রোয়ানুর তান্ডব! চট্টগ্রামে ১২ জনের প্রানহাণি ও কয়েকশ কোটি টাকার ক্ষতি, লন্ডভন্ড ঘরবাড়ী ও রাস্তাঘাট, ভেসে গেছে গবাদি পশু ও ফসলি জমি
রাজীব সেন প্রিন্স :::
ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর আঘাতে শুধুমাত্র চট্টগ্রামেই ঝড়ে গেছে ১২ টি তাজা প্রাণ। ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে কয়েকশ টাকার। লন্ডভন্ড করে দিয়েছে চট্টগ্রামে আড়াই লাখ ঘরবাড়ী। জলস্রোতে ভাসিয়ে নিয়েছে ফসলি জমি ও কয়েক লক্ষ গবাদি পশু।
ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে বেড়িবাঁধ ভেঙে তলিয়ে যাওয়া সন্দ্বীপ, বাঁশখালী, আনোয়ারা ও সীতাকুণ্ডে এখনো পানিবন্দি রয়েছে প্রায় আড়াই লাখ মানুষ। পানিতে তলিয়েছে পটিয়া এবং রাউজানের ছয়টি ইউনিয়নও। এসব এলাকায় ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ৫০ কোটি টাকার ফসল এবং ১শ কোটি টাকার গবাদি পশু ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ।
ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী শনিবার রাতে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন।
মেজবাহ উদ্দিন বলেন, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট বছরের প্রথম এই ঘূর্ণিঝড়ে পানিতে ভেসে, গাছচাপায় এবং ইট পড়ে নগরীসহ জেলায় মারা গেছে নারী-শিশুসহ ১২ জন। এর মধ্যে বাঁশখালী উপজেলাতেই মারা গেছে নারীসহ সাতজন। হালিশহরে চিংড়ী ঘের দেখতে গিয়ে দুই ভাই নিহত হয়েছে। নিখোঁজ আছে ৪ জন উল্লেখ করেন তিনি।
তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের কারণে বাঁশখালী ও সন্দ্বীপে বেড়িবাঁধ ভেঙে কয়েকটি ইউনিয়নে পানি ঢুকে ক্ষতি হয়েছে সবচেয়ে বেশি। ঘূর্ণিঝড়ে এ চার উপজেলায় প্রায় ১০০ কোটি টাকার মৎস্য ও পশুসম্পদের এবং ৫০ কোটি টাকার ফসলের ক্ষতি হয়েছে। তিনি আরো বলেন, চট্টগ্রামে ৫০ কোটি টাকার ফসল ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে, গবাদি পশু ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ১শ কোটি টাকার, অনেক রাস্তাঘাটও ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।
চট্টগ্রামের ৪৭৯টি আশ্রয় কেন্দ্রে প্রায় দুই লাখ লোক আশ্রয় নিয়েছে, আগামী দুইদিন ভারী বর্ষণ অব্যাহত থাকবে, সেজন্য আশ্রয় নেয়া মানুষজনকে এই দুইদিন আশ্রয় কেন্দ্রে থাকতে হবে, উল্লেখ করেন জেলা প্রশাসক।
তবে বাঁশখালীর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শামশুজ্জামান জানিয়েছেন বেড়িবাঁধ ভেঙে গ্রামে প্রবেশ করা জোয়ারের পানি এখনো নেমে যায়নি। পানি বন্দি হয়ে মানবেতর দিন কাটাচ্ছে ২৫ গ্রামের প্রায় দেড় লাখ মানুষ। প্রশাসনের পক্ষ থেকে আশ্রয় কেন্দ্রে আসা মানুষদের খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ৫ হাজার পরিবারকে চিড়া, গুঁড়, দেয়াশলাই ও মোমবাতি দেয়া হয়েছে।
বাঁশখালির স্থানীয় সূত্রে জানা যায় , জোয়ারে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে বাড়ি-ঘরের দেয়াল ধসে ও পানিতে ডুবে শুধু বাঁশখালীতেই নয়জন শিশু, নারী-পুরুষের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে খানখানাবাদে মারা গেছেন, আবু ছিদ্দিক (৫০), রুবি আক্তার (৫০), জালাল উদ্দিন (৩) জান্নাতুল মাওয়া (৪), শাহেদা আক্তার (৩)। গণ্ডামারা ইউনিয়নে চরের পানিতে মাছ ধরতে গিয়ে মারা গেছেন নুরুল কাদের (৫৫) ও আবুল হোসেন (৪০) নামে দুই ভাই।
ছনুয়া ইউনিয়নে দেওয়াল চাপা পড়ে মারা গেছেন মো. হারুনের স্ত্রী তাহেরা বেগম (৩৫)। এছাড়া দেড় মাস বয়সী এক অজ্ঞাত শিশুর মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
রিপোর্ট : রাজীব সেন প্রিন্স
এ এস / জি এম এম / আর এস পি :::