লকডাউনে চট্টগ্রামের শতাধিক ডাক্তার বদলি আদেশ নিয়ে নজিরবিহীন অনিশ্চয়তায়

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের দন্তরোগ বিভাগের ডেন্টাল মাইক্রোবায়োলোজিস্ট সারাহ ফাতেমা সুমাইয়াকে বদলি করা হয়েছে ফেনী জেলা সদর হাসপাতালে। আকস্মিক এই আদেশ তাকে ফেলে দিয়েছে চরম দুশ্চিন্তায়। এই চিকিৎসক বললেন, ‘ওখানে গিয়ে আমি কোথায় থাকব, কিভাবে যাব কিছুই ঠিক করতে পারিনি।’

ফাতেমা সুমাইয়ার মতো এমন অনিশ্চয়তায় পড়ে গেছেন চট্টগ্রামের আরও শতাধিক চিকিৎসক— যাদের প্রায় সকলেই বিশেষজ্ঞ পর্যায়ের।

এর আগে গত সোমবার (৬ জুলাই) বদলির একগাদা আদেশেই চট্টগ্রামের চিকিৎসকদের মধ্যে তৈরি হয় নজিরবিহীন এক অস্থিরতা। এর মধ্যেই তিন ক্যাটাগরির ডাক্তারের ‘বদলি স্থগিত’ করা নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নতুন আদেশ জারি করার পর তৈরি হয়েছে আরেক ধরনের অস্থিরতা। এই সবকিছু মিলে চট্টগ্রামের চিকিৎসা অঙ্গনে হঠাৎ করেই একটা নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানাচ্ছেন।

করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার জন্য কয়েকটি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এক হাজার ২৫৩ জন চিকিৎসককে পদায়ন করা হয়েছিল। এর মধ্যে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেরই রয়েছেন ১৫৬ জন চিকিৎসক।

পরে মঙ্গলবার (৬ জুলাই) স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা নতুন প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়, তথ্যগত ভুল নিয়ে নির্দিষ্ট শর্তে স্থগিত করা হয়েছে কিছু কিছু বদলির আদেশ। সংযুক্তি আদেশ বাস্তবায়নে জটিলতা থাকলে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকদের আদেশ বাস্তবায়ন স্থগিত রেখে আগামী ৮ জুলাইয়ের মধ্যে সুস্পষ্ট কারণ উল্লেখ করে তাদের তালিকা বিভাগের অধিশাখায় পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

কিন্তু এ আদেশে আশ্বস্ত হতে পারছেন না চিকিৎসকরা। কারণ এখন চলছে করোনাকালীন কঠোর লকডাউন। তাই চট্টগ্রামের বাইরে ফেনী জেলা সদর হাসপাতাল, ফেনীর দাগনভূঁঞা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ফটিকছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, খাগড়াছড়ি জেনারেল হাসপাতালে যাদের বদলি করা হয়েছে তারা পড়েছেন দুশ্চিন্তায়। নতুন জায়গায় কিভাবে যাবেন, কোথায় থাকবেন— তাও ভাবাচ্ছে তাদের।

চিকিৎসকরা বলছেন, আদেশ বাস্তবায়ন স্থগিত করে কিছু নাম বাদ পড়লেও যাদের নাম থাকবে তারা তো সেই আগের বিপত্তিই মোকাবেলা করবেন।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক সৈয়দ মো. মহসীন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমি জেনারেল সার্জারির একজন সহকারী অধ্যাপক। অন্যদিকে কোভিড হচ্ছে মেডিসিন সম্পৃক্ত একটি বিশেষায়িত রোগ। আমি সার্জারির চিকিৎসক হয়ে কোভিডের কী চিকিৎসা করব? এছাড়া কলেজ ও হাসপাতালে আমার প্রচন্ড কাজের চাপ। আমাকে ছাত্র পড়াতে হয়। ওয়ার্ডে গিয়ে রোগী দেখতে হয়। অপারেশন করতে হয়। গবেষণা কার্যক্রম দেখতে হয়। এসব কাজের মধ্যে থেকে আমাকে যে ফেনী জেলা হাসপাতালে বদলি করা হলো, ওখানে গিয়ে আমি কী করব?’

ডা. সৈয়দ মহসীন আরও বলেন, ‘এ পর্যন্ত তো আমি শুনিনি কোভিড চিকিৎসায় ডাক্তারের সংকট পড়েছে। অক্সিজেনের অভাব, আইসিইউ, ওষুধ, টিকা সংকটের কথাই তো শুনে আসছি। দেশে এমন কী হল যে, সরকারি হাসপাতাল থেকে সিনিয়র চিকিৎসককে মফস্বলে পাঠিয়ে দিতে হবে? নন-কোভিড রোগীদের কী অবস্থা হবে— সেটা তো ভেবে দেখা হয়নি।

অনিশ্চয়তার কথা জানিয়ে এই চিকিৎসক বলেন, ‘আমি ফেনীতে গিয়ে কোথায় থাকব জানি না। আদৌ জানি না এ লকডাউনে থাকার ব্যবস্থা করতে পারব কিনা।’

স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. আ ম ম মিনহাজুর রহমান বলেন, ‘নতুন প্রজ্ঞাপনেও সুস্পষ্টতা নেই। ভবিষ্যৎ একটা অনিশ্চিত সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে থাকা। যাদের বদলি বাতিল হবে, তাদের কথা আলাদা। যাদের বাতিল হবে না তাদের নতুন জায়গায় গিয়ে থাকা, খাওয়ার কী ব্যবস্থা হবে তার কোনো সুস্পষ্টতা নেই।’

তিনি বলেন, ‘মাতৃত্বকালীন ছুটিতে থাকা একজন নারীকে খাগড়াছড়ি জেনারেল হাসপাতালে বদলি করা হয়েছে। আরও নারী ডাক্তার রয়েছেন— যারা খাগড়াছড়ি, ফটিকছড়ি ও ফেনীতে বদলি হয়েছেন। এরকম পাহাড়ি এলাকায় লকডাউনের ভেতর যাওয়াটাও দুরূহ। আর গিয়েও পরিবার ছেড়ে এ সময় থাকাও তো কষ্টসাধ্য।’

আইএমই/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!