র‌্যাবের হাতে প্রমাণ, পুলিশের সাজানো ৩ সাক্ষী সিনহা হত্যায় জড়িত

টেকনাফে মেজর (অব.) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যার ঘটনায় পুলিশের দায়ের করা মামলায় যে তিন ব্যক্তিকে সাক্ষী সাজানো হয়েছিল, তিনজনই সাবেক ওই সেনা কর্মকর্তা হত্যার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) প্রাথমিক তদন্তে ওই তিন কথিত সাক্ষীর জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়েছে।

অভিযুক্ত এই তিনজন হলেন মো. নুরুল আমিন, আয়াছ উদ্দিন ও নিজাম। তিনজনই বাহারছড়ার স্থানীয় বাসিন্দা। মঙ্গলবার (১১ আগস্ট) র‌্যাব তাদের গ্রেপ্তার করে।

র‌্যাব কর্মকর্তারা বলছেন, কথিত এই তিন সাক্ষীর সঙ্গে ঘটনার আগেই বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ পরিদর্শক লিয়াকত আলীর যোগাযোগ হয়েছে। এমনকি সিনহা হত্যার বিষয়েও আগে থেকেই তারা জানতেন। বুধবার (১২ আগস্ট) অভিযুক্ত চার পুলিশ সদস্যসহ পুলিশের দায়ের করা মামলার সাজানো এই তিন সাক্ষীর প্রত্যেককে সাতদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।

সিনহা হত্যামামলার তদন্ত সংস্থা র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ বলেছেন, ‘গ্রেফতার হওয়া তিন সাক্ষীর মধ্যে একজন কমিউনিটি পুলিশের সদস্য। তিনি ঘটনার আগেই ফাঁড়ির ইনচার্জের সঙ্গে কথা বলেছেন। তারা হত্যার বিষয়ে আগে থেকেই জানতেন এবং হত্যাকাণ্ডে সহযোগিতা করেছেন বলে প্রাথমিক তদন্তে তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে। এজন্য তাদের অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডে আনা হয়েছে। রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে পুরো বিষয়টি পরিষ্কার হবে।’

তিনি বলেন, ‘আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী এই মামলাটি র‌্যাব তদন্ত করছে। তদন্ত কর্মকর্তা মনে করেছেন এই মামলার তিন সাক্ষী মেজর (অব.) সিনহা হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিল। আসামিদের সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততা পাওয়ায় তদন্তকারী কর্মকর্তা তাদের গ্রেফতার করেছে।’

এদিকে মেজর (অব.) সিনহা হত্যার ঘটনায় পুলিশের দায়ের করা মামলার কথিত এই তিন সাক্ষী র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর তাদের ‘অপহরণের’ অভিযোগে পাল্টা মামলা হয় টেকনাফ থানায়। পুলিশই তাদের স্বজনদের এই মামলা করার পরামর্শ দেয়। মঙ্গলবার (১১ আগস্ট) তিন সাক্ষীর অন্যতম নুরুল আমিনের মা খালেদা বেগম বাদি হয়ে টেকনাফ থানায় অপহরণ মামলাটি দায়ের করেন।

এ প্রসঙ্গে টেকনাফ মডেল থানার নতুন ওসি আবুল ফয়সাল জানান, পুলিশের মামলায় যে তিনজনকে সাক্ষী করা হয়েছে মঙ্গলবার সকাল ৯টার দিকে তদন্ত কমিটির কাছে জবানবন্দি দেওয়ার কথা ছিল তাদের। ওই সংক্রান্ত চিঠি নিয়ে পুলিশের একটি টিম সোমবার (১০ আগস্ট) তিন সাক্ষীর গ্রামে যায়। সেখানে গিয়ে দেখা যায় সাক্ষী আয়াজ ও নুরুল আমিনের বাড়ি তালাবদ্ধ। নিজাম উদ্দিনের খোঁজ নেই।

নতুন ওসি জানান, তখন তিনি একটি টিম নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের বাড়িতে না পাওয়ার ব্যাপারটি যাচাই করেন। সেখানে স্বজনরা পুলিশকে জানান, সাদা পোশাকে কে বা কারা তাদের নিয়ে গেছে। এটা জানার পর পুলিশ স্বজনদের জানায়, চাইলে এ ঘটনায় তারা মামলা করতে পারেন। এরপর মঙ্গলবার সকালে নুরুল আমিনের মা খালেদা বেগম বাদী হয়ে অপহরণ মামলা করেন। তবে মঙ্গলবার দুপুরে তারা ‘জানতে পারেন’ ওই তিন জনকে র‌্যাব গ্রেফতার করেছে।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!