লকডাউনে টিউশন ফি চেয়ে তোপের মুখে বিজিসি ট্রাস্ট ইউনিভার্সিটি

করোনা পরিস্থিতিতে পুরো চট্টগ্রাম যখন লকডাউনে, তখন টিউশন ফি জমা দিতে নোটিশ দিয়ে শিক্ষার্থীদের ক্ষোভের মুখে পড়েছে চট্টগ্রামের একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়। ‘বিজিসি ট্রাস্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ’ নামের ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ নিয়ে ক্ষোভ ঝাড়ার পরদিন আবার সেই নোটিশ প্রত্যাহার করে ফি চাওয়ার কথাই অস্বীকার করা হল।

বিজিসি ট্রাস্ট ইউনিভার্সিটির কর্তৃপক্ষ সোমবার (৬ এপ্রিল) একটি বিজ্ঞপ্তি দেয়। তাতে বলা হয়, সব সেশনের শিক্ষার্থীদের সেমিস্টার ফি ব্যাংকের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টে পাঠানোর নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। একটি ইমেইলে ব্যাংকের ডিপোজিট স্লিপ পাঠিয়ে নিশ্চিতও করতে বলা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে। দেশের এমন দুর্যোগময় পরিস্থিতিতে এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনার ঝড় উঠলে পর দিন মঙ্গলবার বিজ্ঞপ্তিটি প্রত্যাহার করে নেয়। ৭ এপ্রিল জারি করা নতুন বিজ্ঞপ্তিতে ৬ এপ্রিল ইস্যু করা নোটিশটি সবার জন্য প্রযোজ্য নয়। এটি কেবল অনলাইন পেমেন্ট করতে ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের জন্য প্রযোজ্য।

এদিকে দুই নোটিশ নিয়েই বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা যায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে। এ নিয়ে শিক্ষার্থীরা ফেসবুকে নিজেদের অভিমত ব্যক্ত করে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়টির ব্যবসা প্রশাসনের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমাদের ফিক্সড ডিপোজিট নেই। অনেক ফ্যামিলিরই নেই। এ পরিস্থিতিতে নুন আনতে পান্তা ফুরোচ্ছে। আমোদের আবার অনলাইন ব্যংকিং! এ নোটিশটির মাধ্যমে কি নতুন করে বাসা থেকে বের হওয়ার জন্য সাইলেন্টলি ইনফ্লুয়েন্স করা হচ্ছে না? বেতন মওকুফের সুবিধা না দিলেও অন্তত এ লকডাউনের মুহূর্তে শিক্ষার্থীদের ফি জমা দেওয়ার চাপ দেওয়াটা খুব অমানবিক মনে হলো।’

রুবায়েত নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘অথচ নোটিশটা এমনও হতে পারতো— দেশের ক্রান্তিলগ্নে দেশের সকল কর্মক্ষেত্র বন্ধ থাকায় সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর মেয়াদে কিংবা কয়েক কিস্তিতে ‘বকেয়া টিউশন ফি’ পরিশোধ করার সুযোগ দেওয়া হবে কোন পেনাল্টি চার্জ ছাড়া।’

আইন অনুষদে অধ্যয়নরত এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইনে পরীক্ষা গ্রহণ, মূল্যায়ন ও ভর্তি কার্যক্রম বন্ধে ইউজিসির নির্দেশ দেওয়ার পরও আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় এমন নোটিশ কিভাবে দেয় বুঝি না। লকডউন পরিস্থিতিতে নিজেকে নিরাপদ রাখব না ব্যাংকে গিয়ে সেমিস্টার ফি পরিশোধ করবো।’

প্রসঙ্গত, ৬ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের ফেসবুক পেজ ‌‌‘ইউনিভার্সিটি গ্রান্টস কমিশন অফ বাংলাদেশ’- এ বলা হয়, ‘সেমিস্টার ফাইনাল ছাড়া গ্রেড প্রদান, মূল্যায়ন এবং কোন ধরনের পরীক্ষা ছাড়াই স্নাতক প্রথম বর্ষে শিক্ষার্থী ভর্তির সিদ্ধান্ত নিয়েছে কিছু প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় যা নৈতিকতার বিচারে ঠিক নয়। ইউজিসির সাম্প্রতিক অফিস আদেশে এ ধরনের কার্যকলাপের কথা কোথাও উল্লেখ করা হয়নি। গুটিকয়েক বিশ্ববিদ্যালয়ের এ ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা অত্যন্ত দুঃখজনক। এ সকল বিশ্ববিদ্যালয়সমূহকে অনতিবিলম্বে এ ধরনের কার্যক্রম বন্ধ রাখার আহ্বান জানানো হচ্ছে।’

এছাড়াও করোনা পরিস্থিতিতে সরকারের সব ধরনের নির্দেশনা মানতে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে আহ্বান জানিয়েছে ইউজিসি।

এসএস/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!