রোহিঙ্গাদের দখলে সাড়ে ৬ হাজার একর জায়গা

দুই বছরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গা ১১ লাখ ১৮ হাজার

মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতনের মুখে পালিয়ে এসে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা নাগরিকদের দখলে চলে গেছে কক্সবাজারের প্রায় সাড়ে ছয় হাজার একর জায়গা। ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে ২০১৯ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত প্রায় দুই বছরে কক্সবাজারের আশ্রিত নিবন্ধিত মিয়ানমারের নাগরিকের সংখ্যা ১১ লাখ ১৮ হাজার ৫৭৬ জন। কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কার্যালয় কর্তৃক গত ১ জুলাই চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে পাঠানো প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

জানা যায়, কক্সবাজারের কুতুপালং-বালুখালীসহ অন্যান্য এলাকা মিলে বর্তমানে প্রায় সাড়ে ছয় হাজার একর জায়গায় মিয়ানমারের নাগরিক রোহিঙ্গাদের অস্থায়ীভাবে আশ্রয় দেওয়ার জন্য শেল্টার নির্মাণ, স্যানিটেশন, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ, স্বাস্থ্য সেবা, ত্রাণ কার্যক্রমসহ মানবিক সহায়তা, নিরাপত্তা বিধান, দেশি-বিদেশি এনজিওর কার্যক্রম সমন্বিতভাবে চলছে।

আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা প্রদানে জেলা প্রশাসন ও অন্যান্য সরকারি দপ্তরের মাধ্যমে ব্যয় হয়েছে ৯৫ কোটি ৭০ লাখ টাকা। রোহিঙ্গাদের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে সরকারি সহায়তা দেওয়া হয়েছে ২০ কোটি ৪০ লাখ ১০ হাজার টাকা। ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর থেকে এ পর্যন্ত অন্তর্দ্বন্দ্বের ফলে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ২২টি হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হয়েছে। অপরাধের দায়ে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ইতিমধ্যে ৬২৩ জন রোহিঙ্গাকে বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। কক্সাবাজারে ছড়িয়ে পড়া ৫৫ হাজার ১৮০ জন রোহিঙ্গাকে ক্যাম্পে ফেরত পাঠানো হয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে পড়া চার হাজার দুই জন রোহিঙ্গাকে কুতুপালং এলাকায় ফেরত পাঠানো হয়েছে।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, রোহিঙ্গাদের জন্য এ পর্যন্ত তুরস্ক, ইন্দোনেশিয়া, মরক্কো, আজারবাইজান, মালয়েশিয়া, ভারত, সিঙ্গাপুর, ইরান, ইতালি, সৌদি আরব ও কানাডাসহ ১১টি দেশ থেকে ত্রাণসামগ্রী পাওয়া গেছে। এর মধ্যে চাল দুই হাজার ৪১৯ মেট্রিক টন, ডাল ৬৯ মেট্রিক টন, ভোজ্য তেল ৯৯ হাজার ৪০০ লিটার, কেরোসিন তেল ১১ লাখ লিটার, কেরোসিন স্টোভ ২০ হাজার টি, লবণ ৬৪ হাজার মেট্রিক টন, কম্বল পাঁচ হাজার ২০০ পিস, ত্রিপল ১৪৬ পিস এবং তাবু ২৯৫ পিস।

ওই প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, ‘বলপ্রয়োগে বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিকগণের নানা অপকর্ম, বিবাদ ও মাদক কারবারে জড়িয়ে পড়া, পালিয়ে যাওয়া ইত্যাদি প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।’

এ বিষয়ে কক্সবাজারের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক (অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক-রাজস্ব) মোহাম্মদ আশরাফুল আফসার চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের কারণে এখানে অনেক সমস্যা হয়েছে।’

সাড়ে ছয় হাজার একর জায়গা রোহিঙ্গাদের দখলে চলে যাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এটা সরকারি সিদ্ধান্ত। সরকার তাদেরকে থাকতে দিয়েছে। এ ব্যাপারে আমি কোন মন্তব্য করতে পারবো না।’

রোহিঙ্গা বিষয়ে সমন্বয়ের দায়িত্ব পালন করা চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) মো. নুরুল আলম নিজামী চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘জায়গা রোহিঙ্গাদের দখলে গেছে বলা ঠিক হবে না। ওই জায়গায় ক্যাম্প তৈরি করা হয়েছে। ১০-১১ লাখ লোক—তাদের জন্য সহানুভূতি দেখাতে হবে। রোহিঙ্গাদের কারণে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। বন ও গাছপালার ক্ষতি হচ্ছে। তবে এটা মেনে নিতে হবে। সরকার তাদের প্রত্যাবসনের জন্য কাজ করছেন। তাদের প্রত্যাবাসন হলে আমরা রেহাই পাবো।’

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!