রোহিঙ্গা নুর আলমের স্মার্টকার্ড রহস্যের কিনারা মিললো দুদকে

মোটা অংকের টাকা দিয়েই স্মার্ট কার্ড পেয়েছিলেন নিহত রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী নুর আলম। নির্বাচন অফিসের একটি সিন্ডিকেটের এ কাজটি সম্পন্ন হয়েছিলো। যে ল্যাপটপটি ব্যবহার করে কার্ড তৈরি হয়েছিলো তার সন্ধানও মিলেছে। এ বিষয়ে তথ্য-প্রমাণ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ ঘটনায় জড়িতদের খুঁজছে দুদক।

রোহিঙ্গারা ৭০ হাজার টাকায় পাসপোর্ট পেয়ে যাচ্ছে এমন তথ্যের ভিত্তিতে বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) সকাল ১১টা সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত টানা ৭ ঘণ্টা অভিযান চালায় দুদক।

এ সময় চট্টগ্রাম জেলা নির্বাচন অফিস, চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস ও ৭ নম্বর ও ওয়ার্ড কাউন্সিলর অফিস ও পাঁচলাইশ থানার হিলভিউ রোডে বার্মা কলোনিতে পরিদর্শন করে দুদকের ৩ সদসস্যের একটি টিম।

দুর্নীতি দমন কমিশন জেলা সমন্বিত কার্যালয় চট্টগ্রাম-২ এর সহকারী পরিচালক রতন কুমার দাশের নেতৃত্বে এ সময় উপস্থিত ছিলেন উপ-সহকারী পরিচালক মো. শরিফ উদ্দিন ও উপ-সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ জাফর সাদেক শিবলী।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করার সময় জেলা নির্বাচন কমিশন অফিসে সশরীরে গিয়েই ছবি তোলা, চোখ ও আঙ্গুলের ছাপ দিয়েছিলেন নিহত নুর আলম। ওই সময় তিনি যে জন্মনিবন্ধন জমা দিয়েছিলেন তাতে নিজের স্থায়ী ঠিকানা হিসেবে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার নাম ব্যবহার করেছিলেন।

বর্তমান ঠিকানা ব্যবহার করেছিলেন পাঁচলাইশ ৩ নম্বর ওয়ার্ডের। সেই সময় ব্যবহার করা জন্ম নিবন্ধনের ১৭ ডিজিটের যে কোড নম্বর আছে তার ওয়ার্ড কোডও ৩ নম্বর পাঁচলাইশ ওয়ার্ডের দেখানো হয়েছিল। পরবর্তীতে নুর আলম নামেই স্মার্টকার্ড পান রোহিঙ্গা নুর মোহাম্মদ।

দুদকের সূত্রে জানায়, নিহত রোহিঙ্গা ডাকাত নুর আলমের স্মার্টকার্ড সংক্রান্ত তথ্যাবলী সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে চট্টগ্রাম জেলা নির্বাচন অফিস ও উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা নির্বাচনের ফরম সংক্রান্ত তথ্য সংরক্ষণ নেই। এছাড়া চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ৭ নম্বর পশ্চিম ষোলশহর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোবারক আলীর কাছে এ সংক্রান্ত তথ্য চাওয়া হলে তিনি কোন তথ্য দিতে পারেননি। বার্মা কলোনিতে এ নামে কোন ভোটার হয়নি বলে কাউন্সিলর অফিস থেকে জানানো হয়।

দুদকের সহকারী পরিচালক রতন কুমার দাশ বলেন, সকাল ১০টার থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত একটি অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে নিহত ডাকাত রোহিঙ্গা নুর আলমের স্মার্টকার্ড পাওয়া নিয়ে চট্টগ্রাম জেলা নির্বাচন অফিস, চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস ও ৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর অফিস ও পাঁচলাইশ থানার হিলভিউ রোডে বার্মা কলোনিতে পরিদর্শন করা হয়েছে। এতে ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রাথমিকভাবে অবৈধ লেনদেনের মাধ্যমে একটি সিন্ডিকেট নুর আলমকে জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়ার সত্যতা পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় কারা জড়িতদের আছে সবাইকে খুঁজে বের করা হবে বলে জানান।

প্রসঙ্গত, গত ২২ আগস্ট রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের দিনই রোহিঙ্গা নূর মোহাম্মদ তার কন্যার কান ফোঁড়ানোর অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলেন। এ অনুষ্ঠানে অথিতিদের কাছ উপহার ছিলো ১ কেজি স্বর্ণালংকার ও নগদ ৪৫ লাখ টাকাসহ আরও নানা উপহার। এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের নজরে আসেন ডাকাত নুর আলম। এরপর ১ সেপ্টেম্বর রাতে পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছেন নূর মোহাম্মদ ওরফে নুর আলম।

নুর আলম নিহত হওয়ার পর তার কাছে পাওয়া স্মার্টকার্ড নিয়ে তোলপাড় শুরু হয় সংবাদমাধ্যমসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

এএম/এসএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!