রোহিঙ্গাদের সনদ দেওয়ার দায় কাউন্সিলর জোবাইরের ঘাড়েও

রোহিঙ্গা জেনেও অর্থের লোভে দেওয়া হয় জন্ম ও জাতীয়তা সনদ। সেখানে এক রোহিঙ্গার এনআইডি ব্যবহার করে আরেক রোহিঙ্গাকে দেওয়া হয় জাতীয়তা সনদ। স্থানীয় রেফারেন্স ও কর্পোরেশনের নিযুক্ত দুই কর্মকতার কথামতো সনদে স্বাক্ষর করেন চট্টগ্রাম নগরের ২৯ নম্বর ২৯ নম্বর পশ্চিম মাদারবাড়ি ওয়ার্ড কাউন্সিলর গোলাম মোহাম্মদ জোবাইর— এমনটাই জানিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

দুদক বলছে, জেলা নির্বাচন কমিশনের কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ওয়ার্ড কাউন্সিলরসহ সেখানকার দুই কর্মকর্তার মাধ্যমে সনদ নিয়ে রোহিঙ্গারা বানিয়েছে এনআইডি। শুধু তাই নয়, দালালদের সহযোগিতায় এসব রোহিঙ্গা বানিয়েছে পাসপোর্টও। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে শীঘ্রই ব্যবস্থা নিচ্ছে দুদক।

চার রোহিঙ্গা হলেন চট্টগ্রামের সদরঘাট থানার কদমতলী এলাকার বায়তুল জান্নাত মসজিদ লেইনের মজিদ ম্যানসনের হাজী নজির আহমেদের মেয়ে ইয়াছমিন, একই থানার পশ্চিম মাদারবাড়ির ঠং ফকির মাজার লেইনের সাব্বির আহমেদের মেয়ে সাইকা বেগম, একই এলাকার সাব্বির আহমেদের আরেক মেয়ে সাদিয়া আক্তার, একই থানার পশ্চিত মাদার বাড়ির মিছি পুকুর পাড়া এলাকার ইউনুস সর্দার বাড়ির মো. ইউসুফের পুত্র ইয়াছিন খালেদ। এরা সবাই ওই এলাকার রোহিঙ্গা ভোটার।

এ বিষয়ে ২৯ নম্বর পশ্চিম মাদারবাড়ি ওয়ার্ডের জন্ম নিবন্ধন সহকারী সুপ্রিয়া দে সুমী বলেন, জন্ম সনদ দেওয়ার সময় প্রথমে তাদের কাছ থেকে একটি ফরম পূরণ করা হয়। সেটি স্থানীয় লোকজনের মাধ্যমে যাচাই-বাছাইও করা হয়। পরে কাউন্সিলরের অনুমতিসাপেক্ষে তাদের দেওয়া হয়েছে সনদ। আমার কোন ভুল হয়নি। যারা পেয়েছে হয়তো আগে পেয়েছে, এখন কাউকে এভাবে আর দেওয়া হচ্ছে না।

একই সুরে কথা বললেন ওয়ার্ডের সচিব সরোজ বাবুও। তিনি বলেন, স্থানীয়দের রেফারেন্সে মূলত কাউন্সিলর সাহেবের অনুমতিসাপেক্ষে জাতীয় নাগরিক সনদ দেওয়া হচ্ছে। ভুলবশত ইতোপূর্বে রোহিঙ্গারা এনআইডি করার সুযোগ পেয়ে থাকলেও এখন আর সেই সুযোগ নেই।

জানতে চাইলে ওয়ার্ডের কাউন্সিলর গোলাম মোহাম্মদ জোবাইর চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, প্রতিদিন ওয়ার্ড অফিস থেকে ৩০০-৪০০টি জন্ম ও জাতীয়তা সনদ দেওয়া হচ্ছে। কে কখন কিভাবে সনদ নিয়ে যাচ্ছে, তা বোঝার উপায় থাকে না। যাচাই-বাছাই করে দিতে গেলে অনেক সময় স্থানীয়দের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝি হয়। সবাই তাৎক্ষণিক সনদ পেতে চায়।

এক রোহিঙ্গার এনআইডি রেফারেন্সে আরেক রোহিঙ্গার সনদ পাওয়ার বিষয়ে কাউন্সিলর বলেন, স্থানীয়দের মাধ্যমে যাচাই-বাছাই করে মূলত এই সনদগুলো দেওয়া হচ্ছে। এখন দেখতে হবে কারা এই রেফারেন্সকারী, সেটা দেখতে হচ্ছে।

দুদক জেলা সমন্বিত কার্যালয় চট্টগ্রাম-২ এর এক কর্মকর্তা বলেন, সাম্প্রতিক এনআইডি জালিয়াতির ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করা হয়েছে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজন কাউন্সিলসহ সংশ্লিষ্ট দুই কর্মকর্তাকে চিঠি ইস্যু করে তলব করা হয়েছে। বাকিদের পর্যায়ক্রমে তলব করে হবে।

উল্লেখ্য, ২৯ মার্চ চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ভোট গ্রহণ। চট্টগ্রামের ২৯ নম্বর পশ্চিম মাদারবাড়ি ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী বর্তমান কাউন্সিলর গোলাম মোহাম্মদ জোবাইর। সেখানে ওই ওয়ার্ডে এবার নির্বাচনে লড়ছেন আওয়ামী লীগের একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থীও। অপরদিকে একক প্রার্থী হিসেবে ভোটের মাঠে লড়ছেন বিএনপি মনোনীত সালাহ উদ্দিন।

এসএ/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!