নির্বিচারে পাহাড় কাটার কারণে বর্ষা মৌসুমে ভারি বর্ষণে পাহাড় ধসে প্রাণহানির ঘটনা ঘটছেই। তবু থেমে নেই পাহাড় নিধন। করোনাকালেও রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় দিনদুপুরে প্রকাশ্যে তিন ভাইয়ের নেতৃত্বে পাহাড় কাটার ঘটনা ঘটছে প্রশাসনের নাকের ডগায়। স্থানীয় চেয়ারম্যান অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করলেও উপজেলা প্রশাসনের এ বিষয়ে কিছুই নাকি জানা নেই।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রাঙ্গুনিয়া উপজেলার সরফভাটা ইউনিয়নের রূপনগর সংলগ্ন উড়ইল্যে পাড়া এলাকায় গত কয়েকদিন ধরে টানা পাহাড় কাটা চলছে। পাহাড়টির কিছু অংশ ব্যক্তি-মালিকানাধীন, আর কিছু অংশ সরকারি বনবিভাগের।
অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় রহমত আলী, মোহাম্মদ আলী, আশরাফ আলী নামের তিন ভাই একজোট হয়ে প্রথম দিকে প্রকাশ্যে পাহাড় কাটছিলেন। পরে বিষয়টি স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের নজরে এলে তিনি বাধা দেওয়ায় কয়েকদিন ধরে দিনের পরিবর্তে রাতে পাহাড় কাটছেন ওই তিন ভাই। পাহাড়ের এসব মাটি ট্রাক ভর্তি করে বিক্রি করা হচ্ছে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায়। মাটি বিক্রি করার পাশাপাশি নির্বিচারে বনভূমি উজাড় করার অভিযোগও উঠছে তাদের বিরুদ্ধে। এতে করে হুমকির মুখে পড়ছে প্রাকৃতিক পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য।
এছাড়া নির্বিচার পাহাড় নিধনের ফলে যে কোনও সময় পাহাড় ধসে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। কিন্তু নির্বিচারে পাহাড় কাটার ঘটনা ঘটলেও প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন স্থানীয় লোক জানান, অনেকদিন ধরে পাহাড় কাটছে তিন ভাই। প্রকাশ্যে পাহাড় কেটে ট্রাকে মাটি পাচার করছে। অথচ কেউ কিছু বললে তেড়ে আসে মারতে। ফলে ভয়ে কেউ কিছু বলছেও না। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান নিষেধ করে গেছেন। কিন্তু তাতেও কাজ হচ্ছে না।
এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়্যারমান শেখ ফরিদ উদ্দীন জানান, পাহাড় কাটার বিষয়টি অভিযুক্ত তিন ভাই স্বীকার করেছে। কিন্তু নিষেধ করা সত্ত্বেও তারা পাহাড় কাটা বন্ধ করেনি। জানতে পেরেছি দিনের পরিবর্তে এখন রাতে পাহাড় কাটা শুরু করেছে তারা।
পাহাড় কাটার নেতৃত্ব দেওয়া রহমত আলীর সাথে যোগাযোগ করা হলে পাহাড় কাটার অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, আমি এই ব্যাপারে কিছু জানি না।
ইউপি চেয়ারম্যানের নিষেধের প্রসঙ্গ টেনে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি পাহাড় কাটিনি। আমার বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করা হচ্ছে।
রাঙ্গুনিয়ার উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মাসুদুর রহমান পাহাড় কাটার বিষয়ে কোনও তথ্য পাননি বলে জানান। তবে কেউ এ বিষয়ে অভিযোগ করলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আশ্বাস দেন।
রাঙ্গুনিয়া উপজেলার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সাইফুল ইসলাম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, যারা পাহাড় কেটে বনভূমি ধ্বংস করছে তাদের সাথে কোনও আপোষ নেই। কারও বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ পেলে আমরা ব্যবস্থা নেবো। যে অভিযোগটি আমরা জেনেছি তা খতিয়ে দেখবো। প্রয়োজনে যৌথ অভিযান পরিচালনার বিষয়েও ভাববো আমরা।
এসএ/এসএস