে দাঁড়াতে পারে

উপসর্গবিহীন রোগী শনাক্ত হচ্ছে বেশি

চট্টগ্রামে করোনার তীব্রতা কিছুটা কমে আসলেও সংক্রমণ থেমে নেই বলে মনে করছেন দায়িত্বশীলরা। গত বেশ কিছুদিন ধরেই উপসর্গহীন করোনা পজিটিভ বেশি শনাক্ত হচ্ছে জানিয়ে এটিকেই বড় শঙ্কার কারণ বলছেন বায়োটেকনোলজি বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, এই পরিস্থিতিতে সচেতনতা জোরদার না করলে সামনে ভয়াবহ কিছু অপেক্ষা করছে চট্টগ্রামের জন্য।

জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামে মোট নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে করোনা পজিটিভ শনাক্তের হার কমে গেছে প্রায় ১০ শতাংশ। অন্যদিকে চিকিৎসা সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, প্রতিদিন যারা করোনা পজিটিভ শনাক্ত হচ্ছেন তাদের মধ্যে বেশিরভাগ রোগীরই কোনো উপসর্গ নেই। শুরুর দিকে এক-দুইদিন জ্বরের উপসর্গ থাকলেই অনেকে নমুনা দিতে আসতেন। কিন্তু পরে সেটাও আর থাকেনি।

মাত্র কিছুদিন আগেও তীব্র শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন জটিল উপসর্গে চট্টগ্রামজুড়ে তৈরি হয়েছিল ভয়াবহ সংকট। কিন্তু উপসর্গহীন করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হওয়ার সাম্প্রতিক প্রবণতা চট্টগ্রামের হাসপাতালগুলোতে খানিকটা স্বস্তিই নিয়ে এসেছে। কিন্তু বায়োটেকনোলজি বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে দিচ্ছেন, করোনায় উপসর্গহীনতা দীর্ঘমেয়াদে অস্বস্তিরই কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

তারা বলছেন, নানামুখী ভোগান্তির কারণে এমনিতেই চট্টগ্রামে করোনা টেস্ট করার প্রবণতা কমে গেছে। নতুন করে উপসর্গহীন সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় সেটা আরও কমবে। ফলে নীরবে করোনা ছড়িয়ে যাবে আবার। আগে যেখানে করোনার গতিপ্রকৃতি কিছুটা হলেও আন্দাজ করা যাচ্ছিল, এখন সেই সম্ভাবনাটাও অনেকটা কমে আসায় নীরবে এই সংক্রমণ দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে। আর এর মধ্যে যদি করোনা আবারও রূপ বদলে খানিকটাও রুদ্র মেজাজে ফিরে আসে, তাহলে আচমকা যে পরিস্থিতি তৈরি হবে তা সামাল দেওয়া অনেকটাই কঠিন হয়ে পড়বে বলে— বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা এমনই।

তবে এই পরিস্থিতি এড়াতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলায় জোর দেওয়ার পাশাপাশি সচেতনতা বৃদ্ধিতে সবচেয়ে গুরুত্ব দিচ্ছেন বায়োটেকনোলজি বিশেষজ্ঞরা।

করোনারভাইরাসে (কোভিড-১৯ ) জিনগত গঠনে বিভিন্ন রোগীর মধ্যে ভিন্নতা, বিষক্রিয়া সৃষ্টিকারী প্রোটিনের বিভিন্ন গঠন ও ভাইরাসটির উৎপত্তিগত বিশ্লেষণ বিষয়ে গবেষণা করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের ড. আদনান মান্নান। চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে তিনি বলেন, ‘গত কয়েকদিন প্রচুর পরিমাণে উপসর্গহীন রোগী করোনা আক্রান্ত হচ্ছেন। চিকিৎসকদের অনেকে এই বিষয়টি জানাচ্ছেন। এটার কিন্তু খুব ভয়াবহ একটা ভবিষ্যৎ আছে। উপসর্গ না থাকায় মানুষ টেস্ট করাবে না, জানবেও না। ফলে আইসোলেশনেও যাবে না। এতে দ্রুতগতিতে এই সংক্রমণ ছড়িয়ে যাবে।’

তিনি বলেন, ‘এখন করোনার প্রকোপ কিছুটা কম। কিন্তু সংক্রমণ তো থেমে নেই। পরে যদি হঠাৎ করে মেজাজ বদলায়, তাহলে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া কঠিন হবে। তাই এখন আত্মতুষ্টিতে না ভুগে সচেতনতা মেনে চলায় জোর দিতে হবে। তাহলে হয়তো এই ধারাবাহিকতা ধরে রেখে একেবারে করোনামুক্ত হওয়াও কঠিন হবে না।’

চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বী বলেন, ‘আমরা শুরুতে যা বলেছি এখনও একই কথা বলছি। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কোন বিকল্প নাই। তার মধ্যে এখন বাতাসে সংক্রমণ ছড়ানোর কথা বলছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এক্ষেত্রে আমরা প্রয়োজনে ডাবল মাস্ক ব্যবহারের পরামর্শও দিচ্ছি সবাইকে।’

এআরটি/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!