তিন দিন ধরে ‘নিখোঁজ’ পাহাড়তলীর বেলাল, র‌্যাব-ডিবি কেউই দায় নিচ্ছে না

৮ বছরের মেয়ের আকুতি— ‘আব্বুকে ফিরিয়ে দিন’

দুই শিশুর মুখ চেয়ে হলেও চট্টগ্রামের ফিরোজ শাহ কলোনি থেকে ‘র‌্যাব’ পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া বেলাল উদ্দীন জুয়েলকে ফিরিয়ে দেওয়ার আকুতি জানালো তার পরিবার। কান্নারুদ্ধ কণ্ঠে তার স্ত্রী বললেন, ‘আমার দুটি বাচ্চা আছে, তাদের মুখের দিকে দেখে হলেও তাদের বাবাকে ফিরিয়ে দিন।’ তুলে নেওয়ার ৭২ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও খোঁজ মেলেনি এই ব্যবসায়ীর।

শুক্রবার (২৯ জানুয়ারি) চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বেলালের স্ত্রী কানিজ ফাতেমা, তাদের ৮ বছরের সন্তান জওরা ও দেড় বছরের শিশুকন্যা জাহিন। এ সময় বেলালের মেয়ে জওরা বলে, ‘আমার আব্বুকে ফিরিয়ে দিন।’

নিখোঁজ বেলালের পরিবার জানায়, মঙ্গলবার (২৬ জানুয়ারি) দিবাগত রাত সাড়ে ৪টার দিকে র‌্যাব পরিচয় দিয়ে ১০ থেকে ১২ জন লোক নগরীর ফিরোজ শাহ কলোনিতে খালার বাড়ি থেকে বেলালকে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে চলে যায়। সাথে সাধারণ পোশাকে পুলিশ সদস্যও ছিল। র‌্যাবের সদস্যরা বেলালের পরিবারকে র‌্যাব কার্যালয়ে যোগাযোগের জন্য বলে যান।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন পাহাড়তলী থেকে সদ্য নির্বাচিত কাউন্সিলর জহুরুল আলম জসিমও।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন পাহাড়তলী থেকে সদ্য নির্বাচিত কাউন্সিলর জহুরুল আলম জসিমও।

শুক্রবার চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সংবাদ সম্মেলনে সামনের সারিতে পাহাড়তলী থেকে সদ্য নির্বাচিত কাউন্সিলর জহুরুল আলম জসিমকে উপস্থিত থাকতে দেখা যায়। নিখোঁজ বেলাল এই কাউন্সিলরের অনুসারী।

সংবাদ সম্মেলনে বেলালের স্ত্রী কানিজ ফাতেমা বলেন, ‘চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের দিন ভোর রাত ৪টায় আমার স্বামীকে র‌্যাব পরিচয় দিয়ে চারটি মাইক্রোবাস এসে নিয়ে যায়। সেসময় কয়েকজন পোশাক পরিহিত পুলিশ সদস্যও ছিল। নিয়ে যাওয়ার পর প্রশাসনের কোনো সংস্থা তাকে তুলে নিয়ে যাওয়ার কথা স্বীকার করছে না।’

তিনি বলেন, ‘আমার দুটি বাচ্চা আছে, তাদের মুখের দিকে দেখে হলেও তাদের বাবাকে ফিরিয়ে দিন।’

নগরীর বিশ্বকলোনি এলাকার বাসিন্দা বেলাল যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম লীগের সভাপতি ও মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সদস্য। তার বাবা মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল বাতেন। বেলাল একজন প্রতিষ্ঠিত আবাসন ব্যবসায়ী।

জানা গেছে, বেলালকে তুলে নেওয়ার পরদিন বুধবার (২৭ জানুয়ারি) চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন হওয়ায় র‌্যাব কার্যালয়ে যেতে পারেননি বেলালের পরিবার। বৃহস্পতিবার (২৮ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে দশটায় তারা র‌্যাব কার্যালয়ে গেলে তাদের বলা হয় গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে যেতে। সেখানে যোগাযোগ করলে গোয়েন্দা পুলিশ থেকে থানায় যোগাযোগ করতে বলা হয়।

বেলালের স্ত্রী বলেন, ‘আমরা র‌্যাব অফিস, ডিবি অফিস, থানায় ঘুরতে ঘুরতে ক্লান্ত ও অসহায় হয়ে গেছি। আর কোনো পথ দেখতে না পেয়ে আপনাদের (সাংবাদিক) শরণাপন্ন হয়েছি।’

জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সারা দিন বেলালের বড় ভাই ও স্ত্রী চার থেকে ৫ বার থানায় গিয়েছেন নিখোঁজ ডায়েরি করতে। কিন্তু আকবরশাহ থানা পুলিশ কোনো সাধারণ ডায়েরিও নিতে চায়নি।

আকবরশাহ থানার ওসি মো. জহির শুক্রবার সাড়ে দশটায় থানায় যেতে বলেন বেলালের পরিবারকে। কিন্তু শুক্রবার ওসির কথামত থানায় গিয়েও পুলিশের অসহযোগিতায় কোন নিখোঁজ ডায়েরি বা মামলা করাতে পারেনি বেলালে পরিবার।

বিএস/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!