লকডাউনে স্কুলে স্কুলে হঠাৎ পঞ্চম শ্রেণীর তালিকা তৈরির যজ্ঞ!

সন্দ্বীপে একদিনের নোটিশে শিক্ষা কর্মকর্তার কাণ্ড

করোনাভাইরাসে উদ্ভুত পরিস্থিতিতে গত ১৭ মার্চ থেকে দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধ। পরবর্তীতে আরও কয়েক দফায় ছুটি বাড়তে থাকে। সর্বশেষ সেই ছুটি আরও দীর্ঘ হওয়ার আভাস দেন প্রধানমন্ত্রী। অথচ এর মধ্যেই সন্দ্বীপের অধিকাংশ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মাত্র একদিনের নোটিশে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সংশ্লিষ্ট স্কুল প্রধানদের নির্দেশ দেন পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষার্থীদের নামের তালিকা (ডিআর) জমা দেওয়ার জন্য। এর প্রেক্ষিতে স্কুলপ্রধানরা শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্য করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন। নতুবা তার দায়ভার কর্তৃপক্ষের থাকবে না বলেও উল্লেখ করা হয় ওই স্ট্যাটাসে। যেখানে গণপরিবহনই বন্ধ, সেখানে অধিদপ্তরের নির্দেশে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার এমন কাণ্ডে বিস্মিত অভিভাবকরা। বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষকরাও এতে ক্ষোভ জানান।

জানা যায়, পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষার্থীদের নামের তালিকা (ডিআর) জমা দেয়ার কার্যক্রম শুরু হলে সে সময় মার্চের শেষ দিকে জমা দেওয়ার সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে ১৭ মার্চ থেকে স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মাঝপথে ডিআর জমা দেওয়ার কাজ থেমে যায়। কিন্তু এতোদিন পর হঠাৎ লকডাউনের ভেতর গত ২৬ এপ্রিল রাত ১১টার পর অধিকাংশ স্কুল প্রধান তাদের নিজেদের ফেসবুক টাইমলাইনে ২৭ এপ্রিল সকাল ৯টা থেকে সাড়ে ৯ টার ভেতর জন্ম নিবন্ধনসহ স্কুলে হাজির থাকার নির্দেশনার কথা জানান।

এ প্রসঙ্গে সন্দ্বীপের মফিজিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুজ্জামান কামাল চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘এটা আরও আগে জমা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু মাঝখানে স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় হয়ে ওঠেনি। লকডাউন উঠে গেলে জমা দেবো। কিন্তু ওপরের নির্দেশে তাৎক্ষণিকভাবে জমা দিতে হয়েছে।’

শিক্ষার্থীদের জানানোর পদ্ধতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ফেসবুকে জানিয়েছি। ফোন করে জানিয়েছি। নিজেদের কাছে যেগুলো ছিল সব ব্যবস্থা করে কাজ করেছি। দূরদুরান্তে যারা ছিল তাদের কোন ফোন করে জানিয়েছি, তারা অভিভাবকসহ এসেছে।’

একই প্রসঙ্গে মধ্য রহমতপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুল হুদা চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন,’ডিআর বলতে গেলে আমাদের রুটিনওয়ার্ক। ক্লাস ফাইভে যারা থাকে তাদের অনেকের ডিআর হয়ে গেছে। হয়তো দু একটা স্কুলে যারা দেয়নি তাদের জন্য বলা হয়েছে।’

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক বলেন, ‘এমনিতেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একটু করে ইঙ্গিত দিয়েছেন পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার, তাহলে কেন হঠাৎ এক দিনের নোটিশে কর্তৃপক্ষ আমাদের নাজেহাল করে ছাড়লেন তাই বুঝতে পারছি না।’

একদিনের ভেতর জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা ছিল কিনা— এমন প্রশ্নে সন্দ্বীপ উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মাইনউদ্দিন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আজকের (২৭ এপ্রিল) মধ্যে বলতে যারা রেডি আছে তাদের জমা দিয়ে দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। এ জন্য জন্মনিবন্ধন লাগার কথা না। আমাদের ক্ষেত্রে বাধ্যবাধকতা আছে ৩ মের ভেতর অধিদপ্তরে পাঠানোর জন্য। আমি তাদের বলে দিয়েছি শিক্ষক যারা আছেন তারা ব্যক্তিগতভাবে অভিভাবকদের ফোন করে জানানোর জন্য। যারা জমা দিতে ব্যর্থ হয়েছেন, তাদের শিক্ষকরা পার্সোনালি যোগাযোগ করেছে। যদি কেউ ব্যর্থ হয় তাহলে কনসিডার করা হবে। কারণ কোনো শিক্ষার্থীকে পরীক্ষার বাইরে রাখা হবে না।’

তবে ভোগান্তির কথা বলে এক অভিভাবক বলেন, ‘সকাল ৮ টার দিকে স্কুল থেকে ফোন করে বলে জন্ম নিবন্ধনসহ স্কুলে সাড়ে নয়টার ভেতর হাজির থাকার জন্য।’

এ প্রসঙ্গে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শহিদুল ইসলাম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা ওরকম ডেডলাইন দেইনি। আগে যে নির্দেশনা ছিল এখন পরিস্থিতি বিবেচনা করে কালকে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে। সে ক্ষেত্রে কোন শিক্ষার্থীর বাদ পড়ার সুযোগ নাই। কোনো কারণে কেউ বাদ পড়লে পরীক্ষার একদিন আগেও ডিআরভুক্ত করা সম্ভব।’

এসআর/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!